আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
চীনের উহানে নভেল করোনাভাইরাসের উপস্থিতি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথমবারের মতো নিশ্চিত করা হয়েছিল গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কেটে গেছে ১৩৫ দিন। চার মাসে বিশ্বের সব প্রান্তে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসে প্রাণহানির সংখ্যা ৩ লাখ ছাড়াল আজ। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও আমেরিকাকে মৃত্যুপুরীতে পরিণত করা করোনার তাণ্ডব এখনও চলছে।

চীনে এই ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে জানুয়ারির শেষের দিকে। প্রাণঘাতী এই ভাইরাস দ্রুত চীনের গণ্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে। বিপদ ঘনিয়ে আসছে জেনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাস সংক্রমণকে গত ১১ মার্চ মহামারি ঘোষণা দিয়ে বিশ্বকে সতর্ক করে দেয়।

শতাব্দীর ভয়াবহ যমদূত হিসেবে হাজির হওয়া করোনা প্রতিদিন লাশের সারিতে যুক্ত করেছে হাজার হাজার মানুষের নাম। ভাইরাসটির কোনও চিকিৎসা এখনও খুঁজে পাননি চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। তবে আশার বাণী প্রতিনিয়ত শোনাচ্ছেন করোনার ভ্যাকসিন ও প্রতিষেধক তৈরির শতাধিক প্রকল্পের গবেষকরা।

কিন্তু বুধবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, হয়তো এই ভাইরাস কখনই নির্মূল হবে না। প্রাণঘাতী এইডসের মতো এই ভাইরাসকে সঙ্গী করেই হয়তো চলতে হবে মানব সভ্যতাকে।

এইডস শনাক্তের ৩৯ বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এর কোনও ভ্যাকসিন কিংবা প্রতিষেধক এখনও আবিষ্কার করতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। ১৯৮১ সালে এইডস প্রথমবারের মতো শনাক্ত হয়; সেই সময় মাত্র দুই বছরের মধ্যে এর ভ্যাকসিন তৈরি করা হবে বলে মার্কিন বিজ্ঞানীরা ঘোষণা দিলেও এখনও তা আলোর মুখ দেখেনি।

করোনাভাইরাস প্রতিনিয়ত রূপ বদলিয়ে লাখ লাখ প্রাণ কাড়ছে। বিজ্ঞানীরা চলতি বছরের শেষের দিকে করোনার ভ্যাকসিন পাওয়া যেতে পারে বলে আশার বাণী শোনালেও ৩ কোটি ২০ লাখের বেশি প্রাণ কেড়ে নেয়া এইডসের মতো এই ভ্যাকসিন নাও মিলতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন তারা।

আশা-নিরাশার এমন দোলাচলে প্রাণ কাড়ার মিশনে থেমে নেই করোনাভাইরাস। চীনে গত বছরের ডিসেম্বরে নতুন এই ভাইরাস মাত্র ৪ হাজার ৬৩৩ জনের প্রাণ কাড়লেও মৃত্যুপুরীতে পরিণত করেছে আমেরিকা এবং ইউরোপকে।

বৃহস্পতিবার এই প্রতিবেদন পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৪ লাখ ৭০ হাজারের বেশি। এরমধ্যে শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেই আক্রান্ত ১৪ লাখ ৩২ হাজার ৮৬ জন। এছাড়া করোনা কেড়ে নিয়েছে ৩ লাখের বেশি প্রাণ।

এখন পর্যন্ত একক দেশ হিসেবে করোনায় সর্বোচ্চ প্রাণহানি ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে; দেশটিতে করোনায় মারা গেছেন ৮৫ হাজার ২৬৮ জন। আক্রান্তের তালিকাতেও শীর্ষে থাকা এই দেশটিতে বর্তমানে করোনা রোগীর সংখ্যা ১৪ লাখ ৩০ হাজার ৩৪৮ জন। তবে দেশটিতে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৩ লাখ ১০ হাজার ৩৮৩ জন। বাকি ১০ লাখ ৩৬ হাজার ৪৩৫ জন এখনও করোনার চিকিৎসা নিচ্ছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের পর বিশ্বে সর্বাধিক প্রাণহানি ঘটেছে ইউরোপের দেশ যুক্তরাজ্যে; দেশটিতে মারা গেছেন ৩৩ হাজার ৬১৪ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৩৩ হাজার ১৫১ জন। করোনায় যুক্তরাজ্যের পর ইউরোপে মৃত্যুপরীতে পরিণত হয়েছে ইতালি; দেশটিতে প্রাণহানি ঘটেছে ৩১ হাজার ১০৬ জনের। করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ১০৪ জন। তবে দেশটিতে ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন এক লাখ ১২ হাজার ৫৪১ জন।

এরপর করোনায় মৃত্যুতে শীর্ষে আছে স্পেন; দেশটিতে মারা গেছেন ২৭ হাজার ১০৪ জন। স্পেনে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ২ লাখ ৭১ হাজার ৯৫ জন। তবে সুস্থ হয়েছেন এক লাখ ৮৩ হাজার ২২৭ জন। স্পেনের মতোই ইউরোপের আরেক উন্নত দেশ ফ্রান্সেও মারা গেছেন ২৭ হাজার ৭৪ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৭৮ হাজার ২২৫ জন।

এছাড়া ব্রাজিল ১৩ হাজার ২৪০, বেলজিয়াম ৮ হাজার ৯০৩, জার্মানি ৭ হাজার ৮৬১, ইরান ৬ হাজার ৭৮৩ জনের প্রাণহানি নিয়ে করোনায় মৃত্যুর শীর্ষ দেশগুলোর তালিকায় আছে।

এদিকে, ইউরোপের পর করোনার নতুন হটস্পট হয়ে উঠছে এশিয়া। বর্তমানে এই মহাদেশে সাত লাখ ৩০ হাজারের বেশি এবং মারা গেছেন ২৩ হাজার ৪০৯ জন। মহাদেশের হিসাবে প্রাণহানির এই সংখ্যা ইউরোপ, দক্ষিণ আমেরিকার পর চতুর্থ সর্বোচ্চ।

এশিয়ায় করোনায় ৬ হাজার ৮৫৪ মৃত্যু নিয়ে শীর্ষে রয়েছে ইরান। দেশটিতে করোনা সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ১৪ হাজার ৫৩৩। এরপরই আছে চীন, করোনার উৎপত্তিস্থল এই দেশটিতে মারা গেছেন ৪ হাজার ৬৩৩ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ৮২ হাজার ৯২৯ জন।

আক্রান্তের সংখ্যায় চীনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার পথে রয়েছে প্রতিবেশি ভারত। দেশটিতে এখন পর্যন্ত সংক্রমিত রোগী পাওয়া গেছে ৭৮ হাজার ৮১০ জন। ২ হাজার ৫৬৪ মৃত্যু নিয়ে এশিয়ায় করোনার নতুন হটস্পট হতে যাচ্ছে ১৩০ কোটি মানুষের দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এই দেশ।