খলিল চৌধুরী, সৌদি আরব ##
সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আজকে রবিবার পবিত্র ঈদুল ফিতর পালিত হচ্ছে। তবে করোনা মহামারীর করেন অন্যরকম এক ঈদ উদযাপনের সম্মুখীন হয়েছেন মুসলিম বিশ্ব। লকডাউন আর কারফিউর মধ্যে কোনো প্রকার জামায়েত ছাড়াই ঈদ উদযাপন করছেন প্রবাসীরা।
নেই কোলাহল। নেই কোন ব্যস্ততা একমাস সিয়াম সাধনার পর কারফিউ আর লকডাউনের মধ্যেই ঘরেই ঈদের নামাজ পড়তে হয়েছে তাদের।
এ বছর অন্যরকম একটি ঈদ উদযাপন করছে। বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের জন্য এমন বিবর্ণ ঈদ আগে কখনো আসেনি। এবারের ঈদ কষ্টের, বেদনার। এবারের ঈদ স্বজন হারানোর এবং বন্দিদশার মধ্যে ঈদ হয়েছে।
করোনা দিনের ব্যতিক্রমী এক ঈদ পালন করেছে সৌদি আরব৷ কারণ সৌদি আরব কারফিউ ২৯ মে পর্যন্ত চলবে ২৪ ঘন্টা। সুতরাং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে সবাইকে। সৌদি আরব জুড়ে কোথাও ঈদের জামাত হইনি । ঘরে বসেই ঈদের নামাজ পড়তে হয়েছে।
ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানে নতুন পোশাক। ঈদ মানে মায়ের কাছে যাওয়া। ঈদ মানে স্বজন আর বন্ধুদের মিলনমেলা, হৈ-হুল্লোড়, ঘুরে বেড়ানো। কিন্তু এবার সেই অনাবিল আনন্দের আবহ নেই। খুশির জোয়ারও নেই। সবকিছু থমকে গেছে। দেশে বিদেশে অনেকে মারা গেছেন। অনেকেই হাসপাতালে রোগ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। স্বজন হারানোর বেদনা সর্বত্র। এই বৈশ্বিক মহামারী পৃথিবী থেকে খনিকের জন্য যেন সব আনন্দ তোলে নিয়ে গেছে। এর ব্যতিক্রম নয় প্রবাসীরাও কিন্তু তবুও ঈদ এসেছে।
আমরা যারা দূর প্রবাসে থাকি এখানেও রোজা আসে, তারাবিহ, ইফতার পার্টি সবকিছুই হয়। কিন্তু কোনোভাবেই তা দেশের মতো না। দেশে যেমন রোজা শুরু হলেই একটা উৎসবের আমেজ তৈরি হয়। কেনাকাটা, ঈদের বোনাস, লাইটিং, ঈদ ফ্যাশন, ঈদ সংখ্যা পত্রিকা, টিভিতে ঈদের বিশেষ অনুষ্ঠান, ঈদ পুনর্মিলনী, সিনেমা হলে নতুন সিনেমা মুক্তি পাওয়া কত কী। প্রবাসে এসব কিছুই নেই।
প্রবাসে ঈদের দিনটা সাপ্তাহিক ছুটির দিনে হবে কিনা এই নিয়ে চলে গবেষণা। কারণ এদিন ঈদ হলে কাজে যেতে হবে। দেশে যখন সবাই ঈদ উৎসবে মেতে থাকবে তখন প্রবাসে আমাদের থাকতে হয় কর্মস্থলে। কখন ঈদের দিনটা চলে যায় টেরও পাওয়া যায় না।
যে যুবকটি তার সদ্য বিবাহিত স্ত্রীকে দেশে রেখে এসেছেন, তার খুব কষ্টে চোখের কোনে জল যাদের বৃদ্ধ মা-বাবা, ভাই-বোন রয়েছে দেশে, নির্জন মুহূর্তে সে ফেলছে চোখের পানি ।বিশেষ করে প্রবাসী মেয়েরা ভীষণভাবে মনে করছে তার আত্মীয়-পরিজনকে। কেউ কেউ ঈদের দিন কাজের মধ্যেই আনমনা হয়ে পড়েছেন অনেকেই ঈদের দিনে আপনজনদের ফোন করছেন সার্কিটগুলো ব্যস্ত হয়ে পড়েছে যে মায়ের একমাত্র মেয়ে বা একমাত্র ছেলে বিদেশ থেকে ফোন করছে সেই মার কণ্ঠ জড়িয়ে আসছে আবেগরুদ্ধ কান্নায়। যে ব্যক্তি অনেকদিন তার স্ত্রী-সস্তানকে রেখে এসেছেন তার বুকটা ভেঙে যাচ্ছে কান্নায়।
এই করোনার কারণে সৃষ্ট অভাব আমাদের আবার স্মরণ করিয়ে দিল ‌সাধ্যের বাইরে যে সাধ তা কোনো কালে পূরণ হওয়ার নয়, সাধ্যের মধ্যেই আছে সকল সত্য। আসুন সবাইকে সঙ্গে নিয়ে বাঁচি। আর সেটাই হবে এই করোনা আক্রান্ত পৃথিবীতে ভার্চুয়াল ঈদের আনন্দ।