মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

বাংলাদেশ এডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশনের সভাপতি, বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব কক্সবাজারের সন্তান হেলালুদ্দীন আহমদ এর ৫৭তম জন্মদিন আজ শনিবার ২৩মে। ১৯৬৩ সালের ২৩মে কক্সবাজার সদর উপজেলার তৎকালীন বৃহত্তর ঈদগাহ ইউনিয়ন বর্তমানে ইসলামাবাদ ইউনিয়নে ফাঁহসিয়াখালী গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।

সেই ৫৭বছর আগে ভূমিষ্ট হওয়া পৃথিবীর আলো দেখা শিশুটি ক্রমান্বয়ে হয়ে উঠেন স্বপ্নবাজ আইকন হেলালুদ্দীন আহমদ। হেলালুদ্দীন আহমদ
শুধু কক্সবাজারের কৃতি সন্তানের মধ্যে আবদ্ধ নেই আজ, তিনি দেশের নীতিনির্ধারণী ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম একজন।
উনার সারল্য, মানবিকতা, উদারতা, জনবান্ধব কর্তা, মিষ্টভাষি, নেত্রী বান্ধব, সর্বোপরি পেশাগত কর্মদক্ষতা দিয়ে জয়জয়কার করে তুলেছেন নিজের যোগ্যতাকে। আর কি নেই ওনার মাঝে, নন্দন চিন্তা দিয়ে জয় করে চলেছেন পুরো বাংলা। তাই তিনি একজন কক্সবাজারবাসীর গর্বের হেলালুদ্দীন আহমদ।

হেলালুদ্দীন আহমদ একজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, যিনি বর্তমানে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সচিবের দায়িত্ব থেকে পরিচালনা করেছেন।

কক্সবাজারের ভূমিসন্তান এই মানুষটি কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় হতে ১৯৭৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন মেধার স্বাক্ষর রেখে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণিবিদ্যায় সম্মানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন কৃতিত্বের সাথে। পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ওরিয়েন্টেশন ডিগ্রি লাভ করেন।

দেশের সবচেয়ে অভিজাত ও সিদ্ধান্তগ্রহনকারী ক্যাডার হিসাবে পরিচিত বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে (বিসিএস) প্রশাসন ক্যাডারে সফলতার উত্তীর্ণ হয়ে যোগ দেন বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে ১৯৮৮ ফেব্রুয়ারিতে। এই যোগদানের মধ্যদিয়ে শুরু হয় স্বপ্নবাজের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা।
৭ম বিসিএস ১৯৮৫ ব্যাচের সফল এই কর্মকর্তা কর্মজীবনের শুরুতে প্রথমে সহকারী কমিশনার হিসেবে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি সহকারী কমিশনার (ভূমি), প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট, সিনিয়র সহকারী কমিশনার, ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা, উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট, কগনিজেন্স ম্যাজিস্ট্রেট, রাঙ্গামাটি জেলার নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি), চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এর মত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে সর্বক্ষেত্রে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন।

এভাবেই শুরু হয় হেলালুদ্দীন আহমদ এর সামনে এগিয়ে যাওয়া। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হিসেবে চার উপজেলা- যথাক্রমে রুমা উপজেলা, হাটহাজারী, পূর্বধলা এবং লামা উপজেলায় দায়িত্ব পালন করেন। তিনি হবিগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম), চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের একান্ত সচিব, বাংলাদেশ চা বোর্ডের উপ সচিব, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন অতি সাফল্যের সাথে।

হেলালুদ্দীন আহমদ জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ফরিদপুর জেলায় কর্মরত ছিলেন। এছাড়া বাংলাদেশ ওভারসিস এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের (বোয়েসেল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। ২০১৩ সাল থেকে যথাক্রমে রাজশাহী ও পরে ২০১৬ সাল থেকে ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তৃণমূল চষে বেড়ানো এই কর্মঠ মানুষটি একদিন চলে আসেন দেশের কেন্দ্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে। ২০১৭ সালের ৩০ জুলাই বাংলাদেশ সরকার নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করে এবং ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে সচিব মর্যাদায় তাঁকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এই মানুষটি কমিশনে থাকাকালিন নির্বাচন কমিশনকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে গেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সকলে এখন মন্তব্য করেন। যা নির্বাচন কমিশনের স্বর্ণযুগ হিসেবে ইতিহাসে লেখা থাকবে বলে তাঁদের ধারণা।

২০১৯ সালের ২৬ মে তাঁকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়। ২০২০ সালের ২৭ জানুয়ারী তিনি সিনিয়র সচিব হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন এবং আগের দপ্তরেই তিনি পদায়িত হন। চলমান বৈশ্বিক মহামারী করোনা সংকটে হেলালুদ্দীন আহমদকে তাঁর নিজের জেলা কক্সবাজারে ত্রাণ কার্যক্রম সহ সার্বিক সমন্বয়কারীর দায়িত্ব দেওয়া হয়।

২০১০ সালের ৬ই মার্চ শ্রেষ্ঠ বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন হেলালুদ্দিন আহমদ। দেশি-বিদেশি অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত এই কর্মবীর ভূমি ব্যবস্থাপনায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ একই বছরের জুলাইয়ে শ্রেষ্ঠ বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে পাবলিক সার্ভিস ইনোভেশন পুরস্কার লাভ করেন।
তার দায়িত্বশীলতা, পেশাদারিত্ব ও অসাধারণ যোগ্যতা সিভিল প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদটিতেও বসার জন্য তাঁকে হাতছানি দিচ্ছে।

এই কৃর্তিমান পুরুষের ৫৭তম জন্মতিথিতে কক্সবাজার জেলার প্রথম অনলাইন নিউজ পোর্টাল কক্সবাজার নিউজ ডটকম (সিবিএন) পরিবারের পক্ষে সম্পাদক অধ্যাপক আকতার চৌধুরী তাঁকে অফুরান শুভেচ্ছো জনিয়েছেন। সিবিএন পরিবার আজকের এদিনে তিনি সহ তাঁর পরিবারের সকল সদস্যের সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু ও সার্বিক সফলতা কামনা করেছেন। তাঁর যোগ্য ও বলিষ্ট কর্মদক্ষতায় বাংলাদেশ আরো অনেক দূর এগিয়ে যাক। এই প্রত্যাশাই থাকলো।

(তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন : গণমাধ্যম কর্মী আজাদ মনসুর।)