মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

পুলিশকে ঘুষ নাদিলে কোন কাজ হয়না। এটা অনেকটা স্বাভাবিক প্রবাদবাক্যে পরিনত হয়েছে। যা সাধারণ মানুষের মনেও বদ্ধমূল ধারণা জন্মেছে। যে কারণে বিভিন্ন সময়ে পুলিশ শত চেষ্টা করেও মানুষের মনে স্থান করে নিতে পারেনি। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসজনিত ভয়ংকর পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ পুলিশ শত ঝুঁকি উপেক্ষা করে দেশের সর্বত্র দীর্ঘ গত ৩ মাস ধরে যে সেবা দিয়ে যাচ্ছে, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসা কুড়িয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশ ‘মানবিক পুলিশ’ হিসাবে, নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছে। বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীকে নুতুনরূপে জনবান্ধব ও প্রকৃত সেবামুখী একটি বাহিনী হিসাবে উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছে। দুর্নাম ও অপবাদ কিছুটা হলেও কমাতে পেরেছে। নিজের ও পরিবার পরিজনের কথা মাথায় নারেখে করোনা সংকটে এ সেবা দিতে গিয়ে সরাদেশে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ পুলিশের অনেক সদস্য ডাইনী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। দেশে আক্রান্ত হয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সর্বোচ্চ সংখ্যক সদস্য। যা অন্য কোন বাহিনী বা বিভাগে বা সেক্টরে হয়নি।

কক্সবাজার জেলা পুলিশও করোনার ভয়ংকর এই থাবা থেকে রেহাই পায়নি। করোনা সংকট শুরু হওয়ার পর থেকে কক্সবাজার জেলাবাসীকে গত ৩ মাস ধরে নিরন্তর মানবিক সেবা দিতে গিয়ে ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়েছে কক্সবাজার জেলা পুলিশ। ১১ জুন পর্যন্ত কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন-মোট ৩৪ জন কক্সবাজার জেলা পুলিশের সদস্য। তাদের মধ্যে সর্বপ্রথম গত ১৭ মে করোনা ‘পজিটিভ’ হন পেকুয়া থানার কনস্টেবল এরশাদ। জেলা পুলিশের আক্রান্ত হওয়া সদস্যদের মধ্যে এসআই, সার্জেন্ট ও টিএসআই পদবীর ৬ জন, এএসআই ও এটিএসআই পদবীর ২ জন, কনস্টেবল ২৪ জন, জেলা পুলিশের সিভিল স্টাফ ২ জন। কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোছাইন সিবিএন-কে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি আরো জানান, অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় আক্রান্তদের থেকে ২ জন পুলিশ সদস্যকে ঢাকাস্থ রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে প্রেরণ করে সেখানে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। ৩২ জন পুলিশ সদস্য জেলার বিভিন্ন হাসপাতাল, পুলিশ লাইন ও বাসায় আইসোলেশনে রয়েছেন। একজন পুলিশ সদস্য সুস্থ হয়েছেন। এ পর্যন্ত জেলা পুলিশের ৩৩২ জন সদস্যের স্যাম্পল টেস্ট করা হয়েছে। কোয়ারান্টাইন পালন করছেন ৯১ জন পুলিশ সদস্য। জেলার করোনা আক্রান্ত রোগীর মধ্যে সকলেই পুরুষ পুলিশ সদস্য।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বিপিএম (বার) জানান, ৩৪ জন পুলিশ সদস্য করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পরও কক্সবাজার জেলা পুলিশ নিয়মিত রুটিন দায়িত্বের পাশাপাশি করেনাকালীন নাগরিকদের নিরন্তর বহুমুখী মানবিক সেবা দিয়ে যাচ্ছে। চলমান করোনা যুদ্ধের ফ্রন্ট লাইনের অকুতোভয় বীর সেনানী হিসাবে নিজের জীবনের ও নিজের পরিবারের সদস্যদের ঝুঁকি উপেক্ষা করে প্রতিনিয়ত দায়িত্ব পালন করছেন। খাদ্য ও ত্রান সহায়তা দিয়েছেন নিজস্ব তহবিল থেকে। এসপি এবিএম মাসুদ হোসেন বিপিএম (বার) আরো বলেন, একজন মানুষের সবচেয়ে বড় ভয় হচ্ছে মৃত্যুর ভয়। কিন্তু ভয়াবহ করোনা সংকটে এ মৃত্যুর ভয়কে তুচ্ছ মনে করে কক্সবাজার জেলা পুলিশের প্রতিটি সদস্য করোনা ভাইরাস সংক্রামণ প্রতিরোধে নির্ভিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে ইনশাআল্লাহ।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোছাইন বলেন, জেলা পুলিশের ৩৪ জন সদস্য আক্রান্ত হওয়ার পরও করোনাকালে বহুমুখী মানবিক সেবা মোটেও হ্রাস পায়নি। বরং জেলা পুলিশের প্রতিটি সদস্য পূর্ণ উদ্যমে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, করোনা ভাইরাস সংকটে বহুমুখী মানবিক সেবা দিতে পেরে কক্সবাজার জেলা পুলিশের প্রতিটি সদস্য নিজেদের নিয়ে গর্ববোধ করছে। কারো কোন আক্ষেপ নেই।