মোঃ জয়নাল আবেদীন টুক্কু:

পার্বত্য বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সদর, বাইশারী ও রামুর উপজেলার কচ্ছপিয়া-গর্জনিয়া ইউনিয়নে টানা বর্ষণ ও উপর থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে ১৫ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।এসব এলাকার শত শত বসতবাড়ি এখন পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার পর্যন্ত একটানা মুষল ধারে ভারী বর্ষনের ফলে কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের চাকমার কাটা,হাজির পাড়া,নতুন তিতার পাড়া, আষাড়ি পাড়া, ফাক্রিকাটা,
ফকিন্নির চর এবং গর্জনিয়া ইউনিয়নের ক্যাজর বিল, পশ্চিম সিকদার পাড়া, কোনার পাড়া।

বাইশারী ইউনিয়নের দক্ষিণ বাইশারী, দক্ষিণ নারিচ বুনিয়া, পশ্চিম বাইশারী, গুদাম পাড়া, মধ্যম বাইশারী,করলিয়ামুরা, উত্তর বাইশারীসহ ১৫ গ্রামের অধিকাংশ বাড়িঘরে পানি উঠেছে।

সরেজমিনে এসব ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বসতবাড়িতে পানি উঠার ফলে মুরগী, গরু ছাগল, মালামাল,আসবাব পত্র, ছোট্ট ছেলে মেয়েদের উঁচু জায়গায়, আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

অপর দিকে জানমালের নিরাপত্তার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্ব স্ব ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানগণ জনসাধারণকে নিরাপদ আশ্রয় গ্রহনের জন্য বলছেন।

কচ্ছপিয়ার ইউপি চেয়ারম্যান আবু মোঃ ইসমাঈল নোমান এ প্রতিবেদককে জানান,রামুর বৃহত্তর কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের গর্জনিয়া বাজার প্লাবিত হয়ে অনেক ব্যবসায়ীর মালামালের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ৫-৬ টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। তিনি প্লাবিত এলাকায় শুকনো খাবার বিতরণ করার কথা বলেন। এছাড়াও এলাকার মানুষদের সাইক্লোন সেন্টার এবং উঁচু স্থানে আশ্রয় নেওয়ার জন্য আহ্বান জনান।

গর্জনিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম জানান গর্জনিয়া বেশ কয়েকটি গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। বাকঁখালী ব্রীজের বেহাল দশা। দুপুরে কচ্ছপিয়া-গর্জনিয়া বেশ কয়েকটি গ্রাম নৌকা যোগে পরির্দশন করেন মানবতার সেবক নামে পরিচিত রামুর ইউএনও প্রণয় চকমা।

বাইশারী ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আলম কোম্পানি জানান তিনি বন্যার কারণে বাইশারীর ৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে আশ্রয় কেন্দ্র হিসাবে ঘোষণা করেন এবং আশ্রিত মানুষের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান।
এছাড়া উক্ত বিদ্যালয় গুলোতে থাকারও ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বন্যার পরিস্থিতির বিষয়ে কচ্ছপিয়া-গর্জনিয়া ও বাইশারী ইউপি চেয়ারম্যানদ্বয় জানান এ পর্যন্ত কোন বড় ধরনের ঘটনা ঘটেনি। তবে তারা নিজ নিজ উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে বন্যা পরিস্থিতির খবর প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় অবগত করছেন।

অপর দিকে টানা বর্ষনে নাইক্ষ্যংছড়ি-রামু গর্জনিয়া সড়ক, ঈদগাও-বাইশারী সড়ক, এবং বাইশারী টু গর্জনিয়া সড়ক বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার হাট বাজার, রাস্তাঘাট, দোকানপাট,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।

এদিকে বাইশারীর বিশিষ্ট সাংবাদিক আবদুর রশিদের বসত বাড়ির দেওয়াল ভেঙ্গে গেছে। এছাড়াও নাইক্ষ্যংছড়ি সদর, বাইশারী,সোনাইছড়ি,দৌছড়ি, ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় পাহাড় ধসে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আবছার জানান তার এলাকায় তেমন বন্যা পরিস্থিতি নেই আংংশি এলাকায় পনি উঠেছে তবে এভাবে বৃৃষ্টি হলে নিচু এলাকা তলিয়ে যাবে। এছাড়াও তিনি পাহাড় ধ্বংসের আশংকা রয়েছে। অধ্যক্ষ ও আ ম রফিকুল ইসলাম জানান নাইক্ষ্যংছড়ি হাজী এম এ কালাম সরকারি কলেজ মাঠে পানি ঢুকেছে তবে বিপদ মুক্ত।

ঘুুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী রশিদ আহাম্মদ জানান বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের শূণ্যরেখায় আশ্রিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পটি উপর থকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে। তবে প্রতি বছরের মত এবছরও পাহাড় ধ্বংসের আশংকা করছেন তিনি।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোঃ শফিউল্লাহ জানান বন্যা পরিস্থিতি ও উপজেলার সব খবরা খবর তিনি সার্বক্ষনিক রেখেছেন। বন্যা ও পাহাড় ধ্বংসের বিষয়ে উপজেলায় মাইকিং হয়েছে বিপদ জনক স্থান থেকে নিরাপদে সরিয়ে যেতে। এছাড়াও তিনি উপজেলাবাসীকে নিরাপদে থেকে করোনা প্রতিরোধ ও বন্যাপরিস্থিতির জন্য এবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের আহ্বান জানান।

নাইক্ষ্যংছড়ি থানা পুলিশের ইনর্চাজ আনোয়ার হোসেন বলেন উপজেলায় ৫ টি ইউনিয়নে এ পর্যন্ত আল্লাহর রহমতে বড় ধরনের কোন দুর্ঘটনা ঘটে নাই।