শাহাব উদ্দিন সাগর ,নিউইয়র্ক:
নিউইয়র্কে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে গত ৩০ মার্চ মারা গেছেন বাংলাদেশ ও প্রবাসের জনপ্রিয় ফটো সাংবাদিক এবং আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের কার্যকরী সদস্য এ. হাই. স্বপন (স্বপন হাই)। সেই স্বপন হাইয়ের পরিবারকে নিউইয়র্কের সাংবাদিক সমাজ ১৪২০০ ডলার দিয়েছে। স্বপন হাই হার্ট ও কিডনী রোগেও আক্রান্ত ছিলেন। নিয়মিত ডায়ালিসিস করতেন। তাঁর কিডনী প্রতিস্থাপনের লক্ষ্যে নিউইয়র্কের সাংবাদিক সমাজ গত ৬ মার্চ এক সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। উডসাইডের কুইন্স প্যালেসে অনুষ্ঠিত সংগীতানুষ্ঠানে ১০০ ডলার অনুদান মূল্যের টিকিট বিক্রয়ের চেষ্টা করেছিলেন সাংবাদিকরা। অনুষ্ঠানে জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী বেবী নাজনিন, চন্দন চৌধুরী, শাহ মাহবুব ও কৃষ্ণা তিথি পারিশ্রমিক ছাড়া সঙ্গীত পরিবেশন করেছিলেন। বৈরী আবহাওয়া এবং করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিতি ছিল একেবারে কম। এতেও দমে যাননি সাংবাদিকরা। তারা ছুটে গিয়েছেন বিত্তশালী ও হৃদয়বান ব্যবসায়ীদের কাছে। উত্তোলন করেছেন অনুদান।
স্বপন গত ২৮ মার্চ বাংলাদেশে ফিরে যাবার প্রস্তুতিও নিয়েছিল। কিন্তু এর আগে তিনি ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন। জ্বর নিয়ে তিনি নিউইয়র্কের কুইন্স হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে তার রক্ত পরীক্ষায় কোভিড-১৯ রিপোর্ট পজিটিভ আসে। ঐ হাসপাতালে স্বপন ৩০ মার্চ ইন্তেকাল করেন। তার মরদেহ বাংলাদেশ সোসাইটির সহযোগিতায় নিউজার্সির এক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
স্বপনের মৃত্যু হলেও অনুদান সংগ্রহ অব্যাহত থাকে। বুধবার ২৪ জুন অব্দি সাংবাদিক সমাজ স্বপনের পরিবারের জন্য ১৪ হাজার ২ শ’ ডলার উত্তোলন করেছেন এবং তা আজ বৃহস্পতিবার ২৫ জুন তার পরিবারের কাছে পাঠানো হবে। উত্তোলন করা অর্থের মধ্যে ৫ শ’ ডলার আগে স্বপনের স্ত্রী’র একাউন্টে পাঠানো হয়েছিল। এই অর্থ উত্তোলনের লক্ষ্যে গঠিত কমিটি’র সমন্বয়ক ছিলেন আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি দর্পণ কবীর।
এদিকে সংগঠনের কার্যকরী সদস্য স্বপন হাইয়ের জন্য নিউইয়র্ক সাংবাদিক সমাজসহ যারা সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছেন তাদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি দর্পণ কবীর ও সাধারণ সম্পাদক শাহাব উদ্দিন সাগর। তাঁরা বলেন, এ কৃতিত্ব নিউইয়র্কের সাংবাদিক সমাজের। স্বপনের জন্য নিউইয়র্কের সাংবাদিক সমাজ ও কমিউনিটির লোকজন অকৃতিম ভালোবাসা দেখিয়েছেন যা ভুলার নয়, আমরা তাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য, কবি কাজী জহিরুল ইসলামও তার জন্মদিনের দিন উপহারের পরিবর্তে স্বপনের জন্য অর্থ সহায়তা নিয়ে তার পরিবারের কাছে ২ হাজার ডলার দিয়েছিলেন।
সাংবাদিক স্বপন ঢাকায় দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকা ও দৈনিক মানবজমিনে কাজ করেছেন। তিনি ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। এখানে অসুস্থ হলে হাসপাতালে তাঁর ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছিল। এরপর থেকে তিনি (নিজ ভাইয়ের বাসায়) জ্যামাইকাতে বাস করছিলেন। তিনি সর্বশেষ সাপ্তাহিক আজকাল পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন। এ ছাড়া প্রথম আলো উত্তরামেরিকা এবং টিবিএন-২৪ টিভিতেও কাজ করেছেন স্বপন হাই। মৃত্যুকালে স্বপন হাই স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ অসংখ্য আত্মীয় স্বজন রেখে গেছেন।