সেলিম উদ্দীন, ঈদগাঁহ:
একটানা বর্ষণে চকরিয়া উপজেলার খুটাখালীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।

এ অবস্থায় গলার কাঁটা হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে বাস্তবায়িত দোহাজারি-কক্সবাজার পর্যন্ত বিস্তৃত খুটাখালী অংশের রেললাইনের উঁচু রাস্তাটি।

কারণ এই রাস্তার পূর্বাংশজুড়ে আটকা পড়েছে কয়েকফুট উচ্চতায় বৃষ্টির পানি।

পানিতে তলিয়ে গেছে হাজার হাজার একর জমির ফসল ও বসত ঘর। এক্ষেত্রে রেল লাইনের উুঁচ রাস্তাকেই প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখছেন ভুক্তভোগীরা।

গত মঙ্গলবার রাত ১২টার পর থেকে লাগাতার এই বর্ষণে ইউনিয়নের নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

এদিকে বুধবার সারাদিন ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকায় এবং খুটাখালী ছড়ার ঢলের পানিও বিপদসীমা অতিক্রম করে নামতে শুরু করেছে। এতে করোনাকালে পুরো ইউনিয়ন জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে মানুষের মাঝে।

অতি বৃষ্টির কারণে ইউনিয়নের প্রায় ৭টি গ্রাম পানিতে ডুবে গেছে। ভেঙ্গে গেছে মাইজপাড়ার বেডিবাঁধ। এতে করে প্রতিটি ঘরের আসবাবপত্র, ব্যবহৃত ইলেক্ট্রিক যন্ত্রপাতি সহ বিভিন্ন সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে যায়। আর প্রায় বাড়ির নলকুপ, টয়লেট পানিতে ডুবে থাকায় নানান অসুবিধে সহ খাবার পানির সংকটে ভুগছে তারা।

এছাড়াও মাটির ঘর ধসের আশংকায় অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র অবস্থান করছে। গবাদিপশু ও হাসমুরগি নিয়ে আছে চরম বিপাকে। ইতিমধ্যে পানিতে ডুবে হাসমুরগি ও গবাদিপশুর মৃত্যু হয়েছে।

জানা গেছে, ইউনিয়নের মাইজপাড়ার পশ্চিমাংশে রেল সড়ক দিয়ে পর্যাপ্ত পানি বের না হওয়ায় মুলত দক্ষিণপাড়া, মাইজপাড়া গ্রামটি ডুবে যায়। রেল সড়কের বাঁধটি কেটে দিলে পানি নেমে যাবে বলে এলাকাবাসী জানান।

স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানায়, গতকাল থেকে শুরু হওয়া টানা বর্ষণের কারণে গ্রামে পানি জমতে থাকে। খুটাখালী বাজারসহ বিভিন্ন এলাকার পানি এই গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়। বাজারের অপরিকল্পিত ড্রেন ও পশ্চিমের রেল সড়কের বেড়িবাধের দিয়ে পর্যাপ্ত পরিমানে পানি বের হতে না পারায় গ্রামটি ডুবে যায়। যাতে করে গ্রামবাসীদের অপূরণীয় ক্ষতি হয় বলে দাবী করেন তারা।

তারা আরো জানায়, বর্তমানে গ্রামের শতাধিক পরিবার অন্যত্র বসবাস করছে। টানা বৃষ্টিতে গ্রামটি তলিয়ে যায়। এতে করে বিলের ক্ষেত খামার নষ্ট হয়ে যায়। তাই এই বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সহযোগীতা কামনা করেছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইউনিয়নের পুর্বপাড়া, ফরেষ্ট অফিসপাড়া, পশ্চিম নয়াপাড়া, হেফজখানা, দক্ষিণপাড়া, মাইজপাড়া, উত্তর পাড়া, জয়নগর পাড়া, চড়িবিল, পিয়াজ্জ্যাকাটা, হরইখোলা, পাগলিরবিল, খুটাখালী বাজার, খুটাখালী উচ্চ বিদ্যালয়ে ব্যাপক জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকায় তলিয়ে যাচ্ছে ক্ষেতের ফসলও।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন খুটাখালী বাজারের পশ্চিমাংশে উঁচু রেল রাস্তা ও বাঁধ থাকায় অতি বৃষ্টির পানি ভাটির দিকে নামতে পারছে না। এতে অতি দ্রুতই ডুবে যাচ্ছে লোকালয়। এই অবস্থায় বিপদসীমা অতিক্রম করে উজান থেকে পাহাড়ি ঢলের পানিও নামতে শুরু করেছে খুটাখালী ছড়াতে।এতে এবার ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হবেন খুটাখালীর মানুষ।

খুটাখালী ইউপি চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুর রহমান বলেন, অতিবর্ষণের কারণে ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকা পানিতে ডুবে গেছে।

কারণ দোহাজারি টু কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন সড়কের বিশাল অংশ আমার ইউনিয়নে পড়েছে। এতে বৃষ্টির পানি নামার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধতা সৃষ্টি করছে রেললাইনের উঁচু রাস্তা। তাই রেল লাইনটি পুরোপুরি বাস্তবায়নের আগে এলাকাভিত্তিক সমস্যা চিহ্নিত করে পানি যাতে ভাটির দিকে নামতে পারে সেজন্য ছোট ছোট কালভার্ট নির্মাণ করা খুবই জরুরী।
এসব বিষয় জেলা এবং উপজেলা প্রশাসনকে লিখিতভাবে অবহিত করা হবে।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, ভারি বর্ষণ ও উজানের পানি যাতে দ্রুত ভাটির দিকে নেমে যেতে পারে এবং রেললাইনের উঁচু রাস্তার কারণে যেসব এলাকায় পানি নামতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে তা চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের সঙ্গে বসে করণীয় নির্ধারণ করা হবে।

পাশাপাশি চলতি বর্ষা মওসুমেও যাতে কোন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্যও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম বলেন, বর্ষা মওসুমের শুরুতে টানা কয়েক ঘণ্টার ভারি বর্ষণে চারিদিকে পানি জমে যাওয়ার ক্ষেত্রে রেললাইনের নির্মিতব্য মাটির রাস্তাটিকে দায়ী করছেন মানুষ।

এখনো যেহেতু রেললাইন নির্মাণের কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি, সেহেতু কোথায় কী সমস্যা তা চিহ্নিত করার সুযোগ রয়েছে।