নিজস্ব প্রতিবেদক:

আওয়ামী লীগ-মুক্তিযোদ্ধা পরিবার পরিবারের সন্তান ছাত্রলীগ, যুবলীগ জয় করে আওয়ামী লীগে স্থান করে নেয়া পরীক্ষিত নেতা টেকনাফের সাবরাংয়ের ইউপি চেয়ারম্যান নূর হোসেনকে ফাঁসাতে একটি চক্র গভীর ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। এই চক্রটির যোগসাজসেই সম্প্রতি নিজেই ধরিয়ে দেয়া একটি ইয়াবা চালানের মামলায় উল্টো নূর হোসেনকে প্রধান আসামী করা হয়েছে। ঘটনাটি সম্পূর্ণ উল্টো করে সাজিয়ে পরিকল্পিতভাবে তাকে ফাঁসানো হয়েছে। এই ঘটনাটি টেকনাফে আওয়ামী লীগের নিধনের একটি নীল নকশা অংশ। এই ঘটনার কলকাঠি নাড়ছে বিএনপিপন্থি হাইব্রীড আওয়ামী লীগ ‘চক্র’।

বৃহস্পতিবার (১৮জুন) কক্সবাজার জেলা পরিষদ হল রুমে  এই ‘পরিকল্পিত’ মামলার প্রত্যাহারের দাবিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করা হয়।

এই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য বক্তব্য পাঠ করেন চেয়ারম্যান নূর হোসেনের স্ত্রী রাবিয়া বসরী। উক্ত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, সাবেক টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান ও বর্তমান জেলা পরিষদ সদস্য শফিক মিয়া, টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ নুরুল বশর, জেলা যুবলীগের সভাপতি সোহেল আহমদ বাহাদুর।
লিখিত বক্তব্য চেয়ারম্যান নূর হোসেনের স্ত্রী রাবেয়া বসরী জানান, চেয়ারম্যান নূর হোসেন দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা বিরুদ্ধে সোচ্চার রয়েছেন। ইউপি চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন মাদক নির্মূূল কমিটির সভাপতি হিসেবে তিনি বিভিন্ন সময় নিজেই লোকজন নিয়ে ইয়াবার চালান ধরিয়ে দিয়েছেন। ইয়াবা নির্মূলে তিনি সব সময় সরকারি সংস্থাগুলোকে সহযোগিতা করে আসছেন। এরই অংশ হিসেবে গত ১৪ জুন সাবরাংয়ের মন্ডলপাড়া ও পাশের বেইঙ্গা কয়েকজন লোকজন যোগসাজস করে একটি বড় ইয়াবা চালান পাচারের খবর পান চেয়ারম্যান নূর হোসেন। খবর পেয়েই তিনি চালানটি উদ্ধারে তৎপরতা শুরু করেন।

সংবাদ সম্মেলনে স্ত্রী রাবেয়া বসরী বলেন, চেয়ারম্যান নূর হোসেন দীর্ঘদিন ১০ দিনের বেশি সময় ধরে টাইফয়েড জ¦রে ভুগছেন। তারপরও তিনি ইয়াবা চালানটি উদ্ধারে তৎপর ছিলেন। এই জন্য তিনি মিয়ানমার থেকে ওই ইয়াবা চালান আনার সাথে জড়িতদের টার্গেট করেন। এর আগে খবর পাওয়ার সাথে সাথে চৌকিদারদের সাথে নিয়ে চালানের সাথে অভিযুক্ত দিল মোহাম্মদ (দিলু) ও দীল মোহাম্মদ (লালাইয়্যার)কে আটকের চেষ্টা করেন। একই সাথে ওইদিন (১৪ জুন) সাড়ে ১২টার দিকে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে ফোন করে বিষয়টি জানিয়ে পুলিশ ফোর্স পাঠানোর আহŸান জানান। কিন্তু তখন ওসি ফোর্স পাঠাননি। পরে দ্বিতীয়বার ফোন করলে ওসি থানার এএসআই রাম ধরের নেতৃত্বে একটি ফোস পাঠান। পুলিশ ফোর্স সাথে নিয়ে চেয়ারম্যান নূর হোসেন নিজেই অভিযুক্ত দিল মোহাম্মদ প্রকাশ দিলুর স্বীকারোক্তি মতো বেইঙ্গা পাড়ার করবস্থানের পাশ থেকে ৪০ হাজার পিস ইয়াবার একটি চালান উদ্ধার করা হয়। একই সাথে ওই চালানের জড়িত আবদু সালামের বাড়িতে অভিযানে যান। কিন্তু আবদু সালামকে পাওয়া যায়নি। পুলিশ তার মাকে আটক করে। এসময় কয়েকশ মানুষ উপস্থিত ছিলেন। পরে পুলিশ ইয়াবার চালানটি নিয়ে থানায় চলে যায়। এময় চালান ধরিয়ে দেয়ায় চেয়ারম্যান নূর হোসেনকে ধন্যবাদ দেন এএসআই রাম ধর।

নূর হোসেনের স্ত্রী আরো জানান, ইয়াবার চালানটি মামলার ব্যাপারে খবর নিতে পরদিন ১০৪ ডিগ্রি জ¦র নিয়ে থানায় যান চেয়ারম্যান নূর হোসেন। তখন ফোনে অফিসের আসার কথা বলেও দুপুর সাড়ে পর্যন্ত অফিসে আসেননি ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। ওসিকে না পেয়ে তিনি বাড়িতে চলে যান। এরমধ্যে সন্ধ্যার দিকে অনলাইন পোর্টালে দেখতে পান ‘চেয়ারম্যান নূর হোসেনে বাড়ি থেকে ইয়াবা চালান উদ্ধার’ শীর্ষক সংবাদ। এই সংবাদ দেখে হতভম্ব হয়ে যান চেয়ারম্যান নূর হোসেন ও তার পরিবারের লোকজন। পরে মূল ঘটনা আঁড়াল করে মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে চেয়ারম্যান নূর হোসেনকে প্রধান আসামী থানায় মামলা দায়ের করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে নূর হোসেনের স্ত্রী-সন্তান ও আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা নূর হোসেনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।

উক্ত সংবাদ সম্মেলনে সাবেক টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান ও বর্তমান জেলা পরিষদ সদস্য শফিক মিয়া বলেন, নূর হোসেন একজন বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য খাঁটি আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। ৭ম শ্রেণিতেই ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু করেছিলেন। সেই থেকে এক মুহূর্তের জন্যও কখনো দলকে অগ্রাহ্য করেছেন। দলের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন নূর হোসেনের পিতা, ভাই ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। এভাবে এগিয়ে গিয়ে নূর হোসেন আজ পরীক্ষিত খাঁটি নেতা হিসেবে বড় স্থান দখল করতে সক্ষম হয়েছে। তাই আগামী নির্বাচন এবং আওয়াম লীগের রাজনীতি থেকে তাকে দূরে সরিয়ে দিতে একটি চক্র তৎপর রয়েছে। ওই চক্রটির যোগসাজসে তাঁকে মিথ্যা ইয়াবা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। আমরা এই মিথ্যা মামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং মামলাটি প্রত্যাহার ও ঘটনার সঠিক তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।

টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ নুরুল বশর বলেন, টেকনাফে প্রকৃত আওয়ামী লীগদের উপর নির্যাতনের স্টীম রোলার চালানো হচ্ছে। ঘুমন্ত নিরাপরাধ নেতাকর্মীদের ধরে এনে ইয়াবা মামলা দিয়ে চালান দেয়া হচ্ছে। কেউ মিথ্যা মামলার পরোয়ানা নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এভাবে টেকনাফে আওয়ামী লীগ নিধন চলছে। বিএনপিপন্থি একটি হাইব্রীড আওয়ামী লীগের যোগসাজসে প্রকৃত আওয়ামী নেতাকর্মীদের এই অত্যাচার চলছে। চেয়ারম্যান নূর হোসেনও ওই চক্রের শিকার।

তিনি বলেন, কাউন্সিলর একরাম এবং নূর হোসেন চেয়ারম্যানসহ তিনজন খাঁটি আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তানকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা ছিলো ওই চক্রের। কিন্তু একরাম হত্যার পর তোলপাড় হওয়ায় বেঁচে গেছেন চেয়ারম্যান নূর হোসেন ও অন্যজন। কিন্তু ওই চক্রটির ষড়যন্ত্র এখনো থেমে নেই। তারাই এবার তাকে ইয়াবা ষড়যন্ত্রমূল মিথ্যা মামলায় ফাঁসালো। আমি টেকনাফ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এই মিথ্যা মামলা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং মামলাটি প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। না হলে আমরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবো।

জেলা যুবলীগের সভাপতি সোহেল আহমদ বাহাদুর বলেন, আজকের নূর হোসেন একদিনে সৃষ্টি হয়নি। তিলে তিলে বহু ত্যাগের বিনিময়ে আজকের অবস্থানে এসেছেন তিনি। ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগে তার অসামান্য অবদান রয়েছে। তাঁর উত্থান ও এগিয়ে যাওয়া বাধা হয়ে দাঁড়ানোর আশঙ্কায় একটি চক্র দিশাহীন হয়ে পড়েছে। ওই চক্রটি কাউন্সিলর একরামের মতো নূর হোসেনকে সরিয়ে দিতে মিশন হাতে নিয়েছে। ওই মিশনের অংশ হিসেবে পরিকল্পিত ও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ঘটনাকে উল্টো করে সাজিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে চেয়ারম্যান নূর হোসেনকে ফাঁসানো হয়েছে। কিন্তু তাদের এই ষড়যন্ত্র কখনো সফল হবে না। যদি বাড়াবাড়ি করা হয় তাহলে আমরা বসে থাকবো না। এই মামলা প্রত্যাহার করে ওই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক ইউনুছ বাঙ্গালী, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল হক সোহেল, টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি নুরুল আলম, টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এড. মঈন উদ্দীন, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম মুন্নাসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ এবং চেয়ারম্যান নূর হোসেনের সন্তানেরা।