সিবিএন ডেস্ক :

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগে সামুদ্রিক শৈবাল চাষের বর্তমান অবস্থা ও বিপণন ব্যাবস্থার উন্নয়ন সহ ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে একটি কর্মশালা গত ১৪ জুন  অনলাইন জুম প্লাটফর্মে আয়োজিত হয়। উক্ত কর্মশালায় শৈবাল চাষ সম্প্রসারণের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের সুনীল অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় বিষয় আলোচনা করা হয়।

সামুদ্রিক শৈবাল আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি মূল্যবান সামুদ্রিক সম্পদ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তা ব্যাপকভাবে চাষ করা হয়। পৃথিবীব্যাপাী ৪৮ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার চাষকৃত এলাকা থেকে প্রায় ৩০ বিলিয়ন টন সামুদ্রিক শৈবাল উৎপাদিত হয় যার বাজারমূল্য ১১.৭ বিলিয়ন ডলারের চেয়েও বেশি। বাংলাদেশে স্বল্প পরিসরে সামুদ্রিক শৈবাল চাষাবাদ গত দশক থেকে শুরু হলেও তার উৎপাদন ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেই সাথে উপকূলীয় দরিদ্র জনগণের জন্য নতুন এক কর্মক্ষেত্ররূপে প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ক্রমবর্ধমান চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে সামুদ্রিক শৈবাল চাষের সম্ভাবনা ও সম্ভাব্যতা যাচাই এর লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এর ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস এর প্রফেসর ড. মোঃ শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্ব একই ইনস্টিটিউটের প্রফেসর ড. শেখ আফতাব উদ্দিন ও সহকারী অধ্যাপক ড. মোঃ শাহ নেওয়াজ চৌধুরী এবং মার্কেটিং বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আলমগীর এর সমন্বয়ে একটি গবেষণা দল গত ফেব্রুয়ারী ২০২০ থেকে মাঠ পর্যায়ের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা সহ বিভিন্ন গবেষণা কাজে নিয়োজিত রয়েছে। সংগৃহীত তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্ট উপকার ভোক্তা যারা এই সামুদ্রিক শৈবাল চাষ সম্প্রসারণ ও গবেষণায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত তাদের অংশগ্রহণের সমন্বয়ে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের নীতি নির্ধারণে সহযোগীতামূলক তথ্য ও পরামর্শ প্রদান করা ছিল উক্ত অনলাইন কর্মশালার উদ্দেশ্য।

উক্ত ভিডিও কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সহকারী প্রতিনিধি (প্রোগ্রাম) ড. নূর আহমেদ খন্দকার এবং একই প্রতিষ্ঠানের ড. অনীল দাস, ফারাজি বিন্তী, নুসরাত নাবিলা, মাঞ্জুরা খান, কক্সবাজার অফিসের ন্যাশনাল ফিশারিজ কনসালটেন্ট জনাব বিভু ভুষণ মজুমদার ও ফিশারিজ স্পেশালিস্ট শফিক রেহমান। আরো উপস্থিতি ছিলেন ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস এর পরিচালক ড. মোঃ শফিকুল ইসলাম, জাতি সংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সাবেক কনসালটেন্ট ড. আবুল হাসনাত, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একুয়াকালচার বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. এ এম শাহাবুদ্দিন, কক্সবাজার সদরের সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জনাব তারাপদ চৌহান, সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্র – বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুর রহমান ও সিনিয়র সায়েন্টেফিক অফিসার মহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সিনিয়র সায়েন্টেফিক অফিসার এ এস এম শরিফ, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষক ড. সরফুদ্দিন ভুঁইয়া ও ওমর ফারুক মাসুদ, এছাড়াও মাঠ পর্যায়ে সামুদ্রিক শৈবাল নিয়ে কাজ করা এনজিও আইডিএফ এর ফিশারিজ অফিসার মোঃ হাসান, কোস্ট ট্রাস্টের তানজিরা খানম এবং জাহানারা এগ্রো ফার্মের পক্ষে ডাঃ মাহমুদা ইসলাম উক্ত ভিডিও কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।

উক্ত কর্মশালায় বক্তারা বাংলাদেশে সামুদ্রিক শৈবাল চাষের গবেষণা ইতিহাস, বর্তমান চাষ পদ্ধতি, বাজার ব্যাবস্থাপনা, প্রক্রিয়াজাত পণ্য এর উৎপাদন ও বিপণন নিয়ে আলোকপাত করেন। সেই সাথে বর্তমানের প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে এই ক্ষেত্রের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা ও মত বিনিময় হয়। দুর্বল বাজার ব্যাবস্থাপনা ও সামুদ্রিক শৈবাল এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের অসচেতনতার কারনে এই শৈবাল চাষাবাদের উন্নয়ন ব্যহত হয়ে আসছে। বিপণন ব্যবস্থার উন্নয়ন সহ প্রক্রিয়াজাত পণ্য উৎপাদনের পদ্ধতি উদ্ভাবনের মাধ্যমে সামুদ্রিক শৈবাল চাষ সম্প্রসারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেনা উক্ত আলোচনায় গুরুত্ব লাভ করে। উক্ত আলৈাচনায় ড. নূর উদ্যোগতাদের বিভিন্ন সহযোগিতার জন্য সরকার ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান সমূহকে সমন্বিতভাবে কাজ করার ব্যাপারে জোর দেন, এছাড়াও ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস এর সম্মানিত পরিচালক ড. মোঃ শফিকুল ইসলাম চাষ ক্ষেত্র সম্প্রসারণ, পলিকালচার ও সকল গবেষণা প্রতিষ্ঠান সমূহের একত্রে কাজ করার পরামর্শ প্রদান করেন। ড. আবুল হাসনাত বলেন সামুদ্রিক আইনের আওতায় এই শৈবাল চাষকে সংযোজন করা হলে সুনীল অর্থনৈতিক উন্নয়ণে তা আশীর্বাদ রূপে প্রতিষ্ঠিত হবে। ড. মোঃ শাহাদত হোসেন জাতি সংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার নেতৃত্বে সামুদ্রিক শৈবাল চাষাবাদে সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে এই ক্ষেত্রের সার্বিক উন্নয়নের আশাবাদ ব্যক্ত করে অনলাইন কর্মশালাটির সমাপ্তি ঘোষণা করেন।