নুপা আলম :

অদৃশ্য ঘাতক করোনা মহামারিতে মানুষের দূর্ভোগের শেষ নেই। সকল শ্রেণিপেশার মানুষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ। তবে যারা দিনে এনে দিনে খান, এমন শ্রমজীবী মানুষ বর্তমান কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। কর্মহীন এই মানুষের পাশে দাড়িয়েছে বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘ রামু ফুড ব্যাংক’।

সম্প্রতি করোনা জনিত লক ডাউনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দৈনিক আয়ের কর্মহীন মানুষদের জন্য নতুন একটি উদ্যোগটি হাতে নিয়েছে ফুড ব্যাংক। রামুর উত্তর মিঠাছড়ি গ্রাম থেকে শুরু করে রামু ফুড ব্যাংকের মানবিক উদ্যোগ। রামু ফুড ব্যাংকের প্রতিষ্টাতা হলেন এই গ্রামেরই কৃতিসন্তান, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সাবেক সহ সভাপতি, বর্তমান হাইকোর্টের আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ বড়ুয়া। খাদ্য সংকটে পড়া এলাকার কর্মহীন গ্রামীণ মানুষকে খাদ্য যোগানের জন্য তিনি গড়ে তুলেন রামু ফুডব্যাংক। নিজের ব্যক্তিগত উপার্জন থেকে কিছু টাকা আলাদা করে স্থানীয় চাষীদের সাথে নিয়ে গড়ে তুলেন রামু ফুডব্যাংক। এই ফুডব্যাংকের বৈশিষ্ট্য হলো স্থানীয় চাষীরাই তাদের উৎপাদিত ফসলের অতিরিক্ত ফুডব্যাংকের জন্য যার যার গৃহে মজুত রাখবেন। প্রয়োজনের সময় ওই এলাকায় যে সমস্ত পরিবারের খাদ্য সাহায্য দরকার হবে চাষীরাই তাদেরকে তার যোগান দিবেন। বিনিময়ে ফুডব্যাংক চাষীদেরকে স্থানীয় বাজার মূল্যে অপেক্ষা ৫% অতিরিক্ত মূল্য পরিশোধ করবে। কেন্দ্রীয় একটি ডাটা ব্যাংকের মাধ্যমে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে অন্তত ৫০ টি পরিবার ১ বছর পরপর এই খাদ্য সহায়তা পেতে থাকবে। বিশেষত যে সমস্ত পরিবারে স্কুলগামী ছেলে মেয়ে রয়েছে খাদ্য প্রদানের ক্ষেত্রে তারা অগ্রাধিকার পাবে। তবে পরিবার গুলোকে ফুডব্যাংকের অর্থায়নে
কোন না কোন উৎপাদনশীল কার্যক্রমে যুক্ত থাকতে হবে। স্থানীয় চাষীরা যারা উৎপাদন প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকবেন তাদের উৎপাদনকালীন খরচের একটা অংশ ফুডব্যাংক বিনা সুদে প্রদান করবে। বর্ষাকালে যে সমস্ত পরিবারে স্কুলগামী শিশুরা রয়েছে সে সমস্ত পরিবার নিয়মিত খাদ্য যোগানের পাশাপাশি অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ পাবেন। আবার চাষীরা তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য যাতে পান ফুডব্যাংক উৎপাদক ও ভোক্তার মধ্যে যোগাযোগ প্রতিষ্টার ব্যবস্থা করবেন। করোনাকালীন সময়ে শুরু হওয়া ব্যতিক্রমী এই ফুডব্যাংকের
কার্যক্রম ইতিমধ্যে মানুষের প্রশংসা অর্জন করেছে।

গত একমাসে ফুডব্যাংকের আওতায় দুর্গম ঈদগড়ের বৈদ্য পাড়া, রামুর জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়ন, কুলাল পাড়া, হাসপাতাল পাড়া, চাকমারকূল, কক্সবাজার সদরের সিকদার পাড়া, পশ্চিম বড়ুয়া পাড়াসহ ৫ টি ইউনিয়নের ৩০৫ টি পরিবারকে ১৫০০ কেজি চাল, ৩০০ কেজি ডাল, ১০০ কেজি পেয়াজ, ১০০ কেজি রসুন, ৫০ কেজি টমেটো, ১৫০ কেজি আলু, ১০০ কেজি বরবটি, ৫০ কেজি কাচা মরিচ, ৩০০ কেজি বেগুন খাদ্য সাহায্য প্রদান করা হয়েছে। চাকমারকূল অজান্তা বৌদ্ধ বিহারে এবং খরুলিয়ায় “মা‌`আরিফুল কুরআন মাদ্রাসায়” ফুডব্যাংকের পক্ষ থেকে ২০০ কেজি চাল, ২০০ কেজি বিভিন্ন প্রকার সবজি প্রদান করা হয়।

ফুডব্যাংকের এই ধারণা নিয়ে উদ্যোগক্তা সাবেক ছাত্রনেতা ও আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ বড়ুয়া এই প্রতিবেদককে বলেন, “করোনাকালীন দুর্গত মানুষদের জন্য কি করা যায় তা ভাবছিলাম। মনে পড়ল বিগত কয়েকবছর ধরে বর্ষাকালে বন্যার পানিতে স্কুলের টিউবওয়েলগুলি যখন ডুবে যেত শিশুরা সুপেয় পানির অভাবে পড়ত। তখন একদল স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে প্রায় ২৭০০ জন প্রাথমিক শিশুকে ১ মাসের জন্য রুটি, ডিম, কলা ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হয়েছিল। করোনাকালীন সংকটে সেই স্বেচ্ছাসেবকগন এবং স্থানীয় চাষীদের অংশগ্রহণে খাদ্য জোগাড় ও যোগানের একটি সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তুলি। এইভাবেই তৈরি হয়ে যায় রামু ফুডব্যাংক। ভবিষ্যতে স্থানীয় চাষীদের উৎপাদিত পন্য যাতে
শহরের ভোক্তাদের কাছে সরাসরি পৌছে দেয়া যায় সে ব্যাপারেও ফুডব্যাংক কাজ শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে ২০ টি ইউনিয়নের ১০০০ টি পরিবার ফুডব্যাংকের বার্ষিক খাদ্য সহায়তার আওতায় আসবে।”

রামুর ফুডব্যাংকের উদ্যোগক্তা প্রশান্ত ভূষণ বড়ুয়া, রামুরই সন্তান। একসময়ের সুপরিচিত ছাত্রনেতা। জাতীয় পর্যায়ে বির্তাকিক ছিলেন। রামু
খিজারি হাইস্কুল, কক্সবাজার সরকারি কলেজে অধ্যায়ন শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এল এল.বি (অনার্স) ও এল এল. এম সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে লন্ডন ইউনিভার্সিটি বিখ্যাত কুইনমেরী কলেজ থেকে মিডিয়া আইনের উপর বিশেষায়িত মাস্টার্স ডিগ্রী (এল এল.এম) গ্রহণ করেন। যুক্তরাজ্যে শিক্ষকতা ছাড়াও তিনি বিশ্বের আরো অন্তত ১০ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি অতিথি শিক্ষক হিসেবে তিনি নিয়মিত পাঠদান করেছেন। যুক্তরাজ্যে দীর্ঘ ১৫ বছর আইনের শিক্ষক হিসেবে ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অধীনে এল এল. বি এবং এল এল. এম কোর্স পরিচালনা করেন। আন্তর্জাতিক বির্তক বিচারক হিসেবে তিনি প্রায় সমস্ত আন্তর্জাতিক বির্তক প্রতিযোগীতায় গত ১৫ বছর ধরে বিচারকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। মিডিয়া ল মোটিং চ্যাম্পিয়নশীপে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে অনুষ্টিত চ্যাম্পিয়নশিপের প্রতিযোগীতায় তিনি বরাবরই বিচারকের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে পাবলিক স্পিকিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ দানের জন্য তিনি আমন্ত্রিত হন।

১/১১ সময়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টসহ বিভিন্ন বৈশ্বিক প্লাটফর্মে তিনি তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা, আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
মুক্তির জন্য “রিলিজ শেখ হাসিনা ক্যাম্পেইন ” সংগঠিত করেন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পেশাগত বিচরণ কালেও তিনি বরাবরই কক্সবাজারের স্থানীয় মানুষ রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখেন। কক্সবাজার জেলার ছাত্রলীগের নেতা কর্মীদের মাঝে তিনি প্রায় ৩৫০০ কপি বঙ্গবন্ধুর “অসমাপ্ত আত্মজীবনী ” বিতরণ করেন। ২০১১ ও ২০১৬ সালে কক্সবাজার জেলায় ১২৪৫ জন তৃণমূল নেতাকর্মীদের জন্য রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ ও কর্মশালা আয়োজন করেন। এই সমস্ত কর্মশালায় জাতীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের উপাচার্য ও বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিবর্গ অংশগ্রহণ করেন। গত কয়েকবছর ধরে আইন পেশা আবার শুরু করার জন্য প্রশান্ত ভূষণ বড়ুয়া এখন ঢাকাতেই অবস্থান করছেন। চলমান খাদ্য প্রদানের অংশ হিসেবে রামু ফুডব্যাংক ইতিমধ্যে আরো ১০০০ কেজি
চাল, ১০০০ কেজি সবজি, ৫০০ কেজি ডাল, ৫০০ কেজি অন্যান্য সামগ্রী বিতরণের জন্য সংগ্রহ করেছেন। এই বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।