শাহেদ মিজান, সিবিএন:

সরকারিভাবে লকডাউন তুলে সীমিত পরিসরে কার্যক্রম চালানোর ঘোষণা এসেছে মাত্র তিনদিন হলো। লকডাউন তোলা হয়ে জনজীবন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেনি। করোনার কক্সবাজারের পরিস্থিতি দিন দিন আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে। এর ফলে সরকারি ঘোষণা হলেও ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতা লোকজনের আয়ের পথ বিন্দুমাত্রও খুলেনি। কিন্তু সরকারি ঘোষণাকে পুঁজি করে ঋণগ্রহীতা গ্রাহকদের ঋণের কিস্তি আদায়ে চাপ দিচ্ছে ক্ষুদ্রঋণ লগ্নিকারী সংস্থাগুলো।

আশ্চর্য্যজনকভাবে লকডাউন তুলে নেয়ার ঘোষণা আসার সাথে সাথে কিস্তির জন্য গ্রাহকদের চাপ দেয়া শুরু করে এই সংস্থাগুলো। এতে চরম বিপাকে পড়ে গেছে গ্রাহকেরা। কিন্তু সরকারি পূর্বঘোষণা মতে, জুন পর্যন্ত কিস্তি বন্ধ থাকার কথা।

গত দুই দিন ধরে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে সাংবাদিকদের কাছে খবর আসে, জুন পর্যন্ত কিস্তি পরিশোধ বন্ধ রাখা সরকারি ঘোষণা থাকলেও লকডাউন তুলে নেয়া অজুহাতে ১ মে থেকে ক্ষুদ্র ঋণ লগ্নিকারী সংস্থাগুলোর লোকজন গ্রাহকদের বাড়ি গিয়ে, মোবাইল মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে কিস্তি পরিশোধের জন্য চাপ দিচ্ছে। ১ মে থেকে কিস্তি দেয়ার কথা বলে ৩জুন থেকে কিস্তির জন্য গ্রাহকদের বাড়ি বাড়ি হানা দিচ্ছে সংস্থাগুলোর লোকজন। চাপ দিয়ে নিরুপায় হলেও অনেকের কাছ থেকে কিস্তি আদায় করেছে। কিন্তু অধিকাংশ গ্রাহকের হাতে টাকা না থাকায় কিস্তি দিতে পারছে না। এই কথা সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের বুঝালেও তারা কোনোভাবে আমলে নিচ্ছে না। অধিকাংশ সংস্থা ঋণ পরিশোধ করার আলমিমেটামও দিয়েছে বলে অভিযোগ এসেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্ষুদ্র ঋণ নেয়া প্রায় সব গ্রাহক খেটে খাওয়া মানুষ। এদের অধিকাংশই দিনের আয় দিয়ে দিনে খায়। কিন্তু করোনা কারণে দীর্ঘ আড়াই মাসের বেশি সময় তারা বেকার রয়েছেন। অন্যদিকে যারা বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসা, চাষাবাদ, খেত-খামারসহ নানা কাজের জন্য ঋণ নিয়েছিলো সেসব আয়ের পথগুলোও লকডাউনের কারণে অধিকাংশই বন্ধ রয়েছে। ফলে কারো হাতে টাকা নেই । এখনো এই দুরাবস্থা বিরাজ করছে। এই পরিস্থিতিতে তারা কোনোভাবেই ঋণ পরিশোধ করতে সক্ষম নয়।

গ্রাহকেরা জানান, লকডাউন খুললেও সাথে সাথে তো আয় আসছে না। আবার করোনা পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাওয়ায় আয়ের পথগুলো খুলছে না। যার কারণে এমন পরিস্থিতিতে কোনোভাবেই ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব নয়। পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হওয়ার পরও কম পক্ষে ১৫দিন সময় লাগবে। কিন্তু লকডাউন তোলার দিন থেকেই কিস্তির জন্য চাপ শুরু করে ক্ষুদ্র ঋণ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। টাকা না দিলে ঘরের জিনিষপত্র নিয়ে যাওয়া এবং মামলারও হুমকি দেয়া হচ্ছে!

এদিকে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও সৈয়দ সামসুল তাবরীজ এই দুর্ভোগের বিষয়টি অবহিত হয়ে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক জুন মাস পর্যন্ত ঋণের কিস্তি আদায় নিষেধ করে দিয়েছেন। কোনো সংস্থার লোকজন জোরপুর্বক ঋণের টাকা আদায় করতে চাইলে ওই কর্মকর্তাকে আটক করে তাৎক্ষনিক সেই খবর তাকে (ইউএনও) জানাতে বলেছেন। ইউএনও সৈয়দ সামসুল তাবরীজের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছে মানুষ।

চকরিয়ার মতো কক্সবাজারের সব উপজেলায় সরকারি পূর্ব নির্দেশনা মতো জুন পর্যন্ত কিস্তিু পরিশোধ রাখতে উদ্যোগ নেয়া জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন করোনায় কর্ম হারিয়ে অসহায় মানুষগুলো।