সাইফুল আলম বাদশা

অগণিত শুভাকাঙ্ক্ষীদের জ্ঞাতার্থে আমার শারীরিক অবস্থা জানানোর প্রয়োজন বলে মনে করছি।

সর্ব প্রথম শুকরিয়া মহান প্রতিপালক আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে যিনি আমাকে এই করোনা থেকে মুক্তি দিয়ে সুস্থ করে তুলেছেন।

কিভাবে আক্রান্ত হই…
গত ৩০ মে কক্সবাজারের পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান করোনা পজিটিভ হোন। তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সেদিনই ঢাকা নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করলে আমি তাঁর করোনা পজিটিভ ও ঢাকা গমনের সংবাদ সংগ্রহ করতে যাই। সেই সংবাদ কাভার করতে গিয়ে আমি মেয়র মুজিবুর রহমানের সংস্পর্শে যাই। তাঁর সংস্পর্শে যাওয়ার ফলে আমার শরীরে করোনা প্রবেশ করে বলে ধারণা। পরের দিন ১ জুন থেকে আমি বাসায় না গিয়ে শ্রদ্ধেয় জাহেদ সরওয়ার সোহেল ভাইয়ের নির্দেশনায় একটা হোটেলে রুম নিয়ে আইসোলেট হই। তখন আমার শরীরে কোনো উপসর্গ ছিলো না। ৬দিন পরে অর্থাৎ ৫ তারিখ আমি নিজ বাসায় চলে যাই। কারণ, ৬দিনে আমার শরীরে কোনো উপসর্গ দেখা দেয়নি। তবে ৭ জুন সকালে হঠাৎ আমার প্রচণ্ড জ্বর আসে। শরীরে ব্যথা অনুভূত হলে ছোট ভাই শান্ত’র সঙ্গে গিয়ে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে করোনা টেস্ট করাই। তবে বলে রাখা ভালো, আমি হোটেল থেকে এসে বাসার একটি রুমে আইসোলেশনে থাকি। পরে ১৪ জুন আমার টেস্ট রিপোর্ট পজেটিভ আসে।

টেস্ট রিপোর্টের ফলাফল প্রথমে বিভিন্ন জন ফোন করে বলার পরে ল্যাব থেকে যে রিপোর্টের লিস্ট দেয়া হয়, সেটি দেখে আমি নিশ্চিত হই। আমি করোনা টেস্টের আগে থেকেই যেহেতু বাসায় আইসোলশনে আছি সেজন্য আমার নতুন করে আইসোলেশনে যেতে হয়নি। বর্তমানে আমি বাসায় আছি,
সুস্থ আছি এবং ভালো আছি।

কিভাবে আমি করোনার চিকিৎসা নিলাম- যেদিন থেকে আমি আইসোলেটেড থাকতে শুরু করলাম প্রথমে হোটেলে একটি নির্দিষ্ট রুমে ছিলাম। তখন বন্ধু, ছোট ভাই এরা খাবার নিয়ে যেতো। ঘরে আসার পর থেকে আমার খাবার থেকে শুরু করে সবকিছু একটি রুমেই ছিলো। তবে টয়লেট ব্যবহার করতে আমার তৃতীয় তলা থেকে দ্বিতীয় তলায় যেতে হতো। প্রত্যেকদিন গরম পানি খাওয়া, গরম পানির ভাপ নেওয়া, আঁদা, রসুন, তেজপাতা দিয়ে চা করে যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে। আমার বোন ও ভাগ্নি নিয়মিত আমার রুমে এসব কিছু নিয়ে আসতো। টানা ১৪ দিন আমি দূরত্ব বজায় রেখে একজন অপরজনের সাথে কথা বলেছি।

চিকিৎসা- আমার বাবার ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা ও মায়ের শরীরে আগে থেকেই বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা ছিলো। তাই উনাদের নিয়ে বেশ চিন্তিত থাকতাম। তখন আমার বড় ভাইয়ের পরামর্শে বাবাকে আরেকটি রুমে আলাদা করে রাখি। আমি করোনা টেস্ট করানোর ৫দিন পরে আমার মায়ের শরীরে জ্বর আসে। তখন ভয় পেয়ে যাই খুব। একদিন পরে আমার ছোর ভাগ্নিরও প্রচন্ড জ্বর আসে, এর একদিন পরে আমার বড় বোনের জ্বর ও শরীর ব্যথা অনুভূত হয়। তার একদিন পরে আমার বড় বোনের জ্বর, বড় বোনের জ্বর আসার পরের দিন ভাইয়ার জ্বর ও গলা ব্যথা শুরু হয়। তখন আমি মানসিকভাবে একদম ভেঙ্গে পড়ি। পরে সোহেল ভাইকে বিষয়টি জানালে তিনি রামু আইসোলেশন সেন্টার এর দায়িত্বে থাকা ডাঃ নোবেল কুমার বড়ুয়ার নাম্বার দেন। এরপর থেকে আমি ডাক্তার নোবেল বড়ুয়ার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করে তাঁর পরামর্শে ঔষুধ খেতে লাগলাম বাসার সবাই। দৈনিক চার বার গরম পানির ভাপ, গার্গেল করা চলতে থাকে। তবে করোনা টেস্ট রিপোর্ট পাওয়ার আগেই আমার ও বাসার সবার জ্বর চলে যায়। তবুও তাদের ঔষধ খাওয়ার পরামর্শ দেন ডাক্তার মহোদয়।

বিড়ম্বনা- আমি ১ম টেস্ট করাই জুন মাসের ৭ তারিখ এবং বিভিন্ন ভাবে ফোন দিয়েও সে রিপোর্ট না পাওয়ায় হাল ছেড়ে দেয়ার উপক্রম হয়। ৭ দিন পর জুনের ১৪তারিখ রিপোর্ট পাই এবং দেখি আমার রিপোর্ট পজিটিভ। পরে ১৬ জুন পৌরসভার শামীমা আপার সহযোগিতায় মা, বড় বোন ও ভাইয়ার করোনা টেস্ট করাতে সক্ষম হই। ১৯ তারিখ তাদের রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। আমি গতকাল ২য় টেস্ট করিয়েছি, যার রিপোর্ট এখনো হাতে পাইনি।

কৃতজ্ঞতা- আমি করোনায় আক্রান্ত হবার পর থেকে আমার পরিবার আমার ভাই ও বোন তিনজনেই প্রতিনিয়ত আম্মা ও আব্বা কে সুস্থ্য রাখার চিন্তায় ছিলো। এরপর আমার হাউজ মানে আমার দ্বিতীয় পরিবার আমার কর্মস্থল টিটিএন’র প্রধান সম্পাদক শ্রদ্ধেয় জাহেদ সরওয়ার সোহেল ভাই, কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি তাহের ভাই, টিটিএন’র বার্তা প্রধান লিপু ভাই, ইসু আপা, ইমরুল ভাই, টুরিস্ট পুলিশের রায়হান ভাই, আমার সাংবাদিক সংগঠন রিপোর্টার্স ইউনিটি কক্সবাজারের সভাপতি নজরুল ভাই, সাধারণ সম্পাদক নিহাদ, আমার আরেকটি পরিবার নতুন জীবনের হিরু ভাই, মিনহাজ ভাই, সুমন ভাই, রিপন ভাই সহ সকলে প্রতিনিয়ত সাহস জুগিয়েছে এবং খোঁজ নিয়েছেন।

আমি আজীবন ঋণী হয়ে থাকবো আমার প্রিয় বড় ভাই আমার সাংবাদিকতার গুরু শ্রদ্ধেয় জাহেদ সরওয়ার সোহেল ভাইয়ের প্রতি। উনাকে আমি যখন যে মুহুর্তে যত রাত হোক না কেনো যখনই ফোন করে বিরক্ত করেছি কিন্তু তিঁনি প্রতিনিয়তই হাসি মুখে আমার সব কথা শুনে সমাধান দিয়েছেন। এবং সবসময় সাহস জুগিয়েছেন। এবং বলেছেন, আর যা কিছু যে মুহুর্তে প্রয়োজন হবে তা অবশ্যই বলিস।

এছাড়া আমার সকল সহকর্মী, সাংবাদিক আরফাত ভাই, নিহাদ ভাই, মিজান ভাই, সিনিয়র সাংবাদিক ফরহাদ ভাই, মহেশখালীর মাহবুব রোকন ভাই সহ আমার অসংখ্য বন্ধু, আমার সার্কেলের যারা প্রতিনিয়ত আমার খোঁজ- খবর নিয়েছেন। আমার সব আত্মীয় স্বজন অভিভাবক বন্ধুবান্ধব সহকর্মী সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা। আমি আজীবন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ রইলাম। কথা দিলাম সবার পাশে ভালো সময়ে না পারলেও খারাপ সময়ে অবশ্যই থাকবো।

পরিশেষে বলতে চাই, আমি ২য় টেস্টের রিপোর্ট হাতে পেয়েই প্রথমে প্লাজমা দেওয়ার জন্য মনস্থির করেছি তার জন্য কাজ করবো। সবাই সুস্থ থাকুন, ঘরে থাকুন এবং নিরাপদে থাকুন।

সাইফুল আলম বাদশা,
স্টার্ফ রিপোর্টার
দি টেরিটোরিয়্যাল নিউজ (টিটিএন)