মোয়াজ্জেম হোসাইন সাকিলঃ
চাকরি না পেয়ে উচ্চ শিক্ষিত যুবকের আত্মহত্যার খবরটি (১৯ জুন, ২০২০) আমাকে আহত করেছে। এরকম ইংরেজিতে মাস্টার্স করা আরও অনেক যুবক হয়ত আছেন; যারা চাকরি পাচ্ছেন না। আশা করি, আমরা সবাই মনোবল বাড়াব।

বিগত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে আমি এসব নিয়ে ছোটখাট লেখার চেষ্টা করেছি। বিশেষ করে কক্সবাজারের নতুন প্রজন্মের উদ্দেশ্যে লিখেছি বেশি।

পড়াশুনার পাশাপাশি আমাদের পছন্দের কাজ নির্বাচনের চেষ্টা করতে হবে। কোন একটি বিষয়ে মাস্টার্স করলেই যে চাকরি পাওয়া যাবে না- তা অন্তত অনেকেই বুঝে গেছেন। তাহলে একাডেমিক পড়ালেখার পাশাপাশি আমাদের দক্ষতা নির্ভর চিন্তা করতে হবে।

পছন্দের কাজটি রপ্ত করতে পারলে ছাত্র অবস্থা থেকেই কাজের সুযোগ তৈরি হতে পারে। মাস্টার্স পর্যন্ত যাওয়ার আগেই নিজের অবস্থান তৈরি হয়ে যেতে পারে।

নতুন প্রজন্ম হয়তো বুঝবেন- এখন এসএসসি কিংবা এইচএসসি লেভেল থেকেই পছন্দের কাজ, ভোলান্টিয়ার, উদ্যোক্তা হওয়ার অপার সুযোগ রয়েছে।

পাঠ্যবই আর পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করাকে জীবনের একমাত্র ব্রত না বানিয়ে, নিজের পছন্দকেও কিছুটা গুরুত্ব দিতে হবে।

কক্সবাজার পুরো পৃথিবীতে ব্যতিক্রম। এখানকার নতুন প্রজন্মের জন্য বিশ্বমানের পেশাদার হওয়ার মতো সব রকমের ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়ে রয়েছে। কেউ কেউ সেই সুযোগ নিয়েছেনও।

কক্সবাজারের সেরকম কিছু পেশাদার ব্যক্তিকে অনুসরণ করে আমিও উপকৃত হয়েছি। তবে এই সংখ্যা খুবই কম। অনেকেই চেষ্টা করছেন। আশা করি ইন্টারন্যাশনাল প্রফেশনাল ভবিষ্যতে বাড়বে কক্সবাজারে।

কয়েকটি সুনির্দিষ্ট সমস্যা কিংবা বাধা চিহ্নিত করে দিতে চাই।
১। সবকিছুর আগে আমাদের যোগাযোগ দক্ষতা অর্জন করতে হবে।

২। শারীরিক ভাষাটি রপ্ত করে সেটি নিজের শরীরে সেট করে নিতে হবে।

৩। অবশ্যই আত্মকেন্দ্রীকতা পরিহারের চেষ্টা করা।

৪। নিজেকে ইউনিভার্সাল অবস্থানে রাখার কৌশলটি শিখে, নিজের পজিশন ঠিক করে নিতে হবে।

৫। এরপর আসবে দক্ষতা। আমি যে কাজটি পছন্দ করি, সুনির্দিষ্ট দক্ষতাটির সর্বোচ্চ অর্জনের চেষ্টা করবো। আমার পছন্দের দক্ষতায় এই পৃথিবীতে নিজের অবস্থান কয় নাম্বারে- তা সবসময় হিসাব করবো।

৬। ইন্টার-কানেক্টেড দক্ষতাগুলোও অর্জন করে নেব। এতে কাছাকাছি ৩/৪টি দক্ষতা অর্জন হয়ে যায়। কোন কারণে প্রধান কাজটিতে ভাটা নামলেও কানেক্টেড কোন কাজ দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়।

৭। মাতৃভাষার বাইরে ২/৩টি ভাষা শিখতে হবে। পৃথিবীর নতুন নতুন পড়াশুনাগুলোর সাথে পরিচিত থাকতে হবে।

৮। ইংরেজি এবং কম্পিউটার; এই দু’টি টুলস শিখে নিতে হবে।

৯। অন্যের উপকার করার মানসিকতা অর্জন করা বেশি জরুরী। বাঁশটা কোথাও ফেলে রাখতে হবে আপাতত।

নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে এবং এখানকার তরুণদের পর্যবেক্ষণের মধ্যদিয়ে বিষয়গুলো লিখলাম। আমার পর্যবেক্ষণে ভুল থাকলে অবশ্যই আমাকে সংশোধন করে দেবেন। আমি উপকৃত হব।

লিটন সৈকত দাদা সহ আমরা কক্সবাজারে অনলাইন প্রফেশনাল কমিউনিটি গঠন করেছিলাম। ফেইসবুক গ্রুপ খুলে দক্ষতা বেইস সহযোগিতা করতাম। অবাক হওয়ার মতো সাফল্য যেমন বিমোহিত করেছে। নানা কারণে তীক্ত অভিজ্ঞতাও হয়েছে। সবচেয়ে দুঃখ- এখানকার তরুণরা নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে চান না। নিজের দক্ষতা শেয়ার করতে চান না। নিজের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা অন্যদের শেখানোর মাধ্যমে সবারই লাভ।

ফেইসবুকে গ্রুপ খোলার এখন কিছু ট্রেন্ড চলছে। যেমনঃ সাল অনুসারে SSC/HSC ব্যাচের গ্রুপ। বিভিন্ন বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের গ্রুপ। এসব নিয়ে আবার ব্যক্তিগত পর্যায়ে গ্রুপিং এবং মারামারিও হচ্ছে। তবে সর্বশেষ ট্রেন্ড হচ্ছে গ্রাজুয়েটস্দের গ্রুপ। এসব গ্রুপে মূলতঃ নিজ নিজ পরিচিতিগুলো তুলে ধরা হচ্ছে। আর হালকা-পাতলা ফান। এরকম কিছু গ্রুপের আমি সদস্য হলেও, সেখানে খুব একটা সক্রিয় নই।

কিন্তু প্রফেশনালদের কিছু গ্রুপে আমি খুবই সক্রিয়। সুনির্দিষ্ট দক্ষতা নির্ভর গ্রুপে এক্টিভিটি অনেক উপকারে আসে।

আমাদের কমিউনিটির জন্য কাজ করার ইচ্ছা বাড়াতে হবে। কন্ট্রিবিউশনের মনোভাব গড়ে তুলতে হবে। এসবও উপকারে আসে। আপনি যদি সমাজের জন্য, পৃথিবীর জন্য কোন অবদান না রাখেন, চারপাশে আপনার সাফল্য, সুখ ঘুরাঘুরি করবে না।

কিছু কিছু স্থানীয় উচ্চ শিক্ষিত মানুষ ভালো অবস্থানে যাওয়ার পরও স্থানীয় কর্মী থেকে গেছেন। কাজের ক্ষেত্রে তাদের সাথে যোগাযোগ করে তীক্ত অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি।

তাদের যোগাযোগ দক্ষতা, শারিরীক ভাষা; সব মিলিয়ে আমাদের কমন দূর্বল দিকগুলো কাটিয়ে উঠতে পারেন নি।

কয়েকজনের আচরণ ছিল একেবারে লোকাল মাস্তানের মতো। ওই যোগাযোগ দক্ষতা এবং শারিরীক ভাষা দিয়ে এর চেয়ে আর আগানো আশা করা যায় না।

এখন আমি কী লোকাল মাস্তান হবো? নাকি লোকাল কর্মী হবো?
নাকি ইন্টারন্যাশনাল প্রফেশনাল হবো? সেটা পুরোটাই নির্ভর করছে নিজের উপর।

নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতা ছাড়াও এই ধরণের প্রশিক্ষণ অনেক নিয়েছি। আবার নিজে প্রশিক্ষণ দিয়েছিও। যে বিষয়টি শিখলাম- “দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে”।

ধলঘাটা, সেন্টমার্টিন কিংবা কুতুবদিয়ার মতো কোন দ্বীপে বসেও এখন ইন্টারন্যাশনাল প্রফেশনাল হিসেবে কাজ করা যায়।

করোনা ভাইরাস সেই সম্ভাব্যতা আরও হাজার গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

আসুন, দক্ষতা অর্জন করি। হতাশ না হই। যেখানে করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য এতো চেষ্টা করছি। সেখানে একটি চাকরির জন্য কোন দুর্ঘটনা নয়।

পছন্দের কাজটি খুঁজে নিই। সেখানেই জীবনের আনন্দ।

লেখক পরিচিতি:
মোয়াজ্জেম হোসাইন সাকিল বাংলাদেশের একাধিক রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত একজন তথ্যপ্রযুক্তিবিদ।
বর্তমানে তিনি ভয়েস অফ আমেরিকা ও এটিএন বাংলায় সাংবাদিক হিসেবে কর্মরত।