চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:

রূপালী সম্পদের খনি খ্যাত দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র চট্টগ্রামের হালদা নদীতে ডিম ছেড়েছে কার্প জাতীয় মা মাছ। শুক্রবার হালদার ডিম সংগ্রহকারীরা গত ১২ বছরের মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ ডিম আহরণ করেছে। রেকর্ড পরিমাণ ডিম আহরণের পর হালদার দু পাড়ের ঘরে ঘরে চলছে ‘ঈদ আনন্দ’।

হালদা পুরনো রূপে ফিরে যাওয়ায় খুশি ডিম আহরণকারী থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্টরা। সম্মিলিত প্রচেষ্টার কারণেই হালদা হারানো যৌবন ফিরে পাচ্ছে বলে মনে করেন তারা।

জানা যায়, কয়েকদিন আগে নমুনা ডিম ছাড়ার পর থেকেই হালদা পাড়ের ডিম সংগ্রহকারীরা প্রস্তুতি নিতে থাকে ডিম আহরণের। বৃহস্পতিবার রাতে মা মাছ ফের নমুনা ডিম ছাড়লে নদীর দুপাড়ে শুরু হয় অপেক্ষা। হালদা নদীর গড়দুয়ারা, কান্তার আলী চৌধুরী ঘাট, সত্তার ঘাট, অংকুরী ঘোনা, মদুনাঘাট, নাপিতের ঘোনা ও মার্দাশাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকে হালদা পাড়ের ৬১৫ ডিম সংগ্রহকারী। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ২৮০ নৌকা দিয়ে সংগ্রহ শুরু হয় ডিম আহরণ। একটানা কয়েক ঘন্টা হালদার বিভিন্ন পয়েন্টে চলে ডিম আহরণ।

একেক জন ডিম সংগ্রহকারী ৩০ থেকে ৫০ কেজি পর্যন্ত ডিম আহরণ করে। সব মিলিয়ে এবার হালদা থেকে আহরণ করা ডিমের পরিমাণ ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি। যা গত ১২ বছরে রেকর্ড সর্বোচ্চ ডিম আহরণ। হালদার গত কয়েক বছরের ডিম সংগ্রহের পরিসংখ্যানে দেখা যায় ২০১৯ সালে ৭ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়। এর আগে ২০১৮ সালে ২২ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৭ সালে ১ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৬ সালে ৭৩৫ কেজি (নমুনা ডিম) কেজি ওই বছর পুরো মাত্রায় ডিম ছাড়েনি, ২০১৫ সালে ২ হাজার ৮০০ কেজি এবং ২০১৪ সালে ১৬ হাজার ৫০০ কেজি, ২০১৪ সালে পাঁচশ কেজি, ২০১৩ সালে ৬২৪ কেজি এবং ১২ সালে ১৬শ’ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়।

এ প্রসঙ্গে রাউজানের সাংসদ ও রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ.বি.এম ফজলে করিম চৌধুরী বলেন, “হালদা নদীকে পুরনো রূপে ফিরিয়ে নিতে আমরা নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। প্রত্যেক বছর হালদায় আমরা ব্যাপক পরিমাণ মাছের পোণা ছেড়েছি। যার ফলে এবার আমরা আশানুরূপ ডিম সংগ্রহ করতে পেরেছি। হালদায় মা মাছ শিকার রোধে আমরা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করার ব্যবস্থা নিয়েছি। তাছাড়া, হালদাকে ‘বঙ্গবন্ধু ন্যাশনাল হেরিটেজ’ ঘোষণার জন্য প্রস্তাব করেছি।”

হালদার ডিম সংগ্রহকারী এক জেলে বলেন, ‘অনেক বছর পর হালদা পুরনো রূপে ফিরেছে। এবার প্রচুর ডিম সংগ্রহ করেছি। গত ১০ বছরে এবারের মত ডিম পাইনি।’

রূপালী সম্পদের খনি হিসেবে খ্যাত হালদা নদী থেকে সংগ্রহ করা কার্প জাতীয় মাছের ডিম দিয়ে এক সময় চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার মাছ চাষিদের পোনার চাহিদা পূরণ করতো হালদা নদী। কিন্তু গত কয়েক দশক ধরে দুষণ ও আগ্রাসনের কবলে পড়ে ঐতিহ্য হারাতে বসে হালদা। এক সময় ডিম সংগ্রহ প্রায় শূণ্যের কোটায় চলে আসে। কিন্তু সরকারি বেসরকারি নানান মুখী তৎপরতার কারণে ফের হারানো ঐতিহ্য ফিরে পেতে থাকে হালদা।