আবুল কালাম চট্টগ্রাম :
চট্টগ্রামে দুইটি হাসপাতাল চট্টগ্রাম মেডিকেল (চমেক)হাসপাতাল এবং নগরীর খুলশী এলাকায় হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে করোনাভাইরাস কোভিট-১৯ চিকিৎসা সেবার জন্য ২০০টি শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার( ২১ মে) সকালের দিকে এ দুটি হাসপাতালে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন নগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক স্বাস্থ্য ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির,চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এসএম হুমায়ুন কবির।

এদিকে প্রাথমিকভাবে একশ শয্যায় চিকিৎসা কার্যক্রম চালু হলেও আলাদা ব্লকে শীঘ্রই ভেন্টিলেটরসহ দশটি আইসিইউ শয্যা স্থাপন করা হবে। চমেক হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন ঠিক করা হয়েছে। কম সময়ের মধ্যেই আইসিইউবসানোর কাজ শেষ করা হবে- জানিয়েছেন চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এসএম হুমায়ুন কবির।

চমেক হাসপাতাল প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে- হাসপাতালের নিচতলায় জরুরি বিভাগের পার্শ্ববর্তী তিনটি ওয়ার্ড (ক্যাজুয়াল্টি, ফিজিক্যাল মেডিসিন এবং চর্ম ও যৌন রোগ) এরই মধ্যে সেখান থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। সে হিসেবে হাসপাতালের মূল প্রবেশ পথে (নিচতলার ন্যায্য মুল্যের ওষুধের দোকান থেকে জরুরি বিভাগ পর্যন্ত) বাম পাশের পুরো ব্লকটি করোনা ব্লক হিসেবে প্রস্তুত করে তুলেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এই অংশের অবজারভেশন সেলে আগে থেকেই ৩০টি শয্যা বসানো আছে। এর সাথে আরো ৬০ থেকে ৭০টি শয্যা এখানে বসানো হয়েছে। সবমিলিয়ে আলাদা ব্লকে প্রাথমিক পর্যায়ে ১০০টি শয্যায় করোনা রোগীদের চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে হাসপাতাল প্রশাসন। নতুন নিয়োগ পাওয়াদের মধ্য থেকে ১৬৬ জন নার্স পেয়েছে চমেক হাসপাতাল। মঙ্গলবার ৩০ জন চিকিৎসককে পদায়ন করা হয়েছে।

এর আগে গত ১৫ মে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চমেক হাসপাতালের আলাদা ব্লকে করোনা রোগীর চিকিৎসায় অনুমোদন দেয়া হয়। ১৬ মে অনুমোদন সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের চিঠি হাতে পায় হাসপাতাল প্রশাসন। অন্যান্য সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা কার্যক্রম অব্যাহত রেখে সম্পূর্ণ আলাদা ব্লকে করোনা রোগীদের চিকিৎসা প্রদানের অনুমোদনের কথা বলা হয় চিঠিতে। আর অন্যান্য সাধারণ রোগীদের সেবা না দিয়ে কোনভাবেই ফেরত দেয়া যাবে না বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে বেসরকারি উদ্যোগে প্রস্তুত করা হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতাল। ২০ টি আইসিইউসহ এর বেড সংখ্যা হবে মোট ১০০টি নিয়ে চালু করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চমেক হাসপাতালেও ডেডিকেটেড ১০০ বেডের করোনা ইউনিট চালুর নির্দেশ দেয়। একই দিন হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালটিকে জেনারেল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনায় চালু করার নির্দেশনা দেওয়া হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে। করোনা রোগীদের চিকিৎসায় প্রস্তুত হওয়া বিশেষায়িত হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতাল সরকারিভাবে স্থানীয় পর্যায়ের চিকিৎসক-নার্সসহ সকল জনবল সংযুক্ত করে চালু করার নির্দেশনা দিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়।

এর আগে গত ২০ এপ্রিল হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালকে সংস্কার করে তা নিজস্ব অর্থায়নে করোনা রোগীদের সুচিকিৎসায় ১০০ শয্যার বিশেষায়িত কোভিড হাসপাতাল হিসেবে প্রস্তুত করেন চট্টগ্রাম প্রাইভেট ক্লিনিক ওনার্স এসোসিয়েশন। যা গত ২৫ এপ্রিল চালু করার কথা ছিল। কিন্তু পরিচালনা ও জনবল নিয়োগের দ্বিমতে জটিলতা দেখা দেয়। এরপর দফায় দফায় স্বাস্থ্য বিভাগ ও সংগঠনটিসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাথে একাধিক বৈঠকেও সুরহা হয়নি।

সর্বশেষ গত ৫ মে সিটি মেয়রের নেতৃত্বে চট্টগ্রামের সকল সরকারি-বেসকরারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে বসা বৈঠকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের অধীনে চালু করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু তাতেও দ্বিমত আসে। তবুও এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের পরামর্শ ও অনুমতি চায় স্বাস্থ্য দপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগ। যার জন্য একটি প্রস্তাবনাও পাঠানো হয় এখান থেকে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় থেকে আসা নির্দেশনায় বলা হয় চমেক হাসপাতাল নয়, চট্টগ্রামের ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের অধীনে চালু করা হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (হাসপাতাল) মো. সিরাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালকে’ কোভিড-১৯ ডেডিকিটেড হাসপাতাল হিসাবে চালুকরণের অনুমোদন দেওয়া হলো। তবে শর্ত থাক যে, স্থানীয়ভাবে সকল ধরনের জনবল সংযুক্ত করে হাসপাতালটি পরিচালনা করতে হবে। তবে, একজন সহকারী পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে তত্ত্বাবধায়ক, ২৫ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল চট্টগ্রামের অধীনে দায়িত্ব পালনের জন্য স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় অথবা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহযোগিতা গ্রহণ করা যেতে পারে।

একই সাথে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় বিভাগীয় ও জেলা কমিটির সাথে সমন্বয় করে সার্বিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। যা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের অর্থনৈতিক কোডের অধীনে বাজেট বরাদ্দের জন্য প্রস্তাব করা যেতে পারে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।