আবদুল মালেক সিকদার, রামু:
বৃষ্টি হলেই গ্রামে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। ধর্মপ্রাণ মুসল্লি যেতে পারে না মসজিদে। পানিতে ডুবে যাওয়া গ্রামের রাস্তা পার হয়ে স্থানীয় লোকজন যাচ্ছে হাটবাজারে। চলাচলে চরম দূর্ভোগে পড়েছে অফিসের চর গ্রামের দুই শতাধিক পরিবার।
বুধবার (১৭ জুন) সকাল থেকে কক্সবাজারের রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের অফিসের চর গ্রামে চর পাড়া রাস্তা জলাবদ্ধতা হয়ে পড়ে। এলাকায় পানিপ্রবাহের জন্য কোনো ড্রেনেজব্যবস্থা (নর্দমা) গড়ে ওঠেনি। একটু ভারী বৃষ্টিপাত হলে গ্রামে তীব্র জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। একবার জলাবদ্ধতা দেখা দিলে, পানি সরতে কয়েক দিন সময় নেয়। বর্ষা মৌসুম এলেই স্থানীয় লোকজনের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

অফিসের চর গ্রামের চর পাড়ার বাসিন্দারা জানান, বৃষ্টি হলেই অফিসের চর গ্রামের চর পাড়া এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। গ্রামীণ সড়কের পাশে ড্রেনেজব্যবস্থা না রাখায় দূর্ভোগে পড়েছে, চর পাড়া দুই শতাধিক পরিবার।একটু ভারী বৃষ্টিপাত হলে গ্রামের আভ্যন্তরীণ সড়কে হাটুপানি হয়ে যায়। পানিপ্রবাহের পথ বন্ধ থাকায়, সড়কের উভয় পাশের বাড়িঘরেও জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।

অফিসের চর গ্রামের চর পাড়ার বাসিন্দা আবছার মিয়া,সরুত আলম, ফরিদুল আলম, নুরুল আমিন জানান, মঙ্গলবার রাত থেকে টানা বৃষ্টিতে অফিসের চর গ্রামের চর পাড়া এলাকায় তীব্র জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে এলাকার অধিকাংশ ঘরবাড়িতে পানি উঠে গেছে। পাড়ার সড়কটি তলিয়ে যাওয়ায় মানুষজনকে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। মসজিদগামী ধর্মপ্রাণ মুসল্লী, শিক্ষার্থী, বয়স্ক ও শিশুদের বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এটি নিরসনে চর পাড়া সড়কের পাশে ৫/৬ শত ফুট অংশে একটি ড্রেনেজব্যবস্থা চালু করলে সমস্যার পুরোটাই সমাধান হয়ে যেত।

তারা আরও জানান, অফিসেরচর চরপাড়া জামে মসজিদ থেকে পূর্ব দিকে আবদুল হাকিম সিকদারের বাড়ি পর্যন্ত দুইশত ফুটের বেশি রাস্তা ও মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থান থেকে উত্তর দিকে আজিজ মেম্বারের বাড়ি পর্যন্ত তিন শত ফুট সড়ক জলাবদ্ধতা হয়ে আছে। অনেকের বসতবাড়িতে পানি ঢুকে যাচ্ছে। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে বারবার এ দাবি উত্থাপন করা হয়েছে।

বুধবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, ভারি বর্ষণে অফিসের চর গ্রামের চর পাড়ার প্রায় ৫/৬ শত ফুট রাস্তা হাটুপানিতে ডুবে আছে। টানা কয়েক দিন বৃষ্টি হলে সড়কের জলাবদ্ধ পানি পাড়ার বাড়িঘরেও ঢুকে যাবে বলে জানায় এলাকার বাসিন্দারা। ইতিমধ্যে বেশ কিছু বাড়িঘরের আঙ্গিনায় পানি প্রবেশ করেছে। চর পাড়া এলাকার লোকজনকে হাটুপানি মাড়িয়ে মসজিদ ও হাটবাজারে যেতে হচ্ছে। এলাকার প্রবেশের দুটি রাস্তা অপরিকল্পিত ভাবে সংস্কার করার সময়ে কোন ড্রেনেজ ব্যবস্থা রাখা হয়নি। চর পাড়া এলাকার ভিতরের দু’টো শাখা রাস্তা সংস্কার করা হয়নি। পানিপ্রবাহে কোন ড্রেনেজব্যবস্থাও নেই। বিভিন্ন বাড়ির পঁচানর্দমা রাস্তার ওই জলাবদ্ধতায় মিশে দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পয়োনালার পানিও রাস্তায় চলে আসায় স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।

ওই গ্রামের বাসিন্দা আবছার মিয়া জানান, গত মার্চ মাসে চরপাড়া এলাকার দুইটি প্রবেশ পথ উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে উঁচু করে সংস্কার করা হয়েছে। সড়ক সংস্কারের সময়ে রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্যারকে অনুরোধ করায়, তিনি চরপাড়া এলাকার সমস্যা সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখেন। ইউএনও মহোদয় স্থানীয় বাসিন্দাদের ড্রেনেজ ব্যবস্থা সমাধানের উদ্যোগ নেবার কথা জানিয়েছিলেন গ্রামবাসীকে। তাৎক্ষণিক সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিতে ওই স্থান থেকে সরাসরি মোবাইল ফোনে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের সাথে কথাও বলেন। কিন্তু তিন মাস অতিবাহিত হলেও জলাবদ্ধতার জনদুর্ভোগ নিরসনে কোনো কার্যকর ভূমিকাই দেখা যায়নি।

অফিসের চরের বাসিন্দা সরুত আলম জানান, চরপাড়া এলাকার ভেতরে ড্রেনেজব্যবস্থা নেই, এমনকি পার্শ্ববর্তী মূল সড়কেও নেই। এর ফলে ভারী বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে।

গ্রামের কয়েকজন গৃহিণী জানান, টানা কয়েকদিন বৃষ্টি হলেই বাড়িতে পানি ওঠায় রান্নাঘরও ডুবে যায়। তাই রান্নাবান্না করা যায় না। এ সময়টাতে শুকনা খাবার খেয়ে কোনো রকমে দিন অতিবাহিত করতে হয়।

আলহাজ্ব ফজল আম্বিয়া উচ্চ বিদ্যালের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র মুকিত আল শাকুর ও তার বোন রামু কেন্দ্রীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী মুদ্রিকা শাহরিন ইমরি জানান, বৃষ্টির পানিতে প্রায়ই জলাবদ্ধতা লেগে থাকে। এতে আমাদের চলাফেরা করতে অসুবিধায় পড়তে হয়। জলাবদ্ধতার পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এতে পড়ালেখা করতে ও খাবার খেতে অসুবিধা হয়।
ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফরিদুল আলম জানান, স্থানীয় লোকজনের দুর্ভোগ লাঘবের স্বার্থেই দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেয়া হবে। পরিকল্পনা নিয়ে ওই এলাকায় উন্নয়ন কাজ করা হবে।

রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণয় চাকমা জানান, ড্রেনেজব্যবস্থার অভাবে জলাবদ্ধতা তৈরি হওয়ার বিষয়টি সরেজমিন খোঁজ নিয়েছি। করোনা পরিস্থিতির কারণে কিছুটা বিলম্ব হলেও অফিসের চরে জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।