খলিল চৌধুরী##
শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালের দ্বারে দ্বারে ঘুরছিলেন। কোথাও ভর্তি নেয় নি। অবশেষে মারা গেলেন সৌদি আরব প্রবাসী জসিম উদ্দিন (৪২)।

তার বাড়ি চট্টগ্রামের আমিরাবাদ ইউনিয়নের সৈয়দ পাড়ায়। সৌদি আরবের জেদ্দা থাকেন। দেশে ফেরেন কয়েক মাস আগে।

শ্বাসকষ্ট, জ্বর, কাশিতে ভোগছিলেন রেমিটেন্সযোদ্ধা জসিম।

সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে কোথাও ভর্তি হতে না পেরে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার পথে শনিবার (৩০ মে) সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে মারা যান বলে জানান ভাতিজা মোহাম্মদ আলাউদ্দিন।

এর আগের দিন শুক্রবার দুপুরে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যান একই গ্রামের বাসিন্দা উপজেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম এ শুক্কুর।

এম এ শুক্কুরের বাড়ি থেকে জাসিম উদ্দিনের বাড়ির দূরত্ব প্রায় ছয়শ ফুট।

২০ ঘন্টার ব্যবধানে একই গ্রামের দুইজন ব্যক্তি মারা যাওয়ায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। একইসাথে করোনা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

জসিম উদ্দিনের ভাতিজা মদিনা প্রবাসী হারুন টেলিফোনে প্রতিবেদককে বলেন,
১০-১২ দিন ধরে আমার চাচা জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। লোহাগাড়া সাউন্ড হেলথ হাসপাতালে নিয়মিত চিকিৎসা চলতো।

শুক্রবার (২৯ মে) সন্ধ্যায় শারিরীক অবস্থা খারাপ হলে সাউন্ড হেলথ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক চমেক হাসপাতালে নিয়ে যাবার পরামর্শ দেন।

সাথে সাথে গাড়ি ভাড়া করে চমেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে সিট খালি নাই বলে রোগীকে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরেরদিন সকালে নিয়ে যেতে বলে। পরে সেখান থেকে নগরীর প্রবর্তক মোড়ে অবস্থিত বেসরকারি হাসপাতাল সিএসসিআরে নিয়ে যাই।

তারাও ভর্তি নিতে অস্বীকৃতি জানায়, চারিদিকে এই অবস্থা দেখে ব্যর্থ মনোরথ হয়ে গ্রামে ফিরে যাবার সময় গাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আমার চাচা।

তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, এতোদিন ফেসবুকে বা অনলাইনে চিকিৎসার অভাবে মানুষ মারা যাচ্ছে বলে যা দেখছিলাম, আজ বাস্তবে তা প্রত্যক্ষ করলাম।তিনি আরো বলেন, গতকাল এম এ শুক্কুরকে দাফন করতে আসা সেচ্ছাসেবী টিমকে কল করলে তারাও আজ আমার চাচাকে দাফন করতে আসতে অপারগতা প্রকাশ করে।

আমাদেরকে পিপিই ও মাস্ক পরে লাশ দাফন করার পরামর্শ দিয়েই দায় সেরেছেন তারা।
আজ বাদে আসর পারিবারিক কবরস্থানে জসিম উদ্দিনকে দাফন করার কথা রয়েছে।

জানা গেছে, মৃত জসিম উদ্দিন সৌদি আরবের জেদ্দা প্রবাসী ছিলেন।কয়েক মাস আগে তিনি ছুটিতে দেশে এসেছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি চার ছেলে-মেয়ে, স্ত্রীসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন রেখে যান।

একদিকে দেশে করোনার প্রকোপ বাড়ছে এবং প্রায় প্রতিদিনই মানুষ মারা যাচ্ছে, অন্যদিকে সরকারিভাবে সবকিছু খুলে দেয়ার ঘোষণা আসছে এ পরিস্থিতিতে এলাকার সচেতন মানুষের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।