রাসেল চৌধুরী :

 

কক্সবাজার শহরের বাহারছড়ার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন। তিনি কোন ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকর্মী নয়। নয় কোন টেকনোলজিস্ট বা ফার্মাসিস্ট। তবে স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত প্রায় ২০ বছর। দীর্ঘদিন কক্সবাজার শেভরণ ল্যাবে একাউন্টস শাখায় চাকরি করেছেন। এখন ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছেন ইউনিয়ন হাসপাতালে।

এই করোনাকালে চারিদিকে যখন “চাচা আপন প্রাণ বাচাঁ” অবস্থা, একজন থেকে আরেক জন নিরাপদ দুরত্বে, পিতা পুত্রকে, সন্তান পিতামাতাকে, স্বামী স্ত্রীকে, স্ত্রী স্বামীকে, ভাই ভাইকে এড়িয়ে চলছেন, তখন করোনা আক্রান্ত রোগীদের পাশে একবুক সাহস নিয়ে দাঁড়িয়েছেন আনোয়ার। তার সাহসী ভূমিকা মানুষের হ্নদয় ছুঁয়েছে।
গত তিনমাসে ধরে তিনি করোনা রোগীদের কাছে ঔষধ পৌছে দেওয়া, এম্বুলেন্স ম্যানেজ করা, এম্বুলেন্সে রোগীকে তুলে দেওয়ার কাজ করেছেন।

এই যেন সেবা নয়, মৃত্যুকে ছোঁয়ার অনবরত চেষ্টা করে যাচ্ছেন আনোয়ার! কিন্তু মৃত্যু তাকে ধরা দিচ্ছে না। আনোয়ারের গত তিনমাসের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে যে বা যারা জানেন, তাদের কাছে তিনি এক বিস্ময়ের নাম।

রমজানের শুরুরদিকে প্রথম করোনা আক্রান্ত এক ডাক্তারের সংস্পর্শে যান আনোয়ার। ওই ডাক্তার করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবরে সবার মধ্যে ভীতির সৃষ্টি হয়। সবাই তাকে ছেড়ে চলে যায়। এমনকি ঘনিষ্ঠজনরাও তার ধারেকাছে আসেনি। ওই সময় সাহস করে আক্রান্ত ডাক্তারের জন্য ঔষুদ ও পানি নিয়ে যায় আনোয়ার। ঔষুদ পৌছে দিতে গিয়ে দেখেন, ডাক্তার একা একা বসে আছেন, তার পাশে কেউ নেই। তাকে দেখে খুবই অসহায় মনে হয়েছে। ডাক্তারের পাশে আধঘণ্টারও বেশী সময় ছিলেন তিনি। এরপর ডাক্তারকে এম্বুলেন্সে তুলে দেন।

আনোয়ারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু পৌর কাউন্সিলর সালাহ উদ্দিন সেতুকে করোনা টেস্ট করাতে নিয়ে যান আনোয়ার নিজেই । সেতুর করোনা পজিটিভ আসার পরও সেতু থেকে আলাদা হননি তিনি। বরং সেতুর রুমে ছুটে যান। কোলাকুলি করেন। তাকে সবরকমের সাহস ও ভরসা দেন। একঘণ্টারও বেশী সময় তার সাথে একই রুমে কাটান।
পরের দিন সালাহ উদ্দিন সেতুর বউ, সন্তানকে টেস্ট করাতে নিয়ে যান। তাদের রিপোর্টও পজিটিভ আসে।

এরপর আবার ডাক পড়ে আনোয়ারের। করোনা পজিটিভ মুজিব ভাইকে ঢাকা নেওয়া হবে। তাকে এম্বুলেন্সে তুলতে হবে। মুজিব ভাইয়ের সন্তান মেহেদি একা কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। রাত ১১ টায় ছুটে যান আনোয়ার। এম্বুলেন্সে উঠাতে সবধরনের সহযোগিতা করেন।
তখনও জানতেন না মুজিব ভাইয়ের স্ত্রী ও সহকারী রানা করোনা পজিটিভ। তাদের সাথে স্বাভাবিক ভাবেই মিশে যান। পরে জানতে পারেন, তারাও করোনা পজিটিভ। এইভাবে নিজের জীবনের তোয়াক্কা না করে অসংখ্য করোনা পজিটিভ রোগীর পাশে দাঁড়িয়েছেন আনোয়ার।

আনোয়ার এক ছেলে ও এক কন্যা সন্তানের জনক। মা জীবিত নেই। পিতা, স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের নিয়ে তার সংসার।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানালেন, তিনি এ পর্যন্ত ২০ জনেরও অধিক করোনা রোগীর সংস্পর্শে গেছেন। আল্লাহর অসীম রহমতে তিনি এখনো সু্স্থ আছেন। করোনা আক্রান্ত হবেন না বলেই তার বিশ্বাস। তিনি বলেন, তাকে এবং তার পরিবারকে আল্লাহ রক্ষা করবেন।