মুহম্মদ নূরুল ইসলামঃ
হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা। হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা. অসীম সাহসী, তেজস্বী, ন্যায়বান, ধর্মভীরু ছিলেন। যদিও ইসলামের শুরুতে তিনি ইসলাম বিরোধী ছিলেন। ইসলাম ধর্মের প্রতি তিনি যেভাবে অনুগত হলেন, তিনি যেভাবে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন তা আপনারা অনেকেই জানেন। কুরাইশরা যখন পদে পদে ইসলাম প্রচারে বাঁধা সৃষ্টি করছে সেই প্রাথমিক অবস্থায় আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইলেন এ বলে যে, “হে আল্লাহ! আবুল হাকাম ইবনে হিশাম (আবু জেহেল) অথবা উমর ইবনুল খাত্তাব, এ দুজনের মধ্য থেকে কোনো একজনকে ইসলামের সাহায্যকারী বানিয়ে দাও।” আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই আবেদনের পরে আল্লাহ উমর ইবনুল খাত্তাবকে ইসলামের সাহায্যকারী করে দেন। অর্থাত উমর ইবনুল খাত্তাব ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন।
হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা. ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা নিযুক্ত হওয়ার দীর্ঘ দিনের পরের ঘটনা। সে সময় রমজান মাস। ঈদ এগিয়ে আসছে। হযরত উমরের স্ত্রী তাঁকে বললেন, ‘সামনে ঈদ ঘনিয়ে আসছে সকল পরিবারের ছেলেমেয়েরা নতুন জামা কাপড় নিয়ে ঈদের ময়দানে যাবে। আপনার সন্তানদের তো নতুন কাপড় নিয়ে ঈদের ময়দানে যাওয়ার আগ্রহ হবে। আপনার সন্তানদের কারো কাছে নতুন কাপড় নেই। আপনি দেখেন না তাদের জন্য নতুন কাপড়ের ব্যবস্থা করতে পারেন কিনা।’
খলিফা হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা. এতে একটু বিচলিত হয়ে বিবিকে বললেন, আমার হাতে তো টাকা নেই নতুন কাপড় ক্রয় করার মতো।
তখন হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা. ও তার স্ত্রী বিবেচনা করে বায়তুল মাল থেকে এক মাসের বেতন এগ্রিম চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। সিদ্ধান্ত অনু্যায়ী খলিফা হযরত উমর রা. বায়তুল মালের অধিকারীকের কাছে এক মাসের বেতন অগ্রিম চেয়ে একটি চিঠি দিলেন। চিঠিতে তিনি পরিবারের সমস্যার কথা ও উল্লেখ করলেন।
তখন বায়তুল মালের দায়িত্বে ছিলেন আর একজন বিখ্যাত সাহাবী হযরত আবু উবায়দা রা.। বায়তুল মালের অধিকারিক আবু উবায়দা রা. খলিফার চিঠি পাঠ করলেন। তিনি খলিফার চিঠি পাঠ করতে গিয়ে চোখের পানিতে তার লম্বা দাঁড়ি ভিজে পানজাবীতে পানি পড়লো। সেদিকে তার খেয়াল নেই। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফার ঘরে টাকা নেই, খলিফার ছেলেমেয়েরা নতুন জামা পড়তে পারবে না, এটা ভাবতেই হযরত আবু উবায়দা রা. এর কান্না আরো বৃদ্ধি পায়। হযরত আবু উবায়দা রা. এক পর্যায়ে কান্না থামালেন। তিনি ভাবতে লাগলেন কি করবেন? পরে তিনি খলিফার কাছে একটি চিঠি লিখলেন।
হযরত আবু উবায়দা রা. খলিফা হযরত উমর ফারুক রা. কে চিঠিতে লিখলেন,” আপনি ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা আপনার সন্তানরা ঈদে নতুন জামা কাপড় পরিধান করতে পারবে না এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ও পরিতাপের বিষয় । আমার ব্যক্তিগত এখতিয়ার থাকলে আমি আপনাকে সাহায্য করতাম। কিন্তু আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে কোনো অর্থ কড়ি নেই। যা আছে তা বায়তুল মালের সম্পদ। বায়তুল মালের অর্থের উপর হাত দেওয়ার কোনো এখতিয়ার আমার নেই। তাই আমি দুটি শর্তে আপনাকে এক মাসের বেতন এগ্রিম দিতে পারবো।
১ নম্বর শর্তঃ আপনাকে জনগণ যে আরো একমাস খলিফার দায়িত্বে রাখবেন তার নিশ্চয়তা দিতে হবে।
২ নম্বর শর্তঃ আপনি যে আগামী একমাস বেঁচে থাকবেন তার নিশ্চিয়তা দিতে হবে।
বায়তুল মাল থেকে এই চিঠি খলিফা হযরত উমর ফারুক রা. এর হাতে পৌঁছানো হলো।
খলিফা হযরত উমর ফারুক রা. চিঠি পড়েন আর চোখের পানিতে দাঁড়ি ভিজে শরীরের পাঞ্জাবীও ভিজে যাচ্ছে সে দিকে তাঁর খলিফার খেয়াল নেই।
হয়রত উমর ফারুক রা. চিঠি পড়া শেষ করে আল্লাহর দরবারে হাত তুলে বলেন, “হে পরোয়ারদিগার তোমার কাছে লাখো-কোটি শুকরিয়া তুমি হযরত আবু উবায়দা রা. এর মতো একজন সাহাবীকে ইসলামের খেদমতে নিয়োজিত রেখেছো। ” রাব্বুল আলামীন তুমি ইসলামী রাষ্ট্রের তহবীলের জন্য এরকম একজন আবু উবায়দা সৃষ্টি করে দিও।
বিদ্র. এখান থেকে যে বিষয়টি আমাদের জন্য শিক্ষনীয় তা হচ্ছে, “কোনো রাষ্ট্রের কোষাগারের মালিক রাষ্ট্র প্রধান বা সরকার প্রধান নয়। এর মালিক জনগণ। বায়তুল মালের প্রতিটি অর্থের হিসাব শেষ বিচারের দিন আল্লাহর কাছে দিতে হবে।
আল্লাহ আমাদেরকে আমল করার তওফিক দান করুন। আমিন।

মুহম্মদ নূরুল ইসলাম
লেখক ও গবেষক।