শাহেদ মিজান, সিবিএন:

কক্সবাজারে করোনা আক্রান্ত হয়ে একে একে মারা যাচ্ছে সুপরিচিতি মানুষগুলো। ইতিমধ্যে কক্সবাজারে ২৬জন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। সব মৃত্যুর ঘটনা বেদনা-বিধুর। তবে এর মধ্যে কিছু মানুষের মৃত্যু একেবারে মেনে নেয়ার মতো নয়। যার সর্বশেষ উদাহরণ কক্সবাজারের সুপরিচিত শিক্ষক নাজিম উদ্দীন। তিনি আজ সোমবার বিকালের করোনার উপসর্গ শ্বাসকষ্ট নিয়ে মারা গেছেন। তার মৃত্যুতে শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছে তার অগণিত ছাত্র, সহকর্মী, শুভাকাঙ্খীসহ কক্সবাজারের সর্বস্তরের মানুষ।

একইভাবে করোনার কাছে হার মেনে আরো কিছু মানুষ পরপারে পাড়িয়ে জমিয়েছেন যাদেরও ভুলতে পারছেন না মানুষ। শহরের বাহারছড়ার আবু সায়েম ডালিম, কক্সবাজারের সিনিয়র সাংবাদিক আবদুল মোনায়েম খান, ধনাঢ্য ব্যবসায়ী নাগু কোম্পানি এবং সংবাদপত্রসেবী শাকের উল্লাহসহ শহরের পরিচিত মানুষগুলো করোনার থাবায় চলে গেছেন পরপারে। এসব মানুষগুলোর মৃত্যু শহরবাসীকে কাঁদিয়ে যাচ্ছে।

কক্সবাজারের সুপরিচিত ব্যক্তি পর্যটন শহরের বাহারছড়ার আবু সায়েম ডালিম। যিনি মৃত্যুর তিন দিন আগে নিজে সব কিছু গুছিয়ে হেঁটেই গাড়িতে উঠে গিয়েছিলেন উখিয়ার করোনার আইসোলেশন সেন্টারে। কিন্তু মাত্র দুইদিনের মাথায় পৃথিবীকে নাই হয়ে গেলেন তিনি! শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে ৫ জুন বিকালে তাকে চট্টগ্রাম নিয়ে যাওয়ার জন্য সবকিছু গুছানোর। কিন্তু এর মধ্যেই মৃত্যুর কাছে হেরে যান ডালিম। ডালিমের মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে যেন থমকে গিয়েছিলো কক্সবাজার শহর! তার মৃত্যুতে কক্সবাজারের মানুষ যে কষ্ট পেয়েছেন তা অবর্ণনীয়। কারণ ডালিম ছিলেন একজন সজ্জন, বন্ধুবৎসল ও অতিথিপরায়ণ সহজ-সরল মানুষ। কক্সবাজারের সব স্তরের মানুষের সাথে একটা গভীর সম্পর্ক ছিলো। তাই তার মৃত্যুতে শুধু তার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন নয়; সাধারণ মানুষও কষ্ট পেয়েছে।

করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া আরেক মানুষ কক্সবাজারের সিনিয়র সাংবাদিক আবদুল মোনায়েম খান। যিনি ছিলেন, সজ্জন, সৎ, নিরীহ, সহজ-সরল এবং অমায়িকতাসহ অনেক মানবিক গুণের অধিকারী একজন মানুষ। করোনা সাথে প্রায় ১০ দিনের বেশি লড়াই করে হেরে গেছেন। গত ৬জুন চট্টগ্রামে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। চিকিৎসা নিয়ে মৃত্যু দুইদিন আগে তিনি প্রায় সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। মোবাইল ফোনে অনেকের সাথে স্বাভাবিকভাকে কথাও বলেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে গিয়ে করোনা কাছে মেনে পাড়ি জমান পরপারে। তার একমাত্র পুত্র সন্তানও একসাথে করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। তার মৃত্যুতে কক্সবাজারের সাংবাদিক অঙ্গনসহ সর্বমহলে শোকের ছায়া নেমে আসে। আবদুল মোনায়েম খানও কক্সবাজার শহরের একজন সুপরিচিত ব্যক্তি। তিনি ছিলেন একজন বড়মাপের গুণী সাংবাদিক। কাজ করেছেন ডেইলি স্টারসহ, ডেইলি সানসহ সব নামকরা পত্রিকায়। তাঁর অসাধারণ ব্যক্তিত্বের কারণে তিনি সকলের প্রিয় ছিলেন। তার মৃত্যুও শহরের সর্বমহলকে একটি বড় ধাক্কা দিয়ে গেছে!

করোনার কাছে হার মানা আরেক জাঁদরেল মানুষ নাগু কোম্পানি। যার হোটেল সুগন্ধার নামে হয়েছে কক্সবাজার সমুদ্র সবচেয়ে বড় ‘সুগন্ধা পয়েন্টে’র নামকরণ হয়েছে। তিনি ছিলেন ধনাঢ্য ও বড়মাপের ব্যবসায়ী। ব্যক্তিগত জীবনে তিনিও ছিলেন অত্যন্ত সহজ-সরল ও অমায়িক। আক্রান্ত হয়েই তিনি করোনার কাছে হার মেনে যান। তাঁর আকস্মিক মৃত্যুতে কক্সবাজারের সর্বমহলে মনে একটি বড় আঘাত লাগে।

করোনা উপসর্গ নিয়ে গত ৭জুন রাতে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে মারা যান সংবাদপত্রসেবী শাকের উল্লাহ। দীর্ঘদিন তিনি জেলার বিভিন্ন পত্রিকায় ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেছেন। সে সুবাধে সবার মাঝে তাঁর একটা ব্যাপক পরিচিত রয়েছে। তিনি ব্যক্তিগত জীবনেও বেশ সহজ-সরল ও অমায়িক ছিলেন। ছিলেন একজন ধার্মিক মানুষ। তার মৃত্যুটাও মেনে নেয়ার মতো নয়।
এছাড়াও রামু গর্জনিয়ার আয়াছ সিকদার ও শহরের তরুণ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ করিমের মৃত্যুসহ সব করোনা আক্রান্ত মানুষগুলোর মৃত্যু শহরবাসীকে কাঁদাচ্ছে।

আক্রান্ত এবং উপসর্গ নিয়ে মারা এসব ব্যক্তিদের অধিকাংশই আইসিও ও অক্সিজেনের অভাবে মারা গেছেন। কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ১০ শয্যার চালু হলেও তা কার্যকর নেই। নেই অক্সিজেন সরবরাহ। এতে মারা যাচ্ছে অনেকে। এই নিয়ে অভিযোগ ও ক্ষোভের শেষ নেই।

তথ্য মতে, প্রথম দিকে কক্সবাজারে করোনা প্রকোপ তেমন না থাকলেও গত একমাস ধরে আক্রান্ত বেশ বেড়ে গেছে। সারাদেশে আক্রান্তের দিকে কক্সবাজার অবস্থান এখন ৬ষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে।

জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, জেলা প্রশাসনের ৮ জুনের আপডেট তথ্য মতে, কক্সবাজার জেলায় মোট করোনা আক্রান্ত রোগির সংখ্যা ১০০৬ জন। মারা গেছে ২৬ জন। এছাড়াও উপসর্গ নিয়েও আরো কয়েকজন মারা গেছেন।