ইমাম খাইর


শুক্রবার (৫ জুন) বিকাল ০৪.৩২ মিনিট। মোবাইলে কলরেকর্ড হয়ে আছে।
তাও মাত্র ৫৬ সেকেন্ড! হিসেবের খাতায় খুব কম সময়। ১ মিনিটও না।
কথা বলেছিলাম প্রিয় মোনায়েম ভাইয়ের ০১৮৩৪৪১৮৩৭৮ নাম্বারে।
তবে, আমার বিশ্লেষণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা। হঠাৎ জবান শুনে খুশি হয়েছিলাম। জানতাম না এটিই হবে মোনায়েম ভাইয়ের সাথে আমার শেষ আলাপন।
তখন তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেলে। শ্বাস নিতে পারছেন; সংকট অনেকটা কেটে গেছে, জানিয়েছিলেন মোনায়েম ভাই।
কথার শেষান্তে আমার মাধ্যমে সবার কাছে দোয়া চেয়েছিলেন।
আমিও আপডেট সংবাদ জানিয়েছিলাম সহকর্মীদের। যতটুকু সম্ভব খোঁজখবর রেখেছি। ফলোআপ নিয়েছি। যোগাযোগ রাখতাম মোনায়েম ভাইয়ের শ্যালক জয়নাল ভাইয়ের সাথে।
আশান্বিত ছিলাম, প্রিয় ভাইটি দ্রুত সুস্থ হবেন। আমাদের মাঝে আগের মতো ফিরে আসবেন।
মাঝখানে শনিবার একটা দিন গেল।
হঠাৎ দুঃসংবাদ…
মানে…
সবার প্রিয় মানুষটি না ফেরার দেশে!!!
বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। মনটা ভেঙে গেছে। চোখেমুখে শোক আর শোক।
এর আগে ৩১ মে সন্ধ্যা ০৭ টা ৩৫ মিনিটে মোনায়েম ভাইয়ের সাথে মুঠোফোনে কথা হয় ১ মিনিট ৫৬ সেকেন্ড। ওই দিন তার করোনা শনাক্ত হয়েছিল। বিষয়টি নিশ্চিত হতে ফোন দিয়েছিলাম। জানতে চেয়েছিলাম, নিউজ করব কিনা? উত্তরে বলেছিলেন, ‘করেন। সবাইকে দোয়া করতে বলবেন।’
মৃত্যুর সংবাদের পর মোবাইলের কলরেকর্ড ঘেটে দেখলাম, দুইদিনের ফোনকলের স্থায়ীত্ব কাকতালীয়ভাবে মিলে গেছে। ৩১ মে কথা বলেছি ০১ মিনিট ৫৬ সেকেন্ড। ৫ জুন বললাম মাত্র ৫৬ সেকেন্ড। দুইদিনের কথোপকথনের সময়ে ৫৬ সেকেন্ডে মিল। ব্যবধান ১ মিনিট। আসলে জীবনটাই এভাবে মিনিট-সেকেন্ডে ভাগ হয়ে আছে। কার আগে কে মরে, অজানা।
করোনার সাথে দুই সপ্তাহ লড়াই করে সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে ওপারে চলে গেলেন আমাদের মোনায়েম ভাই।

আবদুল মোনায়েম খান দ্য ডেইলি ফিনেন্সিয়াল এক্সপ্রেস পত্রিকার কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি ছিলেন। ডেইলি সান, ডেইলি স্টার, নিউ নেশন পত্রিকায় কাজ করেন। অনেক দিন স্থানীয় পত্রিকার সম্পাদনা করেন। বাংলাদেশ বেতারে তালিকাভুক্ত ছিলেন আবদুল মোনায়েম খান। দৈনিক কালের কণ্ঠের বিজ্ঞাপন প্রতিনিধিও ছিলেন অনেক দিন। তার মাঝে এমন গুন ছিল যা অনেকের মাঝে নেই। শতভাগ ভদ্র, অমায়িক, এক সাদাসিধে মানুষ ছিলেন। জীবনে দেখিনি গর্ব, অহংকার। কথা বলতেন নরম গলায়। পথ চলতেন আস্তে পায়ে। হাঁটতেন বেশি, চড়তেন কম। এই সমাজে মোনায়েম ভাইয়ের মতো মানুষ মেলে না।
তিনি কক্সবাজার শহরের তারাবনিয়ারছরা কবরস্থান রোডের মরহুম কানুনগো বদিউল আলমের জ্যেষ্ঠ ছেলে।
আল্লাহ প্রিয় ভাইকে জান্নাতের মেহমান বানিয়ে নিক। আমিন।

সাংবাদিক আবদুল মোনায়েম খান রবিবার (৭ জুন) বেলা আড়াইটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করেন।

গত ৩১ মে তার করোনা শনাক্ত হয়। ছেলে কক্সবাজার সিটি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র মোহাইমেনের রিপোর্টও পজিটিভ আসে।

শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ১ জুন রাতে উখিয়া আইসোলেশন সেন্টারে নেয়া হয়।

চিকিৎসকদের পরামর্শে সেখান থেকে গত ৩ জুন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

সেখানে নেয়ার পর প্রথম দিক তার অবস্থা কিছুটা উন্নতি হয়। শনিবারও অনেকটা ভাল ছিল। কিন্তু রবিবার ভোররাত থেকে খুবই সংকটাপন্ন হয়ে যায়। শরীরে অক্সিজেন সিসুরেশনের মাত্রা ৬০-৪০ এ উঠা নামা করছিলো। যা সুস্থ মানুষের ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবে ৯৩ দরকার।

পরে আইসিইউর ব্যবস্থা করা হলেও আর বেঁচে রইলেন না আদর্শ সাংবাদিক মোনায়েম ভাই।


ইমাম খাইর, সংবাদকর্মী, কক্সবাজার।