সিবিএন ডেস্ক:
করোনাভাইরাস সংক্রমণে মৃত্যুর মিছিল থামবে কবে? অদৃশ্য এ ভাইরাসের ভয়াল থাবায় প্রতিদিনই মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। দেশের মন্ত্রী, সাংসদ, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, চাকরিজীবী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণও করছেন অনেকে।

গত এক মাসের ব্যবধানে করোনাভাইরাস আক্রান্ত ও মৃত্যুবরণকারী রোগীর সংখ্যা চার গুণেরও বেশি বেড়েছে। সবার মনে একটাই প্রশ্ন এ সংক্রমণ ও মৃত্যুর মিছিল কবে থামবে? আপাতত এ প্রশ্নের উত্তর কারো জানা নেই।

এক মাস আগে অর্থাৎ ৭ মে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে ৫ হাজার ৮৬৭টি নমুনা পরীক্ষা করে ৭০৬ জন আক্রান্ত এবং ১৩ জনের মৃত্যুর কথা বলা হয়েছিল। ওই দিন মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৯৯ জনে।

এক মাস পর আজ ৭ জুন স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ১৩ হাজার ১৩৬টি নমুনা পরীক্ষা করে ২ হাজার ৭৪৩ জনের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানানো হয়েছে। এদিন সর্বোচ্চ ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।

ফলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত দেশে এখন মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৮৮ জনে। এক মাসের ব্যবধানে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় চার গুণ এবং এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা চার গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুঝুঁকির সর্বোচ্চ তালিকা রয়েছে রাজধানী ঢাকা তথা ঢাকা বিভাগ এবং চট্টগ্রাম বিভাগ। মোট মৃত্যুর ৮৬ শতাংশই হয়েছে ঢাকা শহর তথা ঢাকা বিভাগ এবং চট্টগ্রাম বিভাগে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে ৮৮৮ জনের মধ্যে হয়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক ২৬৬ জনের (২৯ দশমিক ৯৫৪ শতাংশ) মৃত্যু হয়েছে রাজধানী ঢাকায়। এছাড়া ঢাকা বিভাগে ২৬০ জন (২৯ দশমিক ২৭৯) এবং চট্টগ্রাম বিভাগে ২৩৭ জনের (২৬ দশমিক ৬৮৯) জনের মৃত্যু হয়েছে।

অন্যান্য বিভাগে অবশিষ্ট ১৪ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগে রয়েছেন ১৮ জন, রাজশাহী বিভাগে ১৭ জন, রংপুর বিভাগে ২৩ জন, খুলনা বিভাগে ১৪ জন, বরিশাল বিভাগে ১৯ জন এবং সিলেট বিভাগে ৩৪ জন।

গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হয়। আজ ৭ জুন পর্যন্ত করোনাভাইরাস শনাক্ত করতে ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে সর্বমোট ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৯৮৭ জনের। তাদের মধ্যে শনাক্তকৃত মোট রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৫ হাজার ৭৬৯ জন।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত অধিকাংশ রোগীই সাধারণ চিকিৎসায়ই সুস্থ হয়ে উঠছেন। কিন্তু ৫ থেকে ১০ শতাংশ রোগীর শ্বাসকষ্টের জন্য অক্সিজেন সাপোর্টসহ ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। অন্যথায় রোগে মৃত্যুবরণ করেন।

বর্তমানে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য সারাদেশের হাসপাতালে আইসোলেশন শয্যা রয়েছে মাত্র ১৩ হাজার ৯৮৪টি। মুমূর্ষু রোগীদের জন্য আইসিইউ বেড রয়েছে মাত্র ৩৯৯টি। কিডনি ডায়ালাইসিস বেড রয়েছে ১০৬টি।

যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের সিংহভাগই পঞ্চাশোর্ধ বয়সের মানুষ।

এ ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা পারতপক্ষে ঘরের বাইরে না বের হওয়া এবং প্রয়োজনে ঘরের বাইরে গেলে অবশ্যই মুখে মাস্ক পরে, কমপক্ষে ৩ ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা করা এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা সাবান দিয়ে ঘন ঘন হাত ধোয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের বিস্তার ঠেকাতে গত ২৪ মার্চ থেকে সরকারি নির্দেশে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে দুই মাসেরও বেশি সময় সাধারণ ছুটি ছিল। এ সময় স্থল ,নৌ, রেল ও আকাশপথ যোগাযোগ বন্ধ ছিল। মার্কেট শপিংমল বন্ধ থাকে। দুই মাসের সাধারণ ছুটি ও ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছু বন্ধ থাকায় অর্থনীতির উপর চাপ পড়ে। জীবন ও জীবিকার তাগিদে সরকার গত ১ জুন থেকে সব কিছু খুলে দেয়।

সংক্রমণ হু হু করে বাড়ছে প্রতিবেশী দেশ ভারতেও। সর্বোচ্চ আক্রান্ত দেশের তালিকায় ভারত এখন পাঁচ নম্বরে। শনিবার দেশটি ছাড়িয়ে গেছে স্পেনকেও। যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্যমতে, ভারতে এ পর্যন্ত মোট করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬২২ জন। স্পেনে আক্রান্ত ২ লাখ ৪১ হাজার ৩১০ জন। আক্রান্তের হিসাবে এখন ভারতের ওপরে রয়েছে শুধু যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, রাশিয়া ও যুক্তরাজ্য। সংক্রমণ হু হু করে বাড়লেও কিছুটা আশার কথা, তালিকার অনেক দেশের তুলনায় ভারতে মৃত্যুহার কিছুটা কম। যেমন- ইতালিতে মারা গেছেন ৩৩ হাজারের বেশি, স্পেনে ২৭ হাজার, ব্রাজিলে ২৫ হাজার, যুক্তরাজ্যে ৪০ হাজার আর যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর ঘটনা এক লাখেরও বেশি। সেই তুলনায় ভারতে এ পর্যন্ত মারা গেছেন সাড়ে ছয় হাজারের মতো। এর মধ্যে শনিবার প্রাণ হারিয়েছেন ২৯৪ জন। এদিকে শুরুর ধকল কাটিয়ে এখন তুলনামূলক স্বস্তিতে রয়েছে ইউরোপের দেশগুলো। তবে বাংলাদেশ ও ভারতে করোনা সংক্রমণের পর দীর্ঘ সময় চলে গেলেও আক্রান্তের সংখ্যা এখনও কমতির দিকে যাচ্ছে না।