নাসির উদ্দিন


মোহাম্মদ নাজেম উদ্দিন, পিতা-মরহুম মোঃ ইসহাক, পূর্ব বড় ভেওলা, চকরিয়া, কক্সবাজার। বাবা-মা’র বড় ছেলে। তার ছোট দুই ভাই তিন বোন। সবে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে অনার্সে ভর্তি হলেন। এসময় প্রথম স্বপ্ন ভঙ্গ হল তার। হঠাৎ করে মারা গেলেন বাবা। পরিবারের দায়িত্ব এসে পড়ল কাঁধে। অনার্স পড়া হল না। ভর্তি হলেন হাজি মোহাম্মদ মোহসিন কলেসে বিএসসি (পাস কোর্স) তে।
বিএসসি পাশ করার পর উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন কবর দিয়ে সংসারের প্রয়োজনে প্রথমে শাহারবিল সিনিয়র মাদ্রাসায় যোগদান করেন। অল্পদিন পরেই আলিকদম উপজেলার তৎকালিন চেয়ারম্যান জনাব আবু জাফর সাহেবের পরামর্শে আলিকদম উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক পদে যোগদান করেন। প্রধান শিক্ষক ছিলেন মরহুম জনাব কামাল উদ্দিন। ১৯৮৯ সালে স্কুলটি জাতীয়করণ করা হলে শুরু হয় সরকারি চাকুরি জীবন। সেখান থেকে ১৯৯৫ সালে বদলি হয়ে কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। পরবর্তিতে কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে বদলি করা হয় তাকে। পরে আবার কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বওদ্যালয়ে, এরপর ২০০৯ সালে বদলি হন মহেশখালি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে প্রায় আট বছর অত্যন্ত সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেন এবং স্কুলের পরিবেশ ও লেখাপড়া, পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলে অসামান্য সফলতা আনেন। ২০১৭ সালে পদোন্নতি পেয়ে কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে সহহকারি প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ২০১৮ সালের ২১ অক্টোবর কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ২০১৯ সালের ২৪ এপ্রিল সরকারি চাকুরি হতে অবসর ( PRL) গ্রহন করেন। তিনি একজন সফল ও জনপ্রিয় শিক্ষক ছিলেন। অত্যন্ত সৎ, বিণয়ী ও সরল জীবন যাপন করতেন তিনি।
আজ হঠাৎ করেই নিভে গেল এ জ্ঞান প্রদীপ। আমার সাথে অতীব ঘনিষ্ঠতার সুবাদে আমি প্রায়ই ফোন করে খবরাখবর নিতাম তার। গত ০৫ জুন সকালে অফিসে বসে রিং দিলাম।
সালাম দিয়ে বললাম, কেমন আছেন?
বললেন, আমি খুব অসুস্থ।
কেন, কী হয়েছে?
গত ৪/৫ দিন যাবৎ খুব জ্বর, শরীর অসম্ভব দূর্বল। ওয়াশ রুমে গেলে বাইরে এসে দাঁড়াতে পর্যন্ত পারি না।
গলা ব্যথা?
নেই
শ্বাস কষ্ট?
নেই
শুকনো কাশি?
আছে
খাওয়ার রুচি?
মোটামুটি আছে।
সন্দেহ হলেও মনে হচ্ছিল না করোনা সংক্রমন হয়েছে।
প্রতিরোধমুলক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিলাম। পরদিন সহকর্মি মোক্তার আহমদ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিলেন।
০৬ তারিখ মোট চারবার কথা বললাম। ঔষধ খাচ্ছেন, জ্বর আসেনি।
০৭ তারিখ সকালে কথা বলে দমে গেলাম। বললেন,
আবার খুব জ্বর হয়েছে, কিছু খেতে পারছেন না এবং শারীরিক দূর্বলতা আরও বেড়ে গেছে। এবার সন্দেহ হলো। দূ,’জনে একমত হলাম। করোনা টেস্ট করাতে হবে। ডাঃ মহিউদ্দিন আলমগীরের সাথে আলাপ করে ঠিক করলাম ০৮ জুন (অাজ) সকাল আটটায় নমুনা দেবেন সদর হাসপাতালে। সকাল দশটায় খবর নিতে গিয়ে মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। জানতে পারলাম তাকে হাসপাতালে অক্সিজেন দেয়া হয়েছে। কারণ অক্সিজেন লেবেল যেখানে ৯৩–৯৯ থাকার কথা সেখানে তার আছে মাত্র ৬০। হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার জন্য যে বিশেষ অক্সিজেন এবং যন্ত্র দরকার সেটি নেই বিধায় ডাক্তার তাকে চট্টগ্রাম নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানানো হল। ডাঃ আলমগীর বললেন, তার যে অবস্থা তাতে কোথাও মোভ করানো ঝুঁকিপূর্ণ হবে। তিনি সার্বক্ষণিক নজর রাখছিলেন। দুপুরে তার অক্সিজেন লেবেল ৮০ এর কাছাকাছি উন্নীত হলে আশাবাদি হলাম এবং চট্টগ্রাম নেয়ার ব্যবস্থাও করছিলাম। কিন্তু চট্টগ্রামের অঅবস্থাতো জানেন। কোন সীট নেই আইসিইউ কিংবা আইসোলেশনে। অগত্যা অপেক্ষা করতে লাগলাম। বিকেল ৩ঃ৩০টায় ওনার অসুস্থতার খবর প্রথম ফেসবুকে দিলাম। ৩ঃ৪৫ টায় জানানো হলো অক্সিজেন লেবেল দ্রুত নেমে যাচ্ছে। তখন ৭০ এর নীচে। ০৪টায় বলা হল ৪৫। আল্লাহর কাছে সপরিবারে বিলাপ করে কেঁদেছি। হায়! ৪ঃ১৫টায় সব শেষ। নিভে গেলো প্রদীপ। আঁধার গ্রাস করলো চারপাশ।
নাজেম ভাই নেই
প্রিয় বন্ধু
দীর্ঘদিনের সহকর্মি
প্রায় ২০ বছরের সুখ-দূঃখের সাথি
চলে গেছে দূরে বহু দূরে
জানি না কোন অভিমানে।
(আল্লাহ, তাকে গ্রহন করো, ক্ষমা করো)


নাসির উদ্দিন ,প্রধান শিক্ষক ,কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। (ফেসবুক থেকে)