সিবিএন ডেস্ক:
করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনৈতিক ধাক্কা লেগেছে গোটা বিশ্বেই। এতে মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলোতে বাংলাদেশের শ্রমবাজারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। ফলশ্রুতিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিমান সংস্থা, নির্মাণ প্রতিষ্ঠান, হোটেল, রেস্তোরাঁ কিংবা ছোট-বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য কাজের পরিসর সংকুচিত হয়ে আসছে।

কোনো কোনো কোম্পানিতে বেতন নেমে এসেছে অর্ধেকে। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেই মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি থেকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে অসংখ্য কর্মীকে। তাদের কারও কারও ভিসার মেয়াদ শেষ, অন্যরা চাকরি থেকে ছাঁটাই হয়েছেন। ছাঁটাই হওয়াদের তালিকায় রয়েছেন বৈধ ভিসাধারীরা। ফলে অনেকটা নীরবেই দেশে ফিরছেন এসব প্রবাসীরা।

জানা গেছে, এপ্রিলের শুরু থেকেই সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের আটটি দেশ বেকার কর্মীদের ফিরিয়ে নিতে সরকারকে চাপ দিচ্ছে। বাংলাদেশের প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা মধ্যপ্রাচ্য থেকে পাঁচ–সাত লাখ কর্মী ফেরার আশঙ্কা করেন।

এদিকে, করোনায় কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের কাজ বন্ধ থাকায় শ্রমিকদের দীর্ঘমেয়াদি ছুটিতেও দেশে পাঠানো হচ্ছে। এসব শ্রমিক আবার কর্মস্থলে ফিরতে পারবেন কি না তা নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা। করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর আমিরাতের সঙ্গে আকাশ পথে বন্ধ রয়েছে স্বাভাবিক বিমান চলাচল। তবে বেশ কিছু বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করেছে দেশটি। লকডাউন পরবর্তী সময় আবুধাবি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রায় ১২টি বিশেষ ফ্লাইট ফিরেছে ঢাকায়। এসব ফ্লাইটের প্রতিটিতে গড়ে ফিরেছেন ২৫০ জন যাত্রী।

জানা গেছে, স্বাভাবিক বিমান চলাচল শুরু না হওয়া পর্যন্ত এখন থেকে প্রতি সপ্তাহে তিনটি করে বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করবে দেশটি। শুক্রবার (১২ জুন) স্থানীয় সময় রাত ৯টায় দুবাই থেকে বাংলাদেশ বিমানের আরেকটি বিশেষ ফ্লাইট ৩৮০ জন যাত্রী নিয়ে দেশে ফিরেছে। বৃহস্পতিবার (১১ জুন) রাতে আবুধাবি থেকে ইতিহাদ এয়ারওয়েজের একটি বিশেষ ফ্লাইট ঢাকায় ফিরেছে।

ইতিহাদ ফ্লাইটের যাত্রী হাবিবুল ইসলাম জানান, মায়ের অসুস্থতা জানিয়ে দেশে ফিরতে দুবাই কনস্যুলেটে আবেদন করেন তিনি। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দূতাবাস বিশেষ বিবেচনায় তার দেশে ফেরার ব্যবস্থা করে।

কোম্পানি থেকে ছুটি নিলেও ফের কবে দুবাই ফিরতে পারবেন কি না তার নিশ্চয়তা নেই। তবে তাদের সঙ্গে একই ফ্লাইটে একটি কোম্পানি থেকে ছাঁটাই হওয়া প্রায় ১৫০ কর্মী ছিলেন বলেও তিনি জানান।
হাবিবুল ইসলাম বলেন, ‘ওই কোম্পানি শ্রমিকদের গাড়িতে করে বিমানবন্দরে নিয়ে আসে। সেখানেই তাদের বেতন ও পাসপোর্ট প্রদান করে ফ্লাইটে তুলে দেয়া হয়।’

আবুধাবি দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স মিজানুর রহমান বলেন, ‘এখানকার বিভিন্ন কোম্পানি স্থানীয় শ্রম অধিদফতরে অবহিত করেই কর্মী ছাঁটাই বা কর্মীদের দেশে পাঠাচ্ছে। বর্তমানে বিশেষ ফ্লাইটগুলোতে এসব কর্মীর পাশাপাশি জরুরিভিত্তিতে দেশে ফিরতে ইচ্ছুক প্রবাসীদের সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে নারী-শিশু, ভ্রমণ ভিসাধারী, অসুস্থ রোগী ও কর্মহীন প্রবাসীদের সুযোগ দেয়া হচ্ছে।’

মিজানুর রহমান আরও জানান, চলতি মাস থেকে সপ্তাহে তিনটি বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। পূর্বনির্ধারিত তারিখ না থাকায় কোন ফ্লাইট কখন ফিরবে বলা যাচ্ছে না। করোনাকালীন সময় দেশে ফিরেছেন প্রায় আড়াই থেকে ৩ হাজার আমিরাত প্রবাসী।