কে, এম , নাছির উদ্দিন , চকরিয়া :

২৭ ফেব্রুয়ারী-১৯৯১ সালে সমাপ্ত ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজয়ের পর আওয়ামীলীগের তৎকালীন প্রভাবশালী নেতা সদ্য প্রয়াত এডভোকেট জহিরুল ইসলাম ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামে চলে যাওয়ার ফলে চকরিয়ায় আওয়ামীলীগের নির্বাচনী রাজনীতিতে চরম সংকট দেখা দেয়। বিশেষ করে নিয়মানুযায়ী পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দল থেকে কে মনোনয়ন চাইবেন এবং মনোনয়ন পেলেও মূলত আওয়ামীলীগের ঘোর বিরোধী মনোভাপন্ন এ এলাকায় প্রতিপক্ষকে নির্বাচনী ময়দানে ধরাশয়ী করার মতো সক্ষম ব্যক্তির অভাব ছিলো চোখে পড়ার মতো। বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছিলো স্বয়ং কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগকেও। ঠিক এ সময়ে এ অভাব পুরণে এগিয়ে আসেন এতদাঞ্চলের রাজনীতিতে পরিচ্ছন্ন ভাবমুর্তির অধিকারী খ্যাত সালাহ্‌উদ্দিন আহামেদ সি.আই.পি। তখন দেশে চলছিলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। এ আন্দোলন এক পর্যায়ে সফলতায় রূপ নেয়। অবশেষে গণ দাবীর প্রেক্ষিতে ১২ জুন-১৯৯৬ সালে দেশে অনুষ্ঠিত হয়- ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন লাভ করেন- সালাহ্‌উদ্দিন আহামেদ সি.আই.পি। দেশের প্রতিষ্ঠিত একজন ব্যবসায়ী, ১৯৮৬-৮৭, ১৯৯৬-৯৭ এবং ২০০৩-২০০৪ সালে রপ্তানী বাণিজ্যে সেরা সম্মাননার স্বীকৃতি স্বরূপ সি.আই.পি.(বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি)’র খেতাবপ্রাপ্ত এ ব্যক্তিত্ব ১৯৫২ সালের ০২ জানুয়ারী চকরিয়া উপজেলার অ-বিভক্ত হারবাং ইউনিয়ন (বর্তমান বরইতলী) এর পহরচাঁদা গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম ফজলুল করিম সিকদার দীর্ঘদিন অ-বিভক্ত হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। সালাহউদ্দিন সি.আই.পি.০২ কন্যা এবং ০১ পুত্র সন্তানের জনক। তিনি তাঁর কন্যাদের উপযুক্ত পাত্রস্থ করেছেন এবং পুত্র আবরার আহামেদকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলেছেন। অষ্ট্রেলিয়ার ম্যালবোর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় হতে পুত্র আবরার আহামেদ বাণিজ্য ও প্রকৌশল বিষয়ে মাষ্টার্স ডিগ্রী অর্জণ শেষে বর্তমানে সেখানে একটি বহুজাতিক কোম্পানীতে কন্সালট্যান্ট হিসেবে কর্মরত আছেন। স্মরণ করা যেতে পারে- সালাহ্‌উদ্দিন আহামেদ সি.আই.পি দলে নবাগত হলেও ছাত্র জীবন থেকে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়-স্বাধীনতা-উত্তর অ-বিভক্ত হারবাং ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি এবং চট্টগ্রাম সরকারী বাণিজ্য মহাবিদ্যালয় ছাত্র সংসদেরও তিনি নির্বাচিত সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন-উক্ত কলেজ থেকেই তিনি বাণিজ্য বিভাগে স্নাতক ডিগ্রী অর্জণ করেন এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট স্ব-পরিবারে বঙ্গবন্ধুর মর্মান্তিক মৃত্যুর পর আন্দোলন সংঘটিত করার কাজে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৯৪ সালে চট্টগ্রামে একটি অনুষ্ঠানে আজকের প্রধান মন্ত্রী এবং তৎকালীন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার সাথে তাঁর পরিচয় হয়, আওয়ামীলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাষ্ট্রদূত আতাউর রহমান খাঁন কায়সার, বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন মেয়র এ.বি.এম. মহিউদ্দিন চৌধুরী ও চট্টগ্রাম দক্ষিন জেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহামদ এম.পি.’র সুবাদে। ১৯৯৬’র সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারে প্রতিদ্বন্ধিতা করেই ফলাফলে তাক লাগিয়ে দিতে সক্ষম হন তিনি। সে নির্বাচনে তাঁর প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা ছিলো ৫২ হাজারেরও উপরে। এ নির্বাচন তত্তাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হলেও চকরিয়া-কক্সবাজার অঞ্চলের প্রশাসন যন্ত্র ছিলো বিএনপি প্রার্থী সালাহ্‌উদ্দিন আহামদের মদদ পুষ্ট। এ নির্বাচন ছিলো চকরিয়ার জন্য এক “প্রাসাদ ষড়যন্ত্র” বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে শতভাগ ভোট কাষ্টিং দেখানো, অনেক কেন্দ্র ভোটার অপেক্ষা অতিরিক্ত ভোট রেকর্ড এর অভিযোগও ছিলো ভুরি ভুরি। ফলে অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে সালাহ্‌সি.আই.পি’র পরাজয়। তিনি প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে ভারত, জাপান ও আমেরিকা সহ ০৭ বার বিদেশ সফর করেন।

হতাশার পাত্র নন তিনিঃ

নির্বাচনে পরাজয়ের পর এক মুহুর্তের জন্যও দল এবং মাঠ ছেড়ে যাননি তিনি। বরং দ্বিগুণ উৎসাহে সাংগঠনিক কর্মকান্ডে ঝাঁপিয়ে পড়েন গোঠা জেলা ব্যাপী। দীর্ঘদিন সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব না-আসা, সংসদ নির্বাচনে কাঙ্কিত ফলাফল অর্জিত না-হওয়া সব মিলিয়ে দলীয় কার্যক্রমে সৃষ্ট স্থবিরতা নিরসণ কল্পে দলীয় প্রধান কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের কমিটি ভেঙ্গে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এ সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে একপর্যায়ে জেলা আওয়ামীলীগের কমিটি ভেঙ্গে দেয়া হলে নব-গঠিত কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন সালাহ্‌উদ্দিন আহামেদ সি.আই.পি। দলীয় দায়িত্ব পালন এবং সদ্য রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আগত শাসক দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের স্থাণীয় প্রতিনিধি হিসেবে এলাকার উন্নয়নমুলক কর্মকান্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত করণ এবং পরবর্তী নির্বাচনের জন্য মাঠ তৈরী করা সহ ভীষণ ব্যস্ততম সময় অতিবাহিত হচ্ছিল তাঁর। চকরিয়ার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথা স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির নির্মাণে রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা প্রদান, মাতামুহুরী রাবার ড্যাম প্রকল্প বাস্তবায়ণ, চকরিয়া ডিজিটাল টেলিফোন এক্সচেঞ্জ স্থাপন সহ ব্যাপক উন্নয়নমুলক কর্মকান্ড সাধিত হয় তাঁর প্রচেষ্টায়। পাশাপাশি শতভাগ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠান ছিলো তাঁর বিরাট সফলতা। সম্মেলনে তিনি বিপুল ভোটে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন সাধন এবং সংগঠনকে অতীতের যেকোন সময় অপেক্ষা শক্তিশালীকরণ ও স্থাণীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে দলীয় সমর্থিত প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেন তিনি। তাছাড়াও সমাজের বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ, যাদের রয়েছে নীরব ভোট ব্যাংংক, তাদেরকে তিনি প্রভাবান্বিত করে আওয়ামীলীগে যোগদান করাতে সক্ষম হন। আজকের চকরিয়া-সংসদ সদস্য জাফর আলম এবং চকরিয়া পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান আনোয়ারুল হাকিম দুলাল হলেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। যদিও পরবর্তীতে আনোয়ারুল হাকিম দুলাল অন্য দলে চলে যান। জাফর আলম ১৯৯৯ এবং ২০০৩ সালে দু’দফায় চকরিয়া পৌর নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন দুই নির্বাচনেই সালাহ্‌উদ্দিন আহামেদ সি. আই.পি. জাফর আলমকে প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক এবং আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছেন অকাতরে। প্রথম নির্বাচনে জাফর আলম পরাজিত হন সামান্য ভোটের ব্যাবধানে, ২য় নির্বাচনে বিএনপি শাসনামলে তার বিজয় ছিলো একপ্রকার “যুদ্ধ জয়ের” মতো। সালাহ্উদ্দিন আহামদ সি. আই.পি এবং তাঁর আহ্বানে দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম রফিকুল আনোয়ার. আজকের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর, আওয়ামীলীগ নেতা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু বাকের, সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম মঈনুদ্দিন আহামেদ খাঁন বাদল নির্বাচন মনিটরিং-এ আসেন এবং স্থাণীয় ভোটারগণকে তৎকালীন বিএনপি জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের প্রশাসনের অবৈধ প্রভাবে ভীত না-হয়ে স্থাণীয় ভোটারদের ভোট দিতে উৎসাহ দেন এবং এক পর্যায়ে জাতীয় নেতৃবৃন্দ অনাকাঙ্কিতভাবে নাজেহালের শিকার হন। চকরিয়ায় আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে সালাহ্ উদ্দিন আহামেদ সি.আই.পি’র কাছ থেকে সর্বাপেক্ষা বেশী অনুকম্পা পেয়েছিলেন আজকের সংসদ সদস্য জাফর আলম। নানা কারণে জাফর আলম বিভিন্ন মামলা মোকদ্দমার শিকার হন জোট সরকারের সময়ে। এসব মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে যার পর নাই প্রচেষ্টা চালাতে হয়েছে। একথা গত সংসদ নির্বাচনের পর চকরিয়ায় সড়ক পরিবহন ও সেতু বিভাগীয় মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাহেবের জনসভায় অকপটে স্বীকার করেছেন- সাবেক আইন মন্ত্রী এডভোকেট আব্দুল মতিন খসরু। এ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্যে তিনি উল্লেখ করেন “আপনাদের নেতা সালাহ্‌উদ্দিন সাহেবের সুপারিশে আমি আজকের এম.পি. জাফর আলমের রাজনৈতিক হয়রাণীমুলক মামলা সমূহ থেকে তিনি যাতে মুক্তি পান সে ব্যাবস্থা করেছিলাম”।

২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ :

১ অক্টেবর-২০০১ তৎকালীন প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমানের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছিল-বাংলাদেশ আওয়ামীলীগকে পরাজযের জন্য এক “জঘন্য ষড়যন্ত্রের দলিল”। তৎপুর্বে ২৫ জুলাই-২০০১ সালে ০৫ বছর মেয়াদ পূর্তির পর সংবিধান অনুযায়ী ঐ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু সরকার গঠনের পরেই নির্দলীয়-নিরপেক্ষ চরিত্রের পরিবর্তে এটি রূপ ধারণ করে আওয়ামীলীগের প্রতিপক্ষ হিসেবে। যেনতেন প্রকারে আওয়ামীলীগকে পরাজিত করাই ছিল বিচারপতি লতিফুর রহমানের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মূল লক্ষ্য। তাদের এ লক্ষ্য আরো পরিস্কার হয়ে ওঠে, তৎকালীণ মার্কিন রাষ্ট্রদূত হ্যারী কে. টমাস এর বাসভবনে বিচারপতি লতিফুর রহমান, আওয়ামীলীগ ও বিএনপি নেতৃবৃন্দের মধ্যে বৈঠকের পর। এ বৈঠকের আলোচ্য বিষয় ছিল- বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গ্যাস সম্পদ আমেরিকার হস্তগত করা। এ বৈঠকে বিএনপি অকুন্ঠ চিত্তে ঘোষণা দেয় যে-তারা ক্ষমতায় গেলে-বাংলাদেশের গ্যাস সম্পদ আমেরিকায় রপ্তানী করবে, অপরদিকে আওয়ামীলীগের বক্তব্য ছিল দেশের চাহিদা পুরণ সাপেক্ষে বিদেশে গ্যাস রপ্তানীর বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। এ বক্তব্যের পরেই মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসায় নিশ্চিত হয়ে যায় যে- বিচারপতি লতিফুর সরকার কোন দলকে রাস্ট্রীয় ক্ষমতায় বসানোর এজেন্ডা নিয়ে কাজ করছে। এ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ তাদের নিশ্চিত পরাজয় জেনেও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষার স্বার্থে বিচারপতি লতিফুর রহমানের সরকারের অধীন নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে এবং সে নির্বাচনে সালাহ্‌উদ্দিন আহামেদ সি.আই.পি. চকরিয়া-পেকুয়া নির্বাচনী এলাকা হতে দলীয় মনোনয়ন লাভ করেন। আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদের নির্বাচনী প্রচার কাজে বাঁধা, গণহারে গ্রেপ্তার-নির্যাতনের পরেও তিনি ৭৪ হাজার ভোট পান। এ নির্বাচনে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বিজয়ী জামায়াত-বিএনপি জোট রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হওয়ার বছরের মাথায় শুরু হয় দূর্নীতি আর অনিয়মের মহোৎসব। সরকারের বিকল্প হিসেবে হাওয়া ভবন নামে জন্ম নেয়-আরেক বিকল্প সরকার। সরকারের অনেক মন্ত্রী নিজেদের অনিচ্ছা সত্ত্বেও হাওয়া ভবনের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সবসময় বাধ্য থাকতেন। আর হাওয়া ভবনের অন্যতম নীতি নির্ধারক হিসেবে তারেক জিয়াকে অবলীলায় সহযোগিতা দিতেন বিএনপি’র লুঠপাটের আরেক অংশীদার সাবেক যোগাযোগ প্রতি-মন্ত্রী সালাহ্‌উদ্দিন আহামেদ। ফলে এ গণ বিরোধী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন ছাড়া আওয়ামীলীগের আর কোন বিকল্প ছিলনা। আন্দোলন সংগ্রামের অংশ হিসেবে ২০০৫ সালে ঘোষণা করা হয়, অনাস্থার গণ প্রাচীর নামক এক জনপ্রিয় রাজনৈতিক কর্মসূচী। টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত রাস্তার দু’ধারে মানুষ দাঁড়িয়ে সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা জ্ঞাপন শুরু করে। চট্টগ্রাম কক্সবাজার অঞ্চলে এ আন্দোলন সফল করার দায়িত্ব পড়ে সাবেক নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাহ্‌জাহান খাঁন, আওয়ামীলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এবং আজকের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর, তৎকালীন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র এ.বি.এম. মহিউদ্দীন চৌধুরীর উপর। তাঁদের নির্দেশণায় কক্সবাজার জেলায় সালাহ্‌উদ্দীন আহামদ সি.আই.পি সফলভাবে এ কর্মসূচী সফল করেন।

২৮ অক্টোবর-২০০৬ এর যুদ্ধাবস্থা :

০৫ বছর বিএনপি ক্ষমতায় থকে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুন্ঠন, আওয়ামীলীগকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র, ২১ আগষ্ট২০০৪ জননেত্রী শেক হাসিনাকে গ্রেনেড হামলার মধ্যদিয়ে হত্যা চেষ্টা এবং এতে আই.ভি. রহান সহ ২১ জনের প্রাণহানি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ইত্যাদি অপকর্মের বিরুদ্ধে জোট সরকোরের মেয়াদের শেষের দিন ২৮ অক্টোবর-২০০৬ ছিল জনগনের এক মহা প্রলয়ের দিন। সারাদেশের ন্যায় চকরিয়ায়ও এ মহাপ্রলয়ের হাওয়া লাগে। এদিন বিএনপি চকরিয়া সদরে বড় ধরণের শো-ডাউনের প্রস্তুতি নেয় এবং আওয়ামীলীগও এ ধরণের পাল্টা কর্মসূচী নিযে মাঠে নামে। চকরিয়া থানা রাস্তার মাথায় বিএনপি শোডাউনের মঞ্চ তৈরী করে। বিক্ষুব্ধ আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মীগণ সালাহ্‌উদ্দিন সি.আই.পি’র নেতৃত্বে বিএনপি’র মঞ্চ ভেঙ্গে মাটির সাথে গুড়িয়ে দিতে সক্ষম হন। এ যুদ্ধাবস্থায় আজকের অনেক সুবিধাবাদী নেতা আড়ালে থেকে তামাশা দেখছিলেন। অপরদিকে বরইতলীতে বিএনপি’র উশৃঙ্খল নেতা-কর্মীদের হামলায় গুরুতর আহত হন- সালাহ্‌উদ্দিন সি.আই.পি’র ছোট ভাই, কক্সবাজার জেলা পরিষদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের বন এবং পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক কমর উদ্দিন আহামদ।

ইয়াজ উদ্দিনের নেতৃত্বধীন তত্ত্বাবধায় সরকার ও ১/১১ :

২৮ অক্টোবর বিএনপি’র পতনের পর নানা রাজনৈতিক নাটকীয়তায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন-বিএনপি নেতা ড. ইয়াজ উদ্দীন আহামদ। এরপর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও এ সরকারের পক্ষপাতমূলক আচরণের কারণে হঠাৎ ১১ জানুয়ারী-২০০৭ আবির্ভুত হয়- ড. ফখরুদ্দিন আহামদের নেতৃত্বাধীন সেনা সমর্থিত আরেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের। এ সরকার দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের নামে পাইকারী হারে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করে। এ অভিযান থেকে জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াও মুক্ত ছিলেননা। এ অবস্থায় অনেকে সালাহ্‌উদ্দিন আহামেদ সি.আই.পি.কে পরামর্শ দিয়েছিলেন দীর্ঘ মেয়াদে দেশের বাইরে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার জন্য। কিন্তু সততায় অবিচল এ নেতা কারো পরামর্শে কর্ণপাত না-করে সরকারী বিধি নিষেধ সাপেক্ষে রাজনীতিতে নিজেকে সক্রিয় রাখেন এমনকি এ চরম দুরাবস্থায় জাতীয় নেতা জিল্লুর রহমান, সৈয়দ আশ্রাফুল ইসলাম সহ যেসকল কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন-তাদের সংস্পর্শে থেকে দলীয় বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা দিয়ে যান। এমনটি ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলার ভয়াবহ ঘটনার পর আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির অনেক বিত্তশালী নেতা নিস্ক্রিয় হয়ে পড়লে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনায় চরম আর্থিক সংকট দেখা দেয়। এ দুঃসময়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিয়ে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেন তিনি। জননেত্রী শেখ হাসিনা কারামুক্তি লাভের পর চিকিৎসার জন্য আমেরিকা গমন করলে, চিকিৎসা শেষে যখন তিনি দেশে ফিরে আসতে উদ্যত হন, তখন মঈন-ফখরুদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাঁকে বিদেশ থেকে আসতে বাঁধা দেন এবং এক পর্যায়ে তাঁকে বিমান বন্দর থেকে ইমিগ্রেশন পাশে ইস্যু না করে তাঁকে ফেরৎ যেতে বলা হয়। এ মুহুর্তে নিজ দেশে ফিরতে না-পারার চরম উদ্বেগ নিয়ে নেত্রী ফিরে যান। এ উদ্বেগাকুল মুহুর্তে সালাহ্‌উদ্দিন আহামেদ সি.আই.পি আমেরিকা ও লন্ডন গিয়ে নেত্রীর সাথে দেখা করে-তাঁকে হতাশ না-হওয়ার অনুরোধ করেন এবং তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য যেকোন রাজনৈতিক ও কুটনৈতিক প্রচেষ্টায় সক্রিয় অংশগ্রহণের দৃঢ় ঘোষণা দেন।নেত্রীর সাথে বিদেশে সাক্ষাৎ শেষে দেশে ফেরার পর ঢাকায় বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের জেলা সাধারণ সম্পাদকদের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সে সভায় সারাদেশ থেকে আগত নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। সে সভায় সালাহ্‌উদ্দিন আহামেদ সি.আই.পি.’র বক্তব্য ছিলো সর্বাপেক্ষা ব্যাতিক্রম। তিনি সেদিন বলেন-যেকোন উপায়ে ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলা গুলো হতে ১০/২০ হাজার এবং দূরবর্তী জেলাগুলো হতে ২/৩ হাজার করে মানুষ এনে ঢাকায় জমায়েত করা সম্ভব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পালানোর জায়গা পাবেনা। এ সংবাদ যেকোন সূত্রে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কর্তাব্যক্তিগণ জানার পর নেত্রীকে দেশে আসার অনুমতি দেয়, অতঃপর নেত্রী বীরের বেশে দেশে আসেন।

২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ :

নেত্রী দেশে আসার পর তত্ত্বাবধায় সরকার নির্বাচনের তফশীল ঘোষণা করে। সে তফশলী মতে ২৯ ডিসেম্বর-২০০৮ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে সালাহ্‌উদ্দিন আহামেদ সি.আই.পি ৩য় বারের মতো দলীয় মনোনয়ন লাভ করলেন। কিন্তু দূর্ভাগ্য এ নির্বাচনে জয়ের শতভাগ সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বে স্থাণীয় কিছু প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দের ষড়যন্ত্রের কারণে লক্ষাধিক ভোট প্রাপ্তির পরেও তিনি জয়ী হতে পারেননি, যা একপ্রকার “আওয়ামীলীগের ষড়যন্ত্রের কাছে আওয়ামীলীগেরই পরাজয়” বলা চলে।

নেত্রীর অভিপ্রায়ে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠাঃ

২০১ কক্সবাজারে এক সরকারী সফরে আসেন প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ উপলক্ষে উখিয়ায় এক বিশাল জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় বিভিন্ন দাবী-দাওয়ার মধ্যে কক্সবাজারে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিষয়টি ছিলো অন্যতম। তখন সভামঞ্চে উপস্থিত সালাহ্‌উদ্দিন আহামেদ সি.আই.পি.’র দিকে আঙ্গুল দিয়ে উল্লেখ করেন “এই দাবীটি আমার পক্ষ থকে তিনিই পূরণ করবেন”। প্রধান মন্ত্রীর অভিপ্রায়কে সম্মান জানিয়ে তিনি পরবর্তী ০৬ মাসের মাথায় উক্ত বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে সক্ষম হন, যা উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে জন্য কক্সবাজারবাসীর প্রতি এক বিরাট অবদান এবং মাননীয় প্রধান মন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে এটির উদ্বোধন করেন।

নেত্রীর সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানিয়ে জেলা আওয়ামীলীগের প্রার্থীতা প্রত্যাহারঃ

দীর্ঘদিন পর ২০১৬ সালে কেন্দ্রের নির্দেশে কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনটি উৎসব মুখর পরিবেশে সম্পন্ন করতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রবল ইচ্ছা থাকলেও রাজনৈতিক নানা হিসাব-নিকাশ ও সমীকরণে তা সম্ভব না-হওয়ায় দলীয় প্রধান এবং প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব চিন্তা-চেতনার আলোকে একটি কমিটি মনোনীত করেন। ফলে নেত্রীর এ সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে তিনি সভাপতি পদে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেন। এগুলো সবই আজকের দিনে এক জলন্ত ইতিহাস। দলে লাখো-কোটি নিবেদীত প্রাণ নেতা-কর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ আজ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। কিন্তু দলের স্থাণীয় পর্যায়ে সৃষ্ট এক ধরণের সুবিধাবাদী শ্রেণীর তথাকথিত নেতারা এগুলো স্বীকার করতে নারাজ। কিন্তু তৃনমূলের শত সহ্স্র নিবেদীত প্রাণ নেতা-কর্মী এসবের রাজ স্বাক্ষী এবং তাদের সাথে নিয়েই তিনি এখনো সক্রিয় রযেছেন মাঠ ময়দানে-কারণ সত্যের মৃত্যু নেই।