মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,

আসসালামু আলাইকুম, ওয়া রাহমাতুল্লাহে ওয়া বারাকাতুহু।

আমি একজন শিক্ষক। নাম মো. আব্দুর রহিম, লেখক নাম ‘রহিম আব্দুর রহিম’।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,

আপনার সরকার পরিকল্পনা অনুযায়ী মাদ্রাসা শিক্ষায় ব্যাপক উন্নয়ন ঘটিয়েছে। এ যাবৎ প্রায় ৫’শ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। আপনার সুচিন্তার ফলাফলই আলেম সমাজকে একটি সম্মানজনক অবস্থায় দাঁড় করিয়েছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,

আপনি কওমী মাদ্রাসার শিক্ষিতদের সর্বোচ্চ ডিগ্রী প্রদান করেছেন। সারাদেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মসজিদ নির্মান, এক লাখ মসজিদের প্রত্যেকটি মসজিদে, এক জন করে শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন; যাঁরা সম্মানী পাচ্ছেন ৪,৫০০ টাকা। করোনাকালে আপনি প্রায় সারাদেশের মসজিদগুলোর ইমাম ও খেদমতকারীদের জন্য ৫,০০০ টাকা করে অনুদান দিয়েছেন। সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে সামঞ্জস্য রেখে দেশের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভৌত অবকাঠামো তুলনাহীন উন্নয়ন ঘটিয়েছেন। দেশের আলেম ওলামাদের জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই প্রথম, বাংলাদেশ ইসলামী ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। বায়তুল মোকারম মসজিদ জাতীয়করণ তাঁরই অবদান। তাবলীগ জামাতের জন্য কাকরাইল মসজিদ নির্ধারণ, উপমহাদেশের সহবৃহৎ টঙ্গী বিশ্ব-ইস্তেমার জন্য জায়গা প্রদান তিনিই করেছেন। শুধু তাই নয়, এক সময়কার মুষ্টি চালে পরিচালিত বেসরকারি মাদ্রাসা শিক্ষকদের মূলধারায় এনে সম্মানীভাতা প্রদান শুরু করেন। যা আপনার আমলে, সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে বৈষম্যহীনভাবে বেতন-ভাতাদী পেয়ে যাচ্ছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,

স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা আপনি, আপনার হাতে পিতার উন্নয়ন ধারা অব্যাহত থাকবে এটাই স্পষ্ট। আপনার সরকারের আমলে জাতীয় শিক্ষানীতিতে ইসলামী শিক্ষাকে অতীব গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। কয়েক হাজার মাদ্রাসার একাডেমিক ভবন নির্মাণ, প্রায় ২০ হাজার ৫’শ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন, ৩৫টি মডেল মাদ্রাসা স্থাপন, একশ টি মাদ্রাসায় ভোকেশনাল শিক্ষা চালুকরণ ও ইসলামি এরাবিক এফিলিয়েটিং বিশ্বাবিদ্যালয় স্থাপন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে নানামুখি কর্মসুচির মাধ্যমে পাঠ্যক্রম চলাসহ নানাবিধ কর্মসূচী বাস্তবায়ন করায়, আপনার সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। একই সাথে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাদ্রাসা উন্নয়ন ভাবনা অতিদ্রুত প্রতিফলিত হচ্ছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,

জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ এর ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পরপরই দেশের শিশু শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনা মূল্যে পাঠ্যবই তুলে দেন। তারই সুযোগ্য কন্যা আপনি ও আপনার সরকার বিগত ১১ বছরে ৩৩১ কোটি পাঠ্যবই বিনামূল্যে বিতরণ করেন। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ১ জানুয়ারি দেশের ৪ কোটি ৩০ লক্ষ শিক্ষার্থীদের মাঝে ৩৫ কোটি নতুন বই বিনামূল্যে বিতরণ করেছেন। এই বই প্রত্যন্ত গ্রামের মাদ্রাসা পড়ুয়া হতদরিদ্র খেঁটে খাওয়া, ছেড়া জামা-জুতার শিশুরা পেয়ে খুশি হয়েছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,

হযরত মোহাম্মদ (সঃ) উম্মতদের ধর্মীয় শিক্ষায় সু-শিক্ষিত করার জন্য সর্বপ্রথম তাঁর সাহাবা ছায়েদ বিন আকরামের বাড়িতে, মক্কা নগরীর নিকটস্থ সাফা পাহাড়ের পাদদেশে ৬১৪ খ্রিঃ মাদ্রাসা স্থাপন করেছিলেন । বৃটিশ আমলে এ উপমহাদেশে মুসলিম ধর্মীয় শিক্ষা বিস্তারের জন্য লর্ড হেস্টিংস এর পৃষ্ঠপোষকতায় ১৭৮০ সালে স্থাপিত হয় কলিকাতা আলীয়া মাদ্রাসা। ঢাকা আলীয়া মাদ্রাসা স্থাপিত হয় ১৯৪৯ সালে। এভাবেই সারা উপমহাদেশ তথা বিশ্বের সর্বত্রই ধর্মপ্রাণ মুসলিম সমাজের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আরও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। কালের ঘুর্নায়নে যে প্রতিষ্ঠানে আরবীর পাশাপাশি বাংলাসহ অন্যান্য ভাষায় জ্ঞানদান করা হচ্ছিল। আপনার আমলে এই মাদ্রাসা শিক্ষায় আধুনিক মাত্রা যোগ হয়েছে। আমি এই ধরনের একটি আলীম (প্রস্তাবিত ফাযিল) মাদ্রাসার বাংলা প্রভাষক। চাকরির শুরুতে চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার নওহাটা ফাযিল মাদ্রাসায় বাংলা প্রভাষক হিসেবে ১৯৯৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারী যোগদান করেছিলাম। পরে কর্মস্থল পরিবর্তন করে পঞ্চগড় জেলার প্রত্যন্ত পল্লীর গলেহাহাট আলীম (প্রস্তাবিত ফাযিল) মাদ্রাসায় একই পদে যোগদান করি। চাকরির বয়স দীর্ঘ প্রায় ২২ বছর ৪ মাস। প্রভাষক হিসেবেই রয়েছি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,

এ সমস্যা শুধু আমার নয়, সারাদেশের আলীম এবং উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ পর্যায়ের সকল প্রভাষকদের। আনুপাতিক ৫:২ বিধির কারণে অনেক শিক্ষকই কর্মজীবন শেষ করছেন প্রভাষক হিসেবে। অথচ আমাদের ছাত্ররাই সরকারি কলেজ কিংবা কোন বেসরকারী ডিগ্রী কলেজে চাকরিতে যোগদানের পর, আট বছরের ব্যবধানে সহকারি অধ্যাপক হওয়ার সম্মান অর্জন করছেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,

আপনার সরকারের আমলে সারাদেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সম্মানিত শিক্ষকরা সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতই বেতনভাতাদি পেয়ে যাচ্ছেন। বৈষম্য বিরাজ করছে এই ক্ষেত্রে- ক) সরকারি উচ্চ মাধ্যমিক কলেজগুলোতে আনুপাতিক হারে পদোন্নতি হয় না, ৮ বছর পুর্ণ হলেই এই সম্মান তাঁরা পান। বিপরীতে বেসরকারি কলেজ, মাদ্রাসাগুলোতে আনুপাতিক হারের অযৌক্তিক পদোন্নতি পাওয়ার বিধি থাকায় সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা প্রাপ্য সম্মান থেকে দীর্ঘদিন যাবৎ বঞ্চিত হযে আসছেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,

আপনার এই আমলে আনুপাতিক এই বিধি তুলে দিয়ে, কর্মজীবনের সম্মানটুকু পরিপূর্ণ করার আকুল অনুরোধ জানাচ্ছি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,

আনুপাতিক নয়, আপনার সরকার সারাদেশের সকল বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করলে খুব একটা ভর্তুকি দিতে হবে না, কারণ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সকল আয় রোজগার রাষ্ট্রীয় কোষাগারেই জমা হবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,

আপনার সরকারের বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষাবান্ধব। এই আমলেই আমার মত ভুক্তভোগী একজন শিক্ষকের আবেদন মঞ্জুর হলে, লাখো লাখো শিক্ষক তাঁদের কর্মজীবনের শেষ সম্মানটুকু নিয়ে অবসরে যেতে পারবেন।

আমীন-

ইতি

আপনার আদর্শের শুভাকাঙ্খী

মো. আব্দুর রহিম

ইনডেক্স নং: ৩১৬৯২০; (লেখক নাম রহিম আব্দুর রহিম); প্রভাষক বাংলা, গলেহাহাট; ফাযিল মাদ্রাসা, টুনিরহাট, পঞ্চগড়; প্রতিষ্ঠান কোড: ১৫২৯১; ইআইআইএন: ১২৬১২৬; প্রাতিষ্ঠানিক এমপিও: ৭৯০৪০৬২২০১; মোবাইল: ০১৭১৪২৫৪০৬৬; bskt1967@gmail.com