অনলাইন ডেস্ক :
লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশি আর চার আফ্রিকানকে ব্রাশফায়ারে হত্যার মূল অভিযুক্ত জঙ্গী কমান্ডার খালিদ ড্রোন হামলায় নিহত হওয়ার খবর বেরিয়েছে। মঙ্গলবার জাতিসংঘ সমর্থিত লিবিয়া (ত্রিপলি ভিত্তিক) সরকারের নির্দেশে পরিচালিত দেশটির এয়ার ফোর্সের এক সাঁড়াশি অভিযানে তার মৃত্যু হয় বলে দাবি করা হয়েছে। সর্বশেষ মিজদা শহরে ৪০ অভিবাসীকে হত্যাসহ বহু হতাহতের ঘটনার জন্য দায়ী ওয়ারলর্ড হাফতারের (জেনারেল হাফতারের নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহী বাহিনী, যা বেনগাজি ভিত্তিক) মিলিটারিম্যান খালিদ আল-মিশাই। তাকে দমনে মঙ্গলবার দক্ষিণাঞ্চলীয় গাড়িয়ান এলাকায় লিবিয়ান এয়ারফোর্সের অভিযান চলে এবং সেখানে পরিচালিত ড্রোন হামলায় তার মৃত্যু নিশ্চিত হয় মর্মে দ্য লিবিয়ার অবজারভার নামের একটি টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে সচিত্র টুইট বার্তা প্রচার করা হয়েছে।
ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জনসংযোগ শাখা সেই টুইট বার্তাটি গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারের জন্য সরবরাহ করেছে। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল প্রতিনিধিরা মানবজমিনকে বলেন, লিবিয়ার প্রকৃত নিয়ন্ত্রক সরকারের (যা জাতিসংঘে সমর্থিত) তরফে বাংলাদেশি হত্যার ঘটনায় মূল অভিযুক্তের মৃত্যুর বিষয়টি ঢাকাকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য গত ২৮ শে মে ত্রিপলি থেকে ১৮০ কিলোমিটার দূরে মরুভূমি সংলগ্ন মিজদাহ শহরে মানবপাচারকারীদের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি ডিটেনশন সেন্টারে ইতালিতে অভিবাসন প্রত্যাশীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার জেরে পাচারচক্র এবং মিলিশিয়াদের যৌথ আক্রমণ এবং ব্রাশফায়ারে ওই হত্যার ঘটনা ঘটে। এতে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য ওই ঘরে বন্দি থাকা ২৬ বাংলাদেশিসসহ ৩০ অভিবাসী ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
১১ জন গুরুতর আহত হন। আর একজন বাংলাদেশি কোনোমতে অক্ষত অবস্থায় পালাতে সক্ষম হন। মূলত তার মাধ্যমেই ঘটনার প্রাথমিক তথ্য পায় বাংলাদেশ।
লিবিয়ার জাতিসংঘ সমর্থিত সরকারের বরাতে ত্রিপলির বাংলাদেশ দূতাবাস অনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে, মিজদাতে বন্দিদশায় অভিবাসীদের হাতে এক মানবপাচারকারী খুনের বদলা নিতে চক্র এবং তাদের সহযোগী মিলিশিয়ারা পৈশাচিক ওই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ঢাকাকে দূতাবাসের তরফে জানানো হয়- করোনাভাইরাস সংক্রান্ত জটিলতা শুরু হওয়ার আগে ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশিরা ভারত ও দুবাই হয়ে মিলিশিয়াদের নিয়ন্ত্রিত বেনগাজি পৌঁছান। এরপর কয়েক মাস সেখানে তাদের রাখা হয়। উদ্দেশ্য উপকূলীয় অঞ্চল যুওয়ারা হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে তাদের ইতালিগামী নৌকায় তোলা। কারণ বছরের এই সময়ে ভূমধ্যসাগর অপেক্ষাকৃত শান্ত থাকে এবং এটিকেই সাগর পাড়ি দেওয়ার আদর্শ সময় বলে মনে করে পাচার চক্র। তবে বিপত্তি ঘটায় করোনা ভাইরাস এবং প্রতিপক্ষের সক্রিয়তা।
ফলে প্রচলিত পথে না গিয়ে মরুভূমির মধ্যদিয়ে বেশ বিপদসংকুল একটি পথে অভিবাসীদের নিয়ে যাচ্ছিলো পাচারকারীরা। অন্য একটি সূত্র অবশ্য দাবি করেছে- বিস্তৃর্ণ মরুভূমি পড়ি দেয়ার পথেই সশস্ত্র মিলিশিয়াদের খপ্পড়ে পড়েন বাংলাদেশিসহ অন্য অভিবাসীরা। মুক্তিপণ আদায়ে তাদের জিম্মি করা হয়। সেখানে একাধিক গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে হত্যাকাণ্ডটি ঘটে থাকতে পারে বলেও তাদের ধারণা। তবে ত্রিপলীতে নিযুক্ত বাংলাদেশের শ্রম কাউন্সেলর আশরাফুল ইসলাম এটা নিশ্চিত করেন যে, অস্ত্রধারী অপহরণকারীদের সঙ্গে জিম্মি অভিবাসীদের মুক্তিপণ নিয়ে দর কষাকষি চলছিলো। আটককৃতদের অনেকে পরিবারের সাথে যোগাযোগও করছিলেন। কিন্তু বাড়তি ওই অর্থ সরবরাহে ব্যর্থ হন তারা।
আর এ জন্যই চলে বর্বর নির্যাতন, যার জেরে বাংলাদেশিদের সঙ্গে থাকা সুদানি নাগরিকরা অপহরণকারী চক্রের এক সদস্যকে মেরে ফেলে। ওই খুনের বদলা নিতেই অপহরণকারীরা ক্ষুদ্ধ হয়ে আগ্নেয়াস্ত্রধারী মিলিশিয়াদের নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়। তাদের বাছ-বিচারহীন ওই হামলাঢ ৩৮ বাংলাদেশির ৩৭ জনই গুলিবিদ্ধ হন। মারা যান ২৬ জন। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত অবস্থায় কয়েকজন ভেতরেই পড়ে ছিলেন, দুই-একজন আহত অবস্থায় বের হয়ে আতঙ্কে এদিক-ওদিকে দৌঁড়াতে দেখে স্থানীয় লোকজন সেনাবাহিনীকে খবর দেয়। পরে সেনাবাহিনী হতাহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানোর যাওয়ার ব্যবস্থা করে।
-মানবজমিন
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।