সিবিএন ডেস্ক:
করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসায় শহীদ আফ্রিদিকে নিয়ে ধন্য ধন্য পড়ে গিয়েছিল কিছুদিন আগেই। এমনকি সাবেক পাকিস্তানি অলরাউন্ডারের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ভারতীয় দুই সাবেক ক্রিকেট তারকা হরভজন সিং ও যুবরাজ সিংও। কিন্তু কি এমন হলো যে, আফ্রিদির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার মতো ঘোষণা দিতে হলো হরভজনকে?

ঘটনার সূত্রপাত আফ্রিদির সাম্প্রতিক এক মন্তব্য ঘিরে। পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ভ্রমণে গিয়ে ভারত এবং দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন আফ্রিদি। তার এবারের বিতর্কিত মন্তব্য ভারতে রীতিমত সমালোচনার ঝড় তুলেছে।

প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সেনাসদস্যের এক ক্যাম্পে সেনাদের উদ্দেশে কথা বলছেন আফ্রিদি। আফ্রিদি বলেন, ‘পুরো বিশ্ব এখন ভয়ঙ্কর এক রোগে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হচ্ছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় রোগ মোদীর (ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী) মনে। আর সেই রোগ ধর্মের রোগ। ধর্মকে ব্যবহার করে তিনি ক্ষমতায় আছেন। আর আমাদের কাশ্মীরি ভাইদের ওপর তিনি অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছেন। এর জবাব তাকে দুনিয়া এবং পরকালে দিতে হবে।’

এদিকে সাবেক পাকিস্তান অধিনায়কের বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে সমালোচনার মুখে পড়েছেন যুবরাজ ও হরভজনও। কারণ দুজনেই কিছুদিন আগে করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য শহীদ আফ্রিদি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।

আফ্রিদির মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হরভজন ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে’কে বলেন, ‘আমাদের দেশ ও আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে যে বিতর্কিত মন্তব্য করেছে তা খুবই হতাশাজনক। এটা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

এদিকে তাকে নিয়ে সমালোচনার জবাবে সাবেক ভারতীয় অফ-স্পিনার জানান, ‘সত্যি বলতে, সে (আফ্রিদি) তার দাতব্য প্রতিষ্ঠানের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়েছিল। ভালো চিন্তা থেকেই আমরা মানবিকতা এবং করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকার জন্য সহায়তা করেছি। এমনকি আমাদের প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন যে, করোনাযুদ্ধ সীমানা, ধর্ম এবং বর্ণকে ছাড়িয়ে গেছে। ফলে আমরা আমাদের প্রচার কাজের উদ্দেশ্য সম্পর্কে পরিস্কার ছিলাম যে এটা শুধুই বিপদের মুখে পড়াদের সাহায্যার্থে।’

এরপর হরভজন রীতিমত ক্ষুব্ধ ভঙ্গিতে বলেন, ‘কিন্তু এই লোকটা (আফ্রিদি) আমাদের দেশ নিয়ে বাজে কথা বলছে। আমি শুধু এটাই বলতে চাই আফ্রিদির এমন মন্তব্যের সঙ্গে আমাদের কোনো সংযোগ নেই। আমাদের দেশ নিয়ে বাজে কথা বলার কোনো অধিকার নেই তার। তাকে নিজের দেশ নিয়েই থাকা উচিত এবং সীমা পার করা উচিত নয়।’

সাবেক পাকিস্তানি অধিনায়কের ফাউডেশনকে সহায়তা করায় হরভজন ও যুবরাজের দেশপ্রেম নিয়েও প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। এর জবাবে ১০০ টেস্টে ৪১৭ উইকেট নেওয়া এই স্পিনার বলেন, ‘আমি এই দেশেই জন্মেছি এবং এই দেশেই মরবো। আমি ২০ বছর এই দেশের হয়ে খেলেছি এবং ভারতের হয়ে বহু ম্যাচ জিতেছি। কেউ এটা বলতে পারবে না যে আমি দেশবিরোধী কিছু করেছি। আজ কিংবা আগামীতে, যদি আমাদের দেশের কোনো প্রয়োজন হয় এমনকি সীমান্তেও, আমি সবার আগে দেশের স্বার্থে হাতে বন্দুক তুলে নেবো।’

আর আফ্রিদির সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে হরভজন সরাসরি এটাকে ক্লোজ চ্যাপ্টার’ বলে জানিয়ে দিলেন। ‘একজন মানুষ মানবতার দোহায় দিয়ে আমাকে আহবান জানাতে বললেন, আমি আমার পক্ষ থেকে যতটা সম্ভব করে দিলাম। এটুকুই। কোনো শহীদ আফ্রিদির সঙ্গে এখন থেকে আমার আর কোনো সম্পর্ক নেই,’ সাফ জানিয়ে দিলেন হরভজন।

এদিকে আফ্রিদির মন্তব্যের পর ‘চিরশত্রু’ গৌতম গম্ভীরও চুপে থাকেননি। এক টুইটে সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক লিখেছেন, ‘ ১৭ বছর বয়সী শহীদ আফ্রিদি বলল, পাকিস্তানের ৭ লাখ সেনাসদস্যের পেছনে নাকি ২০ কোটি জনতার সমর্থন আছে। ৭০ বছর পরেও কাশ্মীরের জন্য কান্নাকাটি বন্ধ হয়নি ওদের।’

সাবেক ভারতীয় ওপেনার আরও লেখেন, ‘আফ্রিদি, ইমরান (পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী) এবং বাজওয়ার (পাকিস্তানের সেনাপ্রধান) মতো জোকাররা পাকিস্তানের মানুষকে বোকা বানিয়ে যতোই ভারত ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীজিকে নিয়ে বিষ ছড়ানোর চেষ্টা করুক না কেন, দুনিয়া ধ্বংসের আগে তারা কাশ্মীর পাবে না। বাংলাদেশের (স্বাধীনতার) কথা মনে আছে?’