লাইফস্টাইল ডেস্ক:
আমরা এমন এক পৃথিবীতে বাস করি যেখানে মানুষ এখনও মনে করে যে মানসিক স্বাস্থ্য খুব গুরুতর বিষয় নয়। গতকালই ঘটে যাওয়া বলিউড তারকা সুশান্ত সিং রাজপুতের আত্মহত্যা আরেকবার মনে করিয়ে দিলো, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবার সময় এখনই। শারীরিক স্বাস্থ্যের মতো মানসিক স্বাস্থ্যকেও অগ্রাধিকার দেয়া উচিত। নিজের পাশাপাশি অন্যদেরও এই বিষয়ে সতর্ক ও উৎসাহী করতে হবে।

অনেক সময় আত্মহননকারীর কিছু আচরণে আগেভাগে আঁচ পাওয়া গেলেও, এমন অনেকে আছেন যারা নিজের ভেতরে শেষ হয়ে গেলেও বাইরে তা প্রকাশ করেন না। জীবনে বড় ধরনের কোনো লোকসান, ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্নতা, প্রিয়জনের অবহেলা বা ছেড়ে যাওয়া, ব্যক্তিগত নানা সংকট, একাকিত্ব- এসব কিছু থেকেই আসতে পারে ডিপ্রেশন। সেখান থেকেই পথ খুলে যায় আত্মহত্যার। অনেক সময় কাছের বন্ধু, সহকর্মী বা কোনো সেলিব্রেটির আত্মহত্যাও প্রভাবিত করতে পারে।

ডিপ্রেশন সাধারণ মন খারাপের মতো নয়। তার চেয়েও অনেক কঠিন। এটি দিনের পর দিন খারাপ অভিজ্ঞতার সমন্বিত বহিঃপ্রকাশ। প্রতিদিনের নানা ঘটনায় পাওয়া অবিরাম কষ্টের কারণে জীবনের প্রতি আগ্রহ কমতে থাকে। ডিপ্রেশন সব সময়ই আত্মহত্যার ঝুঁকি বাড়ায়। আশেপাশের মানুষের ভালোবাসা আর মনোযোগই পারে এ থেকে বের করে আনতে। জেনে নিন ডিপ্রেশনের কিছু সাধারণ লক্ষণ-

* জীবনের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি হলো ডিপ্রেশনের প্রথম লক্ষণ। ডিপ্রেশনের শিকার ব্যক্তি বেঁচে থাকাকে নিরর্থক মনে করে, নিজেকে ঘৃণা করতে শুরু করে এবং জীবনে ঘটে যাওয়া সমস্ত ভুলের জন্য দোষী ভাবতে শুরু করে।

* ব্যক্তি হঠাৎ করে যেকোনো কিছু করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এমনকী শখের কাজ বা খেলাধুলা যা সে আগে করতে পছন্দ করতো, কোনোকিছুই আর ভালোলাগে না।

* ডিপ্রেশন হলে শক্তির অভাব বা ক্লান্তি অনুভূত হয়, যার ফলে হতে পারে অতিরিক্ত ঘুম।

* ডিপ্রেশন আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষুধার ধরন বদলে যায়। কেউ কেউ প্রচুর খাবার খান, আবার কেউ কেউ ক্ষুধার্ত বোধই করেন না। এটি তাদের ওজনের উপরও প্রভাব ফেলে।

* তাদের জন্য আবেগ নিয়ন্ত্রণ করাও কঠিন হয়ে পড়ে। কখনো কখনো তারা খুশি থাকেন এবং একটু পরেই আবার রেগে যেতে পারেন।

কীভাবে সাহায্য করবেন:
যদি এই লক্ষণগুলো আপনার কাছের বা আশেপাশের কারো মধ্যে দেখে থাকেন এবং বুঝতে পারেন যে তিনি যেকোনো সময় এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, তবে দ্রুত তার কাছের মানুষদের সঙ্গে কথা বলুন।

যাই হোক না কেন, কেবল তাদের একা রাখবেন না। এই সময়ে তাদের আগের চেয়ে বেশি সমর্থন প্রয়োজন। বিচার না করে, তর্ক না করে বা ধমক না দিয়ে মন দিয়ে তাদের কথা শুনুন। পাশাপাশি তাদের পেশাদার কোনো মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সহায়তা নিতে সাহায্য করুন।

নিজে ডিপ্রেশনের শিকার হলে কী করবেন:
এমন অনেক সময় রয়েছে যখন আমরা সবাই আমাদের ভবিষ্যত নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ি এবং সহজে সমাধানও মেলে না। তবে মনে রাখবেন এর মানেই সবকিছু শেষ নয়, পৃথিবীর সব সমস্যারই কোনো না কোনো সমাধান আছে। সময় সবচেয়ে বড় ওষুধ। এই সময়ই আপনাকে অনেককিছু ভুলিয়ে দেবে।

নিজেকে টিকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে যান। কোনো অবস্থায়ই আত্মঘাতী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন না। যদি মাথায় এরকম চিন্তা আসে তবে আপনার পরিবার বা বন্ধুদের সাথে এই বিষয়ে কথা বলুন। আপনি এর জন্য পেশাদার কারো সহায়তা নিতে পারেন বা কাউন্সেলিং বা থেরাপি সেশনে অংশ নিতে পারেন।