নিজস্ব প্রতিবেদক:

করোনার কারণে যেখানে বেসরকারি ও দাতব্য অন্যান্য হাসপাতাল, ক্লিনিকগুলো নিজেদের গুটিয়ে নেয়া ও স্বাস্থ্য সেবা সংকুচিত করে দিয়েছে সেখানে ব্যতিক্রমী অবস্থানে রয়েছে হোপ ফাউন্ডেশন পরিচালিত হোপ হসপিটাল। কক্সবাজার শহরের অদূরে রামুর চেইন্দায় অবস্থিত এই দাতব্য হাসপাতালটি করোনার তীব্র প্রকোপের মধ্যেও চরম ঝুঁকি নিয়ে নিরবিচ্ছিন্ন স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে।

অন্যান্য বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকগুলোর সেবা কার্যক্রম সংকুচিত হওয়ায় সরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে চাপ বৃদ্ধি ও করোনা ঝুঁকি বেশ বেড়েছে। এ কারণে হোপ হসপিটালের দিকে ঝুঁকে পড়েছে রোগীরা। তারপরও ঝুঁকি নিয়ে বাড়তি রোগিদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে রাতদিন। সেবা দিতে গিয়ে ইতিমধ্যে এই হাসপাতালের এক সিনিয়র চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। করোনা আক্রান্ত এক গর্ভবতী রোগীর চিকিৎসা দিয়েই তিনি করোনা আক্রান্ত হয়েছেন।

তথ্য মতে, দীর্ঘদিন ধরে স্বল্প ও বিনামূল্যে সব ধরণের রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে রামু চেইন্দায় অবস্থিত হোপ হাসপাতাল। তবে নারী ও শিশুদের সেবার অগ্রাধিকার ছিলো। বিশেষত গর্ভবতী নারীদের গর্ভধারণ থেকে প্রসব পরবর্তী পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্ন সেবা দেয়া হয়। এসব সেবাপ্রার্থীদের অধিকাংশই নিম্ন ও মধ্যবিত্ত। তাই অনেককে বিনামূল্যে সেবা দেয়া হয়।
হোপ ফাউন্ডেশনের কো-অর্ডিনেটর রাকিবুল হক জানান, করোনা সংক্রমণ শুরুর পর অন্যান্য চিকিৎসা সেবার প্রতিষ্ঠানগুলোতে সেবা কার্যক্রম সংকুচিত হওয়ায় হোপ হসপিটালে রোগীর চাপ বেড়ে যায়। চরম ঝুঁকি সত্ত্বেও হোপ হসপিটালে বাড়তি রোগীদেরও করোনার শুরু থেকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। রোগী বেড়ে যাওয়ার কারণে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে এই হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্স এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবুুও সেবা কার্যক্রম সমানভাবে চলছে।

তিনি জানান, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে সেবা না পাওয়া ও নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকায় সেখানে যেতে ভয় পাচ্ছে রোগীরা। সে কারণে হোপ হাসপাতালে চলে আসছে সবাই। রামুর বিভিন্ন এলাকা, কক্সবাজার শহর ও সদর এবং উখিয়া থেকেও চিকিৎসা নিতে হোপ হাসপাতালে আসছে রোগীরা। বিশেষ করে এসব এলাকার অধিকাংশ নারী গর্ভকালীন, সন্তান প্রসব ও প্রসব পরবর্তী চিকিৎসা নিতে ভীড় আসছে। একারণে হাসপাতালে রোগী ভিড় লেগেই আছে। করোনা ঝুঁকি ও বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা সত্তে¡ও সব রোগীদের নিরবিচ্ছন্ন চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে।

এভাবে এক প্রসবজনিত রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে তার সংস্পর্শ হয়ে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এই সার্জারি বিভাগের এক সিনিয়র চিকিৎসক। বর্তমানে তিনি আইসোলেশনে রয়েছেন।

হোপ ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর কেএম জাহিদুজ্জামান বলেন, ‘করোনা ভয়ে অন্যান্য অনেক হাসপাতাল-ক্লিনিক সেবা কার্যক্রম সংকুচিত করে নিয়েছে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে আমরা ব্যতিক্রম অবস্থান নিয়েছি। আমরা উল্টো সেবা আরো বাড়িয়ে দিয়েছি। কেননা হোপ ফাউন্ডেশন মানবতার জন্যই দাতব্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে আসছে।’

তিনি বলেন, ‘করোনার তীব্র ঝুঁকি সত্তে¡ও আমরা সেবা কার্যক্রম আরো বাড়িয়ে দিয়েছি। রোগী বাড়লেও কাউকে যেন হোপ হসপিটাল থেকে সেবা না পেয়ে ফেরত যেতে না হয় সে জন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি। রাতদিন ২৪ ঘন্টাই এই সেবা অব্যাহত রয়েছে। এতে হাসপাতালের চিকিৎসক, নাসসহ অন্যান্যদের চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। তবুও আমরা সেবা দিয়েই যাবো। একইভাবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হোপ ফিল্ড হসপিটাল ও জেলার বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত হোপ বার্থসেন্টার ও মেডিকেল সেন্টাগুলোতেও সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।’

উল্লেখ্য, ২০০০ সালে কক্সবাজারের কৃতিসন্তান আমেরিকা প্রবাসী ডা. ইফতিখার মাহমুদ হোপ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। এই ফাউন্ডেশনের পরিচালনায় ক্ষুদ্র পরিসর থেকে শুরু করা হোপ হসপিটাল আজ বিশাল হাসপাতালে পরিণত হয়েছে। রামু চেইন্দায় অবস্থিত হোপ হসপিটালে নারী ও শিশুদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও অন্যান্য লোকজনকেও স্বল্প ও বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে।