এপ্রিলে শীর্ষ আক্রান্ত ৪০ দেশের বাইরে, মে-তে ২১তম
কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব বোঝার ক্ষেত্রে দেশে দেশে শনাক্তকৃত আক্রান্তের সংখ্যার দিয়ে তাদের অবস্থান বোঝা যায়। বর্তমানে তালিকার শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রায় ২০ লাখের বেশি শনাক্ত হয়েছে দেশটিতে। দ্বিতীয় অবস্থানে ব্রাজিল, তৃতীয় রাশিয়া ও চতুর্থ যুক্তরাজ্য। বাংলাদেশের অবস্থান দ্রুত সামনের দিকে আসছে। এপ্রিলে যেখানে শীর্ষ আক্রান্ত ৪০টি দেশের মধ্যেও বাংলাদেশ ছিল না, বর্তমান এর অবস্থান ২১তম। এই হার অব্যাহত থাকলে জুনের মধ্যেই চীনকে টপকে ১৭তম অবস্থানে চলে যাবে বাংলাদেশ।
দৈনিক আক্রান্ত বৃদ্ধির হারে বিশ্বে নবম, এক মাস আগেও শীর্ষ ৪০ এর বাইরে
আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বোঝার ক্ষেত্রে একটি শীর্ষস্থানীয় সূচক। এর মাধ্যমে কোভিড-১৯ এর ভয়াবহতার ভবিষ্যত সম্ভাব্য চিত্র পাওয়া যায়। বর্তমানে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যায় বিশ্বে নবম অবস্থানে বাংলাদেশ (১ জুনের তথ্য)। এর অর্থ হলো দেশে আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আমাদের দেশ বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ আক্রান্তের দেশে পরিণত হবে।
বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত এবং পাকিস্তানও তালিকায় একসঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে
তিন দেশেই আক্রান্ত এবং আক্রান্ত বৃদ্ধির ধরন একই। এক মাস আগেও তিন দেশের কোনওটিই দৈনিক আক্রান্ত বৃদ্ধির শীর্ষ দশ দেশে ছিল না। আর বর্তমানে বাংলাদেশ নবম, পাকিস্তান ষষ্ঠ আর ভারত চতুর্থ। এই ত্রয়ী ব্রাজিলকে অনুসরণ করছে। ২১ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার লাতিন দেশটিতে বর্তমানে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা দুনিয়ার সর্বোচ্চ।
ভারতের প্রতি ২.৫ জন আক্রান্তের অনুপাতে বাংলাদেশে আক্রান্ত ১
কয়েক সপ্তাহ ধরেই বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যার হার ছিল ভারতের ২৫ শতাংশ। তবে বাংলাদেশের জনসংখ্যার চেয়ে ভারতের জনসংখ্যা ৯ গুণ বেশি। বাংলাদেশে আক্রান্তের অনুপাত বাড়তে থাকলে ভারতের সঙ্গে আনুপাতিক ব্যবধান কমে যাবে।
মৃত্যুহারে ভারতকে অনুসরণ করছে বাংলাদেশ
ভারতে কোভিড-১৯ এ প্রতিটি মৃত্যুর বিপরীতে বাংলাদেশে মৃত্যু হচ্ছে ০.৯২ হারে। অর্থ হলো জনসংখ্যার বিচারে দেশ দুটি মৃত্যু হারে প্রায় একই পথে এগোচ্ছে। কিন্তু আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি এবং লকডাউন শিথিল করায় শিগগিরই মৃত্যুহারে বাংলাদেশ ভারতকে ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
মোট জনসংখ্যার মধ্যে আক্রান্ত হিসেবে ১০১তম, ইঙ্গিত:হিসাব কেবল শুরু
বাংলাদেশে প্রতি দশ লাখ মানুষের মধ্যে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে ৩১৬ জন। এক্ষেত্রে পাকিস্তানের সঙ্গে অবস্থান প্রায় একই। দেশটিতে প্রতি দশ লাখে ৩৩৫ জন শনাক্ত হয়েছে। সার্কভুক্ত তিন বড় প্রতিবেশি দেশ আক্রান্তের ঘনত্বের তালিকায় নিচের দিকে অবস্থান করছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ১০১তম, পাকিস্তান ৯৮তম আর ভারত ১৪৫তম।
ভালো খবর মনে হচ্ছে? কিন্তু তা নয়। এই দেশগুলো এখান থেকে কেবল উপরের দিকে উঠতে থাকবে। বাংলাদেশের র্যাঙ্কিং বাড়ছে (গত কয়েক সপ্তাহের পরিবর্তনের দিকে মনোযোগ দিলে সেটাই দেখা যায়)। বেশি জনসংখ্যার ঘনত্ব বিচারে আক্রান্তের সংখ্যা কম থাকলেও তা দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার ইঙ্গিতবাহী। এই যেমন ব্রাজিলের অবস্থান ৩৫তম আর যেখানে বিশ্বের হটস্পট বলে বিবেচিত যুক্তরাষ্ট্রের র্যাংকিং কমছে।
বেশি জনসংখ্যার এশীয় দেশগুলো আরও কার্যকরভাবে কোভিড মোকাবিলা করছে
প্রায় ২৭ কোটি জনসংখ্যার দেশ ইন্দোনেশিয়ায় (বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় দ্বিগুণ) আক্রান্তের সংখ্যা বাংলাদেশের অর্ধেক (১ জুনের হিসাবে ২৬ হাজার ৯৪০ জনের বিপরীতে ৪৯ হাজার ৫৩৪ জন)। ইন্দোনেশিয়ায় মে মাস থেকে যেখানে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে আড়াই গুণ সেখানে বাংলাদেশের বেড়েছে ৬ গুণ।
ভিয়েতনাম আগেভাগেই কঠোর লকডাউন আরোপ করে। ৯ কোটি ৮০ লাখ জনসংখ্যার দেশটিতে মাত্র ৩২৮ জন শনাক্ত হয়েছে আর এখন দেশটি লকডাউন শিথিল করতে শুরু করেছে।
পরীক্ষায় পিছিয়ে বাংলাদেশ
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ পরীক্ষা করতে পেরেছে ৩ লাখ ২০ হাজার মানুষের। যা মোট জনসংখ্যার মাত্র ০.২ শতাংশ। পাকিস্তান যে সময়ে একশ’ জন মানুষের কোভিড-১৯ শনাক্ত করতে পেরেছে সে সময়ে বাংলাদেশ ৭৭ জনের পরীক্ষা করেছে। ব্রাজিলে প্রতি ১০০ জনের পরীক্ষার বিপরীতে বাংলাদেশ ৪৫ জনের টেস্ট করতে সমর্থ হয়েছে।
কোভিড-১৯ সূচকগুলো যখন অশুভ ইঙ্গিত দিচ্ছে তখন বাংলাদেশকে অবশ্যই লকডাউন বহাল রাখার দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। সঙ্গে নিতে হবে আরও তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তা হলো: পরীক্ষা, পরীক্ষা এবং পরীক্ষা।