বিদায় নিয়েছে রহমতের মাস রমজান। তাহলে রমজানের আমলগুলো কতদিন আদায় করবে মুমিন? এ সম্পর্কে কুরআনের কোনো দিক নির্দেশনাই বা কী? আল্লাহ তাআলা মুমিন মুসলমানকে আমলি জীবন-যাপনের কথা তুলে ধরে বলেন-
‘মৃত্যু আসা পর্যন্ত তোমার প্রতিপালকের ইবাদাত করতে থাক।’ (সুরা হিজর : আয়াত ৯৯)

তাই কোনো মুমিন ব্যক্তিই যেন রমজানের প্রচণ্ড পরিশ্রম ও ত্যাগের মাধ্যমে সিয়াম-সাধনার পর আবার যেন পূর্বের ন্যায় অন্যায় কাজে লিপ্ত না হই। কেননা আল্লাহ তাআলা রমজানের বিধান পালনে কুরআনে মানুষকে ঈমানদার বলে ঘোষণা দিয়েছেন। আর তাঁকে ভয় করার গুণ অর্জন করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন-
‘হে ঈমাদারগণ! তোমাদের ওপর (রমজানের) রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে তোমাদের আগের লোকদের উপরফরজ করা হয়েছিল। যাতে তোমরা তাকওয়া (আল্লাহকে ভয় করার গুণ) অর্জন করতে পার।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৩)

রমজানের আমলভরা দিনগুলো বিদায় নেয়ার পর মুমিনের আমল তো এক দিনের জন্যও শেষ হওয়ার কথা নয়। যিনি রমজান মাসের মালিক, তিনি তো রমজান পরবর্তী বাকি মাসগুলোর ও মালিক। আল্লাহ তাআলা-
‘আসমান জমিন সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর বিধানে মাসগুলোর সংখ্যা হল বার। তার মধ্যে চারটি নিষিদ্ধ মাস।’ (সূরা আত ত্বাওবাহ : আয়াত ৩৬)

সমগ্র মুসলিম উম্মাহর কর্তব্য হল, তাঁরা রমজান মাসে যে সব নেক আমলের অভ্যাস গঠন করেছে; সেই সব নেক কাজগুলো বন্ধ না করে নিয়মিত তা চালু রাখা। আল্লাহ বলেন-
‘মৃত্যু আসা পর্যন্ত তোমার প্রতিপালকের ইবাদাত করতে থাক।’ (সুরা হিজর : আয়াত ৯৯)

কুরআনের উল্লেখিত আয়াতগুলোর আলোকে বুঝা যায় যে, রমজান চলে গেলেই আমল বন্ধ হবে না বরং তার আমরণ চালিয়ে যেতে হবে। কুরআন ও সুন্নাহর নির্দেশনা এমনই। এ আয়াতের আলোকে উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ উপদেশগুলো মেনে চলা জরুরি। হাদিসে এসেছে-
– ‘আল্লাহর নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় আমল হচ্ছে ঐ আমল, যা নিয়মিত করে যাওয়া হয়; যদিও বা তার পরিমাণ কম হয়।’
– ‘তোমার ঈমানকে খাঁটি কর; অল্প আমলই নাজাতের জন্য যথেষ্ট হবে।
সুতরাং নেক কাজ সামান্য সময়ের জন্য বন্ধ না করে নিয়মিতভাবে করা।

ইতিমধ্যে বিদায় নিয়েছে সবরের মাস, সংযমের মাস, ত্যাগের মাস রমজান। এই সবর, সংযম, ত্যাগই হচ্ছে মুমিনের সম্বল। বলাই বাহুল্য, এ মাসে মুসলমান অনেক প্রচেষ্টা ও শ্রম দিয়ে ইবাদত-বন্দেগি করেছে, তেমনি পরের মাসগুলোতেও যেন সেই প্রচেষ্টা ও পরিশ্রম অব্যাহত থাকে। বান্দার আমল-আখলাক এমন হওয়া উচিত যে, সে যেন পবিত্র রমজান মাসই অতিবাহিত করছে।

– পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাআতের সঙ্গে আদায় করা।
– কুরআন তেলাওয়াত ও অধ্যয়ন করা।
– জিকির-আজকার করা।
– হালাল কাজ করা আর হারাম কাজ বর্জন করা।

তবেই আল্লাহর পক্ষ থেকে রমজানের মতোই অবতীর্ণ হতে থাকবে অফুরন্ত রহমত, বরকত, মাগফিরাত এবং নাজাত।

রমজান মাসে সব রোজাদারেরই নামাজ ও নেক আমলের প্রতি প্রচণ্ড ঝোঁক থাকে। রমজানের ইবাদাতের এ উৎসাহ প্রত্যেককেই ধরে রাখতে হবে। বিশেষ করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাআতের সঙ্গে আদায় করার চেষ্টা করা। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
‘কেয়ামতের ময়দানে সর্বপ্রথম নামাজেরই হিসাব নেয়া হবে। সুতরাং যার নামাজের হিসাব সঠিক হবে, তার অন্যান্য আমলও সঠিক বিবেচিত হবে। নচেৎ পরকালের বিপদের সীমা থাকবে না। (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, আবু দাউদ)

পরিশেষে…
কোনো মুমিন ব্যক্তিই যেন রমজানের প্রচণ্ড পরিশ্রম ও ত্যাগের মাধ্যমে সিয়াম-সাধনার পর আবার যেন পূর্বের ন্যায় অন্যায় কাজে লিপ্ত না হই। ছোট্ট একটি আয়াতে যেভাবে উপমা তুলে ধরেছেন আল্লাহ তাআলা-
‘তোমাদের অবস্থা যেন সেই নারীর মতো না হয়ে যায়, যে নিজ পরিশ্রমে সূতা কাটে এবং তারপর নিজেই তা ছিঁড়ে কুটি কুটি করে ফেলে।’ (সুরা নাহল : আয়াত ৯২)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উদাসিনতা পরিহার করার, পরকালের সফরের জন্য পথের সম্বল তৈরি করার, বছরের বাকি ১১ মাস রমজানের শিক্ষাকে কাজে লাগানোর তাওফিক দান করুন। সবার জন্য আগামী রমজান কবুল করুন।। সবাইকে সবসময় ন্যায় ও কল্যাণের কাজে নিয়োজিত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।