এ কে এম ইকবাল ফারুক, চকরিয়া ##

চকরিয়ায় নদীর পার্শ্ববর্তী জেগে উঠা প্রায় চার একর (১০ কানি) খাস জমি দখলে নিতে রাতের আঁধারে একটি গ্রামের ২৬টি বসতবাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় ৪৪ জনের নাম উল্লেখ পূর্বক চকরিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের খিলছাদক ডাঙ্গারচর এলাকার বাসিন্দা ও অগ্নিকান্ডে পুড়ে যাওয়া বাড়ির মালিক জমির উদ্দিন বাদী হয়ে গত ১৫ মে এ মামলাটি দায়ের করেন।

এদিকে ২৬টি বসতঘর পুড়িয়ে দেয়া ও বাড়িঘর লুটপাটের ঘটনা পাঁচ দিন অতিবাহিত হলেও এ পর্যন্ত সরকারীভাবে সামান্য চাল ও কয়েকবান টিন ছাড়া আর কোন কিছুই কপালে জুঠেনি এসব ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর। ফলে রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবারের কয়েকশত নারী-পুরুষ ও শিশু বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

সোমবার (১৮ মে) দুপুরে সরেজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।

গত ১৪ মে’র ঘটনায় জীবনের সব কিছু শেষ হয়ে গেছে ডাঙ্গারচর এলাকার ২৬টি পরিবারের। এ ঘটনার পর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ সহায়তা হিসেবে ২০ কেজি চাল ও দুই বান ডেউটিন বরাদ্দ দেয়া হলেও অনেকেই তা পায়নি। আবার এসব সহায়তা বাড়ি নির্মানের জন্য পর্যাপ্ত না হওয়ায় নগদ টাকার অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন বাড়ি নির্মাণ করতে না পেরে খোলা আকারে নিচে বসবাস করছে।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকজন বলেন, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়ার পর দূবৃত্তরা সবকিছু লুট করে নিয়ে যাওয়ায় বর্তমানে এসব পরিবারের লোকজন খেয়ে না খেয়ে রমজানের দিন অতিবাহিত করছে। আবার অনেকের ঘরে চাল না থাকায় তারা রোজার সেহেরী পর্যন্ত খেতে পারছেনা। যারা কষ্ট করে রোজা রাখছেন তারা সন্ধ্যায় ইফতারীর সময় পানি পান করে ইফতার সারছেন।

দূবৃত্তদের আগুনে সর্বস্ব খোয়ানো বাড়ির মালিক কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের খিলছাদক ডাঙ্গারচর এলাকার নুরুল হোসাইনের ছেলে কৃষক মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, গত ১৪ মে ভোর রাতে সেহেরীর পরপরই দূবৃত্তদের দেয়া আগুনে ২৬টি বসত ঘর পুড়ে যাওয়া এবং আগুনে পুড়ে এক নারী নিহতের ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হলেও প্রশাসনিক চাপের মুখে ঘটনার মূল আসামীদের বাদ দেয়া হয়েছে। ফলে এসব দূবৃত্তদের হুমকীর মুখে এখনো নিরাপত্তহীনতায় ভুগছেন ২৬টি পরিবারের লোকজন। আগুনে সর্বস্ব খোয়ানো বাড়ির মালিক জসিম উদ্দিন অভিযোগ করেন, গত ৭ মে দূর্ত্তরা ফাঁকাগুলি বর্ষণ করে নদীর পার্শ্ববর্তী জেগে উ্ঠা চর দখলের চেষ্ঠা চলায়। এ সময় দূর্ত্তদের গুলিতে চারজন গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ ওসমানের পিতা নুরুল হোসাইন বাদী হয়ে দূবৃত্তদের বিরুদ্ধে চকরিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করলেও পুলিশ এ ব্যাপারে নীরব দর্শকের ভুমিকা পালন করায় দূবৃত্তরা পুনরায় এ ধরণের বর্বর কর্মকান্ড চালানোর সাহস পায়। ফলে এ ঘটনার জন্য প্রশাসন কখনো তাদের দায়িত্ব এড়াতে পারেন না।

প্রসঙ্গত: চকরিয়া উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের খিলছাদক ডাঙ্গারচর এলাকায় প্রবাহমান একটি খালের জেগে উঠা চর (খাস জমি) দখলে নিতে গত ১৪ মে (বৃহস্পতিবার) ভোররাত চারটা থেকে ব্যাপক তান্ডব চালায় দূবৃত্তরা। পার্শ্ববর্তী বরইতলী ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান জালাল আহামদ সিকদারের প্রত্যক্ষ ইন্দনে একই ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের গোবিন্দপুর এলাকার বাসিন্দা দিদার মেম্বারের নেতৃত্বে ৪৫০/৫০০ শতাধিক দূবৃত্ত অন্তত ৫০টি বিভিন্ন ধরণের অবৈধ অস্ত্র নিয়ে কয়েকশত ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে প্রথমে ওই গ্রামে প্রবেশ করার পর এলাকায় ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। পরে চার ঘন্টা ধরে ব্যাপক লোটপাট চালিয়ে দেড় হাজার মণ ধান, কয়েক’শ মণ মরিচ, আলু ও শিমের বিচি, ৫০ মণ মতো চাল, ৩৫/৪০টির মতো গবাদিপশু, তিনটি মোটরসাইকেল, ২৪টি টিউবওয়েল, ফ্রিজ, টেলিভিশন এবং বাড়ির বিভিন্ন আসবাবপত্র ও নগদ টাকাসহ অন্তত কয়েক কোটি টাকার সম্পদ লুট করে নিয়ে যায়। লুটপাটের পর ২৬টি বাড়ি একের পর এক আগুন ধরিয়ে দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় দূবৃত্তরা। এ সময় আগুনে পুড়ে মারা যায় মনোয়ারা বেগম (৫০) নামে এক নারী। তিনি ওই এলাকার মোজাহের আহামদের স্ত্রী। এছাড়া দূবৃত্তদের এলাপাতাড়ি গুলি ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নারী-পুরুষসহ অন্তত ১৫ ব্যক্তি আহত হয়। তাদেরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনার একদিন পর ক্ষতিগ্রস্থ বাড়ির মালিক জমির উদ্দিন বাদী হয়ে ৪৪ জনের নাম উল্লেখ পূর্বক চকরিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় এজাহার নামীয় ৭জন আসামীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।