সৌরভ শর্মা


আর তিনদিন পর শহুরে জীবনের পাঁচমাস হবে সকালের।কিন্তু এখনো কোনো চাকুরীর দেখা পায়নি । অথচ ঢাকায় আসার সময় অনেক বড় মুখ করে মা- বাবাকে কথা দিয়েছিলো,যে করেই হোক মাসখানেকের মধ্যে চাকরি জোগাড় করে ফেলবে।প্রতিমাসে বাড়িতে টাকা পাঠাবে।তার ভাইবোনদের বন্ধ হওয়া পড়ালেখা আবার শুরু হবে।তাদের অভাব কিছুটা দূর হবে।

কিন্তু ঢাকাশহর আলাদীনের চেরাগের মতো নয়। এখানেই চাইলেই সবকিছু পাওয়া যায় না। পরিচিত কয়েকজন তাকে চাকরির কথা বলে ইতিমধ্যে হাজার বিশেক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।কোনো উপায় না দেখে সে সিদ্ধান্ত নিলো চাকরি না পাওয়া পর্যন্ত আপাতত টিউশনি করবে।

তার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মাধ্যমে সে অবশেষে একটি টিউশনি জোগাড় করলো। মধ্যবিত্ত ফ্যামিলি।বাড়ির কর্তা শহিদুল সাহেব। যিনি একটি ব্যাংকে চাকরি করেন।তার ছেলে নেহাল।সে দশম শ্রেণিতে ছাত্র। তাকে পড়াতে হবে। শহীদুল সাহেবের সাথে কথা হলো, আগামী মাসের এক তারিখ থেকে সে নেহালকে পড়াতে আসবে।

নেহাল খুবই মেধাবী ছাত্র। তাই তাকে পড়াতে সকালের কোনো বেগ পেতে হয়না।নেহালের যে জিনিসটা সকালের খুব ভালো লাগে তা হলো তার ব্যবহার। প্রথম দিকে নেহাল খুব কম কথা বলতো।কিন্তু মাসখানেক হতেই সে সকালের সাথে খুব স্বাভাবিক হয়ে গেলো।

তবে একটা সময় নেহালকে খুব বিরক্ত দেখায়। যখন মাঝেমধ্যে বাড়ির ভিতর থেকে মাউথ অর্গানের অাওয়াজ ভেসে আসে। আওয়াজ অাসার সাথে সাথে সে দাঁড়িয়ে পড়ে। আর ভ্রু কুঁচকে বলে,স্যার,আমি একটু আসছি। তারপর একটু পরেই মাউথ অর্গানের শব্দ বন্ধ হয়ে যায়।
কেউ ফুপিয়ে ফুপিয়ে কিছুক্ষণ কাঁদে। তারপর মিনিট পাঁচেক পর সব বন্ধ। পরিবেশ আগের মতোই স্বাভাবিক।

সকাল নেহালকে অনেকবার জিজ্ঞেস করে,ভিতরে কি হচ্ছিলো?
নেহাল বরাবরই প্রশ্নটা এড়িয়ে গিয়ে বলে,কিছুনা স্যার।
অজানা কোনো কিছুর প্রতি মানুষের আকাঙ্খা প্রবল।সকাল অনেকবার এই ঘটনাটি এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেছে। কিন্তু পারেনা। তার কৌতুহল প্রতিনিয়ত বেড়েই চলে।

একদিন বাজারে সকালের সাথে শহীদুল সাহেবের দেখা। বাড়িতে তাদের দেখাই হয়না। সকাল যখন পড়াতে যায় শহীদুল সাহেব তখন থাকেন অফিসে। শহীদুল সাহেব তাকে চা পানের জন্য অনুরোধ করলেন। চা পানের ফাঁকে তিনি নেহালের পড়াশোনার বিষয়ে জানতে চাইলো। সকাল উত্তর দিলো,সে খুব ভালো ছাত্র। খুব ভালো মত এগোচ্ছে সব।

সকালের মনে একটি প্রশ্ন বার বার উঁকি দিচ্ছিলো।সে ভাবে প্রশ্নটা করা যৌক্তিক হবে কি না।অবশেষে সে করেই ফেললো।

-আচ্ছা,প্রায় সময় শোনা যায় আপনার বাড়ির ভেতর থেকে কে জানি খুব সুন্দর করে মাউথঅর্গান বাজায়।কে বাজায়?

-ও আচ্ছা। ও তো আমার বড় ছেলে।

– আপনার বড় ছেলে! আর উনাকে কোনোদিন দেখলামই না।

-দেখবেন কীভাবে?ও তো জন্ম থেকেই হাঁটতেও পারেনা,কথা বলতেও পারেনা। তাই দেখেননি।

-ও আচ্ছা।

শহীদুল সাহেবের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সকাল বাসার দিকে হাঁটা শুরু করলো।আর মনে মনে ভাবতে লাগলো,হে আল্লাহ, আপনি আমাকে সুস্হ সবল মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন সেজন্য আপনার দরবারে হাজার হাজার শুকরিয়া।কেউ পৃথিবীতে জন্ম নিলো অথচ তাদের কোনোদিন পৃথিবী দেখার সৌভাগ্যই হলোনা। তাদের তুলনায় আমি অনেক ভাগ্যবান।

 


সৌরভ শর্মা ,কক্সবাজার।