জে.জাহেদ, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:

আনোয়ারায় চাকরী দেয়ার প্রলোভন দেখিযে ডিজিটাল প্রতারণার মাধ্যমে চাকরী প্রত্যাশীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার কৌশলে ব্যস্ত রয়েছেন এক অসাধু চক্র।আনোয়ারায় অবস্থিত কোরিয়ান ইপিজেডে “কর্পোরেশন (বিডি) লিমিটেড“ এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান “কর্ণফুলী সুজ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড“ নামক বিশ্বের সর্ববৃহৎ জুতা কারখানার মেডিকেল সেন্টারে নার্স এবং ওয়ার্ডবয়ের চাকরি দেওয়ার প্রলোভনে প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসেছে চক্রটি।

চক্রটি বিভিন্ন কারখানায় চাকরী করেছে, আবেদন করেছে কিংবা এখনও করছে এরকম নারী-পুরুষদেরকে মোবাইল ফোনে জুতা কারখানার মেডিকেল সেন্টারে বড় ও ভাল চাকরীর অফার দিয়ে সার্টিফিকেট তৈরীর জন্য বিকাশে টাকা চান। টাকা পাওয়ার পর ঐ ফোনে তাদেরকে আর পাওয়া যায়না। ফলে অনেকেই ইতোমধ্যে প্রতারিত হয়েছেন এ ডিজিটাল প্রতারণার ফাঁদে।

প্রতারকরা বিশেষ একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে ভয়েস পাল্টিয়ে কথা বলছেন। প্রতারক চক্রের মধ্যে একজন নারী ও পুরুষ প্রায় সময় টোপ দিচ্ছেন। পরে কৌশলে তাদের নিয়ন্ত্রণে টাকা নেওয়ার পর ফোন বিজি রাখছেন। অনেকবার যোগাযোগ করলে আবার নাম্বার বন্ধও পাওয়া যায়। ভুক্তভোগিরা আরও জানান, যারা কল করছেন তারা সকলেই তাদের জন্মতারিখ এবং ফ্যাক্টরীর অন্যান্য সেকশনে কবে জয়েন করেছেন সব নিঁখুত ভাবে বলছে মুঠোফোনে। ফলে সহজেই ফোনটি তাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠছেন।

ভুক্তভোগীদের ধারণা সু-ফ্যাক্টরীর যে বিভাগে সিভি কিংবা বায়োডাটা জমা থাকে ওখান থেকে তাদের নাম্বার সংগ্রহ করে প্রতারণা চালাচ্ছে প্রতারক চক্রটি। প্রশাসন যদি বিকাশ নাম্বার ও ফোন নাম্বারগুলোর লোকেশন আর রেজিস্ট্রশেন যাচাই বাচাই করেন তাহলে অনেকটা তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে ভুক্তভোগিদের ধারণা।

গত কয়েকদিনের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ০১৮৮১-১৮৭৪৭৭, ০১৮৮৫-১১৩৫৪৫, ০১৮৮৫-১০৫৭৫৩, ০১৮৭১-৫৬২৯২১ (বিকাশ), ০১৮৮১-১০৫৭৩৮ নাম্বারগুলো থেকে ফোন করে চাকরীর অফার দেয়া হয়েছে।আর এই বিকাশ ০১৮৭১-৫৬২৯২১ নাম্বারটিতে বেশীরভাগ টাকা রিসিভ করেছেন। এরমধ্যে এই নাম্বারটি ০১৮৮১-১০৫৭৩৮ ইব্রাহিম নামে কেউ একজন ব্যবহার করেন এবং ০১৮৭১-৫৬২৯২১ বিকাশ নাম্বারটি মুহিব বুল্লাহ নামে কেউ ব্যবহার করছেন। নাম্বার গুলোতে কল করে মহিউদ্দীন নামে স্থানীয় এক সংবাদকর্মী তথ্য জানতে চাইলে তাঁকেও গালমন্দ করে প্রতারক চক্রটি।

চক্রটির প্রতারণার শিকার আনোয়ারা বৈরাক ইউনিয়নের গুয়াপঞ্চক এলাকার জাহেদুল আলম সুমন জানান, হঠাৎ তার মুঠোফোনে সু-ফ্যাক্টরীর ৫নং ফ্লোরের কাউন্সিলর নীপা ম্যাডাম পরিচয় দিয়ে এক নারী কল করেন। ঐ ফ্যাক্টরীর মেডিক্যাল সেন্টারে পুরুষ নার্স এর চাকরির অফার করেন। এতে তার তিনটি সার্টিফিকেট তৈরি করতে হবে জানান। এবং ঐ সার্টিফিকেট তারাই তৈরি করে দেবে ২১ হাজার টাকার বিনিময়ে। সরল বিশ্বাসে বিকাশে ১০ হাজার টাকা পাঠায় সুমন। পরে সু-ফ্যাক্টরীর ৫নং ফ্লোরে যোগাযোগ করে দেখেন নীপা ম্যাডাম নামে কেউ নেই, ফোনও বিজি।’

একইভাবে প্রতারণার শিকার আনোয়ারা চাতরী এলাকার মোছা. সানজিদা হক জানান, প্রথমে এক পুরুষ কন্ঠ ও পরে এক নারী কন্ঠে সু ফ্যাক্টরীর মেডিক্যাল সেন্টারে চাকরির সুবিধা ও বাড়তি বেতনের লোভ দেখান। চাকরি করতে চাইলে তিনটি সার্টিফিকেট লাগবে জানান। তারা তৈরি করে দেবেন বিকাশে টাকা পাঠিয়ে অফিসে যেতে বলেন। এমন কথা জানালে সানজিদা ৫ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন উপরের বিকাশ নাম্বারে। পরে খোঁজ নেই কারো।’

প্রতারিত হওয়া আরেক নারী বাবার ভয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, গতকাল তার নাম্বারে উপরে উল্লিখিত নাম্বার থেকে একটি ফোন আসে। ফোনটি রিসিভ করতেই অপরপ্রান্ত থেকে পুরুষ কন্ঠে একজন বলে উঠে, তুমি কি ইয়াং ওয়ান সু-ফ্যাক্টরীর মেডিকেল বিভাগে নার্সের চাকরি করবে? নারীটি হ্যা, বলে কিভাবে জানতে চাইলেন। তখন পুরুষটি বলেন, তাহলে তোমাকে তো এমনি চাকরিটা দিবে না কিছু সার্টিফিকেট দেখাতে হবে। লোকটি আরও বলল, সার্টিফিকেট তার পরিচিত একজনের কাছে আছে। ২০ হাজার টাকা বিকাশে পাঠালে সংগ্রহ করে দেবেন। পরে তিনিও ১২ হাজার টাকা বিকাশ করেন। বাকিটা বুঝতে মনে হয় আর পাঠকের সময় লাগবে না কি ঘটতে যাচ্ছে ।’

এসব অভিনব প্রতারণা বিষয়ে জানতে চাইলে ইয়াং ওয়ান সু-ফ্যাক্টরীর এইচ আর ম্যানেজার দিদারুল আলম বলেন, ‘এসব প্রতারক চক্রের কাজ ছাড়া আর কিছুই নয়। আমাদের এখান থেকে চাকরির নিয়োগে কোনো টাকা পয়সা লাগে না। কেউ প্রতারিত হলে থানায় জিডি করতে পারে।’

আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শেখ জোবায়ের আহমেদ বলেন, ‘আসলে এই বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আপনার কাছ থেকে শুনলাম বিষয়টা প্রথম। তারপরেও আমরা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। এ বিষয়ে ভুক্তভোগিরা চাইলে থানায় অভিযোগও করতে পারেন।’