এ কে এম ইকবাল ফারুক, চকরিয়া:

কক্সবাজারের চকরিয়ায় আষাঢ়ের প্রথম সপ্তাহের টানা তিনদিনের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে চকরিয়া পৌর এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ভারী বর্ষণের ফলে মাতামুহুরী নদীর পানি বিভিন্ন শাখাখাল দিয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করায় আগাম বন্যার আশংকা দেখা দিয়েছে। এছাড়া এখনো থেমে থেমে ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকায় পাহাড় ধ্বসেরও আশংকা দেখা দেয়ায় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থান নেয়া লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার জন্য স্থাণীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা দিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। পাশাপাশি এসব লোকজনের ব্যাপারে সার্বক্ষণিক খবরদারির জন্যও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

এদিকে উপজেলার ছড়াখাল ও নদীসমুহ অত্যধিক ভরাট হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টি ও ঢলের পানি নামতে পারছেনা। ফলে চকরিয়া পৌরসভাসহ উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের অন্তত ২০টি গ্রামে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে এসব এলাকার প্রায় লাখো মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। পাশাপাশি ওইসব ইউনিয়নের গ্রামীন রাস্তাগুলো পানি নিচে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপর্যয় নেমে এসেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে চকরিয়া পৌর এলাকা ও উপজেলার কাকারা, সুরাজপুর-মানিকপুর, বরইতলী, চিরিংগা, লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, বিএমচর, সাহাবিল ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া খুটাখালী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মুহুরী খালের বাঁধ ভেঙ্গে অন্তত অর্ধ-শতাধিক বসত ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। খুটাখালী বাজারে হাটু পরিমান পানি থাকায় বন্ধ রয়েছে দোকানপাট সমুহ।

ভারী বর্ষণের ফলে ইউনিয়নের নীচু এলাকার গ্রামীণ সড়কগুলো পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় চলাচলের ক্ষেত্রে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে এসব এলাকার সাধারণ মানুষ। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে পৌর এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রায় লাখো মানুষ। এখনো ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকায় মাতামুহুরী নদীতে ঢলের পানি নামা অব্যাহত থাকায় আগাম বন্যার আশংকা করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

উপজেলার কাকারা, সুরাজপুর-মানিকপুর, লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, বরইতলী ও হারবাংসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানগন জানায়, এসব ইউনিয়নগুলো নদীতীরবর্তী হওয়ায় সহজেই ঢলের পানি নিচু এলাকায় প্রবেশ করে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া অনেক রাস্তাঘাট পানির নীচে তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি অধিকাংশ বসতঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। ভারী বর্ষণের ফলে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে চকরিয়া পৌরসভার শহর রক্ষা বাঁধটি ঝুকিপূর্ন হয়ে পড়েছে। বাঁধের বিভিন্ন জায়গায় মাটি সরে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে যে কোন মুহুর্তে শহর রক্ষাবাধটি ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। এখনো বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় চকরিয়া পৌরসভার ৯টি ওয়াড়র্ের আভ্যন্তরীণ সড়ক গুলো পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। বিশেষ করে ২নং ওয়ার্ডের হালকাকারা, মৌলভীরচর ও ৮নং ওয়ার্ডের নামার চিরিঙ্গা ও কোচপাড়াসহ একাধিক এলাকার রাস্তাঘাট ও সড়কগুলো পানির নিচে তলিয়ে থাকায় ওইসব এলাকার মানুষগুলো চলাচল করতে না পেরে ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে।

এদিকে করোনা ইস্যুকে কেন্দ্র করে চকরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সরিয়ে নেয়া পৌর সদরের অস্থায়ী কাচাবাজারও এখন পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। চিরিঙ্গা পুরাতন বাসষ্টেশন জামে মসজিদের ভেতরে পানি ঢুকে পড়েছে। ফলে মুসলিরা ঠিকমতো নামাজ আদায় করছে পারছেনা। কয়েকজন মুসলি আক্ষেপ করে বলেন, বর্ষার শুরুর আগে পৌরশহরের বড়বড় ড্রেনগুলো সংস্কার ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ওয়ালিদ মিল্টন বলেন, প্রথম শ্রেণীতে উন্নীত চকরিয়া পৌরসভার ড্রেনেজ ব্যবস্থা এখনো খুবই নাজুক। বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে পরিকল্পিতভাবে ড্রেনেজ ব্যবস্থা ঠিক না করা ও সংস্কারকৃত ড্রেনের কাজ ঠিকাদার যথাসময়ে কাজ সম্পন্ন না করায় দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পৌরবাসীকে।

চকরিয়া পৌরসভার সচিব মাসউদ মোরশেদ বলেন, পৌর এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নের কাজ চলছে। করোনার কারণে এ কাজের কিছুটা ধীরগতি হয়েছিল। তবে বর্তমানে আবারো কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে আগাম টানা ভারী বর্ষণ শুরু হওয়ায় বৃষ্টির পানিতে পৌরবাসীর কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে অচিরেই এ সমস্যা কেটে যাবে বলে জানান তিনি।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে আগাম বন্যা ও নদী ভাঙ্গনের আশংকা দেখা দিয়েছে। এছাড়া পাহাড় ধ্বসেরও আশংকায় পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে অবস্থান নেয়া লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার জন্য স্থাণীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বৃষ্টি ও ঢলের পানি সহজে যাতে নেমে যেতে পারে সেজন্য ইতোমধ্যে উপকূলীয় এলাকার মৎস্য ঘেরের ¯ুইস গেইটগুলো খুলে দেয়া হয়েছে।

ইউএনও আরও বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগনকে নিজ নিজ এলাকা সম্পর্কে সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর নেয়ার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া এখনো থেমে থেমে ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকায় পাহাড় ধ্বসের আশংকা থাকায় যে সব ইউনিয়নে পাহাড়ের পাদদেশে লোকজন ঝুঁকিপূর্ণভাবে অবস্থান নিয়েছে তাদেরকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার জন্য ইউপি চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। বন্যার আশংকা দেখা দিলে মানুষজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে।