ইউছুফ আরমান

করোনাভাইরাস নিয়ে উদ্বেগ বিশ্বব্যাপী। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। অদৃশ্য জীবাণু যার নাম করোনা ভাইরাস। যে ভাইরাসের শাসনে সারা দুনিয়ায় আতংক বিরাজ করছে। যে যার মতো অস্থির, নিজে নিজের পরিবার কে গোছিয়ে রাখতে। সবার মনে ভয় অস্ত্র বা সৈনিকের নয়। অদৃশ্য জীবাণুর কাছে পুরা পৃথিবী পরাস্ত। বহু বৈজ্ঞানিক গবেষণার ইতিমধ্যে নাজুক অবস্থা। হিমশিম খাচ্ছে বহু শক্তিশালী রাষ্ট্র। কিন্তু রাজত্ব কায়েম করে যাচ্ছে করোনা ভাইরাস। করোনার আগ্রাসী থাবায় যখন পুরো দেশের মানুষকে ঘরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, তখন ঘরেও অন্য এক আতংকের ভয়ে ভীত হয়ে পড়ছে সবাই। কাজেই আমার দেশের মানুষ এত সচেতন দেখলে শুধু হাসি পায়।

বিশ্বব্যাপী করোনার থাবায় মানবজাতির যখন চরম দুঃসময়; ঠিক তখনই ঈদের খুশিতে মেতে উঠেছে আনন্দ বাঙালী মানুষের প্রাণ। ক্রান্তিলগ্নে মানুষের একাকিত্ব। একাকিত্বের মাঝে খোঁজে আনন্দ উল্লাস। একটি বড় সংখ্যক মানুষ মাস্ক পরছেন না, সামাজিক দূরত্ব মানছেন না, প্রয়োজন ছাড়াই রাস্তাঘাটে ঘোরাঘুরি করছেন। দোকানপাট- বাজার- হাটে নিয়মের কোনো বালাই নেই। আগের মতোই ভীড়, জটলা করে মানুষ ঈদের দিন গুলো কাটছে।

এই যে মানুষ করোনা সংক্রমণের ভয় উপেক্ষা করেই ভিড় করে গ্রামে গেলো ঈদ করতে, শপিংয়ের জন্য ভিড় করছেন এসব দেখে খুব হতাশ লাগে। মানুষ এতো অসাবধান, যেন জীবনের কোন মায়াই নাই। এর ফলে কী ভয়ানক ভবিষ্যতের মুখোমুখি হতে যাচ্ছি আমরা। কিন্তু কিছুই যেন করার নাই।

সময়টা যেন হঠাৎ করে থমকে গিয়েছে। মৃত্যু নামক অনিবার্য সত্যের আতংক আজ অদৃশ্য এক ভাইরাসের জেরে গোট দুনিয়ার মানুষকে একই ছাতার তলায় এনে দাঁড় করিয়েছে। এর শেষ কোথায় জানা নেই কারও।

তবে মরণ এই ভাইরাসের দাপটে হঠাৎ করে পাল্টে গিয়েছে আমাদের জীবনযাত্রা। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে এখন ওয়ার্ক ফ্রম হোমই ভরসা। তবুও নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না মরণ এই ব্যাধিকে।

ফলে দিন যতই যাচ্ছে, ততই সামনে আসছে করোনা সম্পর্কিত নতুন নতুন তথ্য। এই অবস্থায় নতুন করে আতংক তৈরি করছে মরণ করোনা। এক তথ্য সূত্রে খবর, এবার উপসর্গহীনদের পরীক্ষা করলে ৮০ শতাংশের দেহেই মিলবে করোনার জীবাণু। যার ফলে নতুন করে চিন্তার ভাঁজ পড়তে শুরু করেছে জনগণের কপালে।

বলতে পারেন, আতংতকের নয়া ব্র্যান্ড ‘করোনা’। একেবারে রাতারাতি আমাদের শয়নে-স্বপনে-জাগরণে তাড়া করে বেড়াচ্ছে করোনা ভূত। মাস্কের কালোবাজারি হচ্ছে। স্যানিটাইজার বিক্রি হচ্ছে হু হু করে। একেবারে রেকর্ড বিক্রি। এদিকে এঁরা ব্যবসায় লাভ করছেন, ওদিকে মুরগি ব্যবসায়ীদের গালে হাত। লোকজনের মাথায় কোথা থেকে এসেছে কে জানে, তাঁরা মুরগির সঙ্গে করোনা ভাইরাসের আত্মীয়তা বের করে ফেলেছেন। মুরগি ছেড়ে যেই খাসির চাহিদা, অমনি খাসির মাংস বিক্রেতারা দাম বাড়িয়ে দাও মারার চতুর হাসি হাসছেন। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ইচ্ছেমত দরে। কারণ এসব পণ্যের চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ।

সরকারি শুভ প্রচেষ্টার বিরোধিতা না করেও একটা কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায়। উদ্দেশ্য যাই হোক, যে কোনও ধরণের প্রচারই যদি অতি প্রচারে পরিণত হয়, তার ফল আর ইতিবাচক থাকে না। ‘করোনা’ সংক্রান্ত প্রচার এভাবেই কোথাও এক আতংক উদ্রেককারী ভূমিকাও যে পালন করছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।

তবে সংকটময় এই পরিস্থিতিতে আমরা যদি আমাদের পরিবেশবান্ধব অভ্যাসগুলো ত্যাগ না করি, সেটা বরং আমাদের উপকারেই আসবে৷ বিশ্বের কাছে একেবারে নতুন এই ভাইরাসের ওষুধ এখনো আবিষ্কার হয়নি৷ তাই আমাদের ঘরে থেকে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার নীতি মেনে চলে এই ভাইরাস সংক্রমণ থেকে বাঁচতে হবে৷ এই ভাইরাস কিভাবে ছড়ায় সেটাও আমাদের জানতে হবে৷ পরিবেশ নিয়েও হতে হবে সচেতন৷

 

লেখকঃ  কলামিষ্ট, সাহিত্যিক, শিক্ষানবিশ আইনজীবী।