সিবিএন ডেস্ক:
পুরুষের তুলনায় আক্রান্তের সংখ্যা কম হলেও করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে বেশি ভীত বাংলাদেশের নারীরা। একই সঙ্গে করোনা নিয়ে পুরুষের চেয়ে বেশি সচেতন নারীরা।

‘কোভিড-১৯: এ থ্রেট টু হিউম্যান এক্সিসটেন্স’ শিরোনামে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। অন্যদিকে ভারতের তুলনায় এদেশের মানুষের মধ্যে ভয় বেশি এমন তথ্যও পাওয়া গেছে গবেষণায়।

করোনা নিয়ে মানুষের মানসিক অবস্থা জানার উদ্দেশ্যে এই গবেষণায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের ১৮ থেকে ষাটোর্ধ্ব বয়সী বিভিন্ন পেশার মোট ৯২০ জনকে নমুনা হিসেবে নেয়া হয়। যার মধ্যে বাংলাদেশের ৫৬৬ জন ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ৩৫৪ জন ছিলেন।

এর মধ্যে নারী ছিলেন ৪৪৪ জন এবং পুরুষ ৪৭৪ জন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মজিবুল হক আজাদ খানের তত্ত্বাবধানে গবেষণাটি সম্পন্ন হয়েছে।

যদিও সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে আক্রান্তদের মধ্যে ৭১ শতাংশ পুরুষ এবং ২৯ শতাংশ নারী। তবে বাংলাদেশের নারীরা বেশি ভীত কেন?

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. মজিবুল হক আজাদ খান বলেন, আমাদের বাঙালি সংস্কৃতিতে নারীরা তাদের পরিবারের বিষয়ে বেশি উদ্বিগ্ন থাকেন। স্বামী-সন্তান পরিবারের বেশি যত্ন নেন নারীরা।

তিনি বলেন, নারীরা ঘরের মধ্যে থাকছেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলছেন। একই সঙ্গে পুরুষের চেয়ে বেশি সচেতন নারীরা। এসবের কারণে কম আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে স্বামী বাইরে যাচ্ছে, ছেলে-মেয়ে বাইরে যাচ্ছে। বাইরে গেলেই এই বুঝি করোনায় আক্রান্ত হলো- এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন নারীরা। তাই ভীতি কাজ করছে তাদের মধ্যে।

বাংলাদেশি নারীদের ভীত হওয়ার কারণ সম্পর্কে গবেষণা বলছে, হাসপাতাল সঙ্কট, নিম্নমানের সেবা, একইসঙ্গে পর্যাপ্ত সুরক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় করোনা নিয়ে ভীত নারীরা।

এদিকে, ভীত হওয়ার কারণে করোনা প্রতিরোধ ক্ষমতা হারাচ্ছেন তারা। এ নিয়ে কি ধরনের প্রভাব পড়তে পারে? সে বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক আজাদ বলেন, করোনা এমন একটা রোগ যার প্রতিষেধক, প্রতিরোধক এখনও আমরা হাতে পাইনি।

তাই করোনা প্রতিরোধে শক্ত থেকে যুদ্ধ করে যেতে হবে। এর মধ্যে যদি কেউ ভীত হয়ে পড়েন তাহলে সমস্যা। সাইকোলজিক্যাল ব্রেকডাউন যত হবে তত করোনার সঙ্গে যুদ্ধ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলব আমরা। তাই মানসিকভাবে দৃঢ় থাকাটা নারীদের জন্য বেশি জরুরি।

গত ২১ এপ্রিল থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত অনলাইনে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। গবেষণায় আরও সহায়তা করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক তরুন হাসান, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাধন দাস গুপ্ত, ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক দেবদ্বীপ রায় চৌধুরী ও রাবি মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান।