তাওহীদুল ইসলাম নূরী

“মা-মেয়ের মৃত্যুটাই যেন “অপরাধ”, পরিবারটি এখন অবরুদ্ধ” শিরোনামে ১৬ জুন বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ভাইরাল হয় একটি নিউজ। খোঁজ নিয়ে পরিবারটির সাথে দেখা করতে যাই ঐ দিনই। এলাকাবাসী কর্তৃক লকডাউন করা সেই বাড়িটিতে অনেক কষ্টে প্রবেশ করে যা জানলাম,…

চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থী শাহীন আক্তার।
১২ জুন করোনা উপসর্গে মৃত্যু হয় তার।
মেয়ের শোক সহ্য করতে না পেরে এর তিন দিন পর ১৫ জুন কোন ধরনের করোনা উপসর্গ ছাড়াই হার্ট এট্যাকে মৃত্যু হয় তার মায়ের।

তিন দিনের ব্যবধানে পর পর পরিবারের দুই সদস্যের মৃত্যু স্বভাবতই পরিবারে বর্তমানে থাকা অন্য ছয় সদস্যের জন্য বেদনার। কিন্তু, মারা যাওয়া মায়ের লাশটাও দেখতে পারেন নি তার স্বামী ও পরিবারে থাকা কন্যা, নাতী ও অন্যরা। সবচেয়ে প্রিয়জনকে শেষ বারের মত না দেখার বেদনায় যখন পরিবারে থাকা ০৬ সদস্য একপ্রকার অধিক শোকে মূহ্যমান, পাথরের ন্যায় ঠিক সেই সময় এলাকাবাসী নির্দয়,নির্মম আচরণ করেছে তাদের সাথে। অথচ, এখনো পর্যন্ত মারা যাওয়া মা-মেয়ে করো কোন রিপোর্টই আসে নি (এমন বক্তব্যই ছিল তাদের)।

এমতাবস্থায়, তারা অপেক্ষায় ছিলেন তারা আইসোলশনের। আমিও, সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যতক্ষণ পর্যন্ত তাদেরকে এ্যাম্বুল্যান্সে করে হাসপাতালের আইসোলশনে পাঠাতে না পারি ততক্ষণ তাদের কাছ থেকে দূরে যাব না। অবশেষে এ্যাম্বুল্যান্স আসলে তাদেরকে বিদায় দিয়ে বাসায় ফিরে তাদের জন্য কলম ধরা।

জানি না তাদের হয়ে কতটুকু তাদের মনের ভাবটা আপনাদের কাছে প্রকাশ করতে পেরেছি। তবে শেষ করি একটা কথা দিয়ে, ” করোনা রোগী এবং তার পরিবারের প্রতি দায়িত্বশীল তথা সদয় আচরণ করুন। মনে রাখবেন, এই ভাইরাস এইডসের মত ব্যক্তির কোন পাপের ফসল নয়। এটি চলমান মহামারী। কখন কাকে ছোবল মারবে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না। তাই, দায়িত্বশীল হোন আশেপাশের করোনা রোগী ও তার পরিবারের প্রতি”।

আবার ফিরে যাই পরিবারটির কাছে। হাসপাতালের আইসোলশনে যাওয়ার পর ওদের মধ্য থেকে একজন আমাকে ফোন দিয়ে দীর্ঘক্ষণ কথা বলে। একপর্যায়ে বলে যে ” আমাদের মনে হচ্ছে আমরা এখন ৭০% সুস্থ”।

জানি অনেকেই তার কারণ জানতে চাইবেন। তাদেরকে সঠিক উত্তর দিতে পারব বলে আমার মনে হয় না। কারণ, সেই মানুষগুলোকে তাদের এলাকায় অপরাধীর মত একপ্রকার এক ঘরে করে রেখেছিল আর প্রায় সপ্তাহখানেক তারা যে কোন অবস্থায় দিন পার করছিল সেটা তারা অধিক আবেগাপ্লুত হয়েই আমাকে একের পর এক বলেছিল। মধুবনের মালবাহী গাড়ি চালক পরিবারের একমাত্র কর্তাটির পরিবার এই সময়ে খাবারের সমস্যায়ও ছিল বলেছিল তারা। একটি থাকা, খাওয়া একটি মাত্র রুমে করে প্রাকৃতিক প্রয়োজনে (পায়খানা,প্রসাব) বের হতেও তাদের বেগ পেতে হয়েছে।

অধিক শোকে পাথর মুহ্যমান সেই হতভাগাদের এ্যাম্বুলেন্সে যখন তুলে দিচ্ছিলাম কিছুই বলতে পারছিলাম না। শুধুই বলছিলাম,
” মনে সাহস রাখুন।
ইনশ আল্লাহ আবার দেখা হবে “।

আত্নার মাগফেরাত কামনা করছি তাদের পরিবারের প্রয়াত দুই সদস্যের। আল্লাহ যেন অতিদ্রুত তাদেরকে সুস্থ করে দেন তার জন্য সকলের আন্তরিক দোয়া কামনা করছি। সাথে সাথে সকলের কাছে নিজ নিজ দোয়ার মধ্যে আমার নামটাও রাখার জন্য বিণীত অনুরোধ করছি যেন সুস্থ ও নিরাপদে থাকতে পারি।

 

লেখকঃ শিক্ষার্থী ,আইন বিভাগ  , আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম।