শুভজ্যোতি ঘোষ
বিবিসি বাংলা, দিল্লি
ভারতে ইসলামের সবচেয়ে প্রভাবশালী ধর্মীয় শিক্ষাকেন্দ্র দারুল উলুম দেওবন্দ তাদের এক নির্দেশিকায় মুসলিমদের এবার নিজেদের ঘরের ভেতরেই ঈদ পালন করতে বলেছে।
দেওবন্দ বলেছে, মহামারি ঠেকাতে এবারের ঈদে বড় জমায়েত থেকে দূরে থাকাই সমীচীন হবে।
সাবেকি পদ্ধতিতে প্রতিবারের মতো সবাইকে নিয়ে যাতে ঈদ উদযাপন না-করা হয়, সে জন্য ‘হ্যাশট্যাগ নো ঈদ সেলিব্রেশন’ কিংবা ‘হ্যাশট্যাগ নো নিউ ক্লোদস ইন ঈদ’ সোশ্যাল মিডিয়াতেও ট্রেন্ড করছে।
সতেরো কোটিরও বেশি মুসলিম থাকেন যে দেশে, সেই ভারতে ঈদের উদযাপন দেশের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবগুলোর একটি।
কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারি ঠেকাতে যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নিদান সারা দেশকে মেনে চলতে বলা হচ্ছে, তাতে সাড়া দিয়ে ইসলামের ধর্মীয় নেতারাও এবারে শুধু নিজের পরিবারের ও বাড়ির বৃত্তেই ঈদ পালন করার ডাক দিচ্ছেন।
জামিয়া মিলিয়া ইউনিভার্সিটির প্রফেসর এমেরিটাস আখতারুল ওয়াসি বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “আমরা মানবসভ্যতার ইতিহাসে এক নজিরবিহীন সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। আর সে কারণেই দেওবন্দের সিদ্ধান্তকে আমাদের স্বাগত জানানো উচিত।”
“ভারত তথা দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিমদের তারা যে ঘরের চার দেওয়ালের মধ্যেই ঈদ পালন করতে বলেছেন – তাদের সেই সাহস ও প্রজ্ঞাকে সম্মান জানাই।”
“মিশর ও সৌদি আরব তো এর আগেই ঈদের ছুটিতে কারফিউ ঘোষণা করেছে, তুরস্কও বলেছে অন্যবারের মতো ঈদ পালন করা যাবে না।”
“আসলে ঈদ মানে হল যে দিনটা জীবনে ফিরে ফিরে আসে – কিন্তু মনে রাখতে হবে জীবন আমরা মাত্র একবারই পাই। জীবন গেলে আর ফিরে আসে না – এবং কোনও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানই জীবনের চেয়ে দামী নয়।”
এবারের ঈদে যাতে সব বাহুল্য বর্জন করা হয়, শখের জিনিস কেনাকাটা না-করা হয় ভারতের সোশ্যাল মিডিয়াতে সেই আওয়াজও উঠছে।
রীতিমতো ট্রেন্ড করছে ‘নো নিউ ক্লোদস, জাস্ট ওয়্যার ইওর বেস্ট ক্লোদস’ – অর্থাৎ নতুন জামাকাপড়ের কোনও দরকার নেই, পুরনো ভাল একটা পড়লেই যথেষ্ঠ।
অনেকেই ডাক দিচ্ছেন ঈদে বরং পারলে গরিব একটি বাচ্চার স্কুলের ফি মিটিয়ে দেওয়া হোক, দরিদ্র কোনও পরিবারের বাড়িভাড়া মওকুফ করা হোক।
মুসলিম লেখিকা ও অ্যাক্টিভিস্ট নাজিয়া ইরাম বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “লকডাউন কিছুটা শিথিল করা হলেও দেশে যেভাবে রোজ করোনাভাইরাস পজিটিভ রোগীর সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে তাতে আমরা ঈদে কিছুতেই বড় জমায়েত হতে দিতে পারি না।”
“আর এই সঙ্কট দেশের কোটি কোটি মানুষকে অভাবনীয় বিপর্যয় ও ক্ষতির মুখে দাঁড় করিয়েছে, পরিযায়ী শ্রমিকরা অবর্ণনীয় বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে – সেখানে সহনাগরিকদের সাহায্য করার জন্য ঈদ-উল-ফিতর এক চমৎকার সময়।”
“ফিতর মানে অন্যের প্রতি সব ধরনের ভাল কাজ, আর এবারের ঈদ তো সেটারই সুযোগ!”, বলছিলেন নাজিয়া ইরাম।
‘ঘরের ভেতরে ঈদ’ কি নজিরবিহীন?
কিন্তু দিল্লির জামে মসজিদে, কলকাতার রেড রোডে বা শ্রীনগরের ঈদগাহ ময়দানে যে ধরনের বিশাল ঈদের নামাজ দেখতে সবাই অভ্যস্ত, তার ব্যতিক্রম হওয়ারও কি নজির রয়েছে?
অধ্যাপক ওয়াসি জানাচ্ছেন, “ঠিক এবারের মতো না-হলেও অতীতে কিন্তু যখন প্রবল বর্ষায় ঈদ হয়েছে, আমাদের আলেম-উলেমারা বলেছেন প্রধান মসজিদে বা ঈদগাহ-র মাঠে জড়ো হতে হবে না, পাড়ার ছোট মসজিদেই ঈদের নামাজ আদায় করে নিন।”
“ফলে বুঝতে হবে, এখন যা ঘটছে তা আমাদের হাতে নেই, এটা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আল্লাহ্ আমাদের শুধু সেই সব আচরণেরই কৈফিয়ত তলব করবেন, যেগুলো আমাদের হাতে ছিল।”
ভারতে এখন নতুন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হচ্ছেন রোজ পাঁচ-ছহাজার করে।
আর এই উদ্বেগ আর আতঙ্কের বাতাবরণেই দেশের কোটি কোটি মুসলিম প্রস্তুতি নিচ্ছেন সম্পূর্ণ এক ভিন্ন ধরনের, ব্যতিক্রমী ঈদের।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।