শান্ত নূর


কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধ করতে কার্যকর পদ্ধতি সেলফ আইসোলেশন ও সামাজিক দূরত্ব। পরিস্থিতি কখন স্বাভাবিক হবে তা আমরা জানি না। তবে নিরাপদে ঘরে থাকার এই সময়টা আমরা কাজে লাগাতে পারি অনলাইনে নতুন কিছু শিখে।

বাংলাদেশি মানুষ আড্ডা দিতে পছন্দ করেন। এই বিপদজনক সময়ে যেহেতু ঘরে থাকাই একমাত্র নিরাপদ উপায় তাই আড্ডা হতে পারে অনলাইনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে। বাড়ির বাইরে গেলে আপনি শুধু নিজেকেই ঝুঁকিতে ফেলছেন না, পরিবারের বয়স্ক বা অসুস্থ মানুষদের ঝুঁকিতে ফেলছেন। এটা অনুভব করুন। পরিবারকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করুন এবং বাড়িতে থাকুন।

সারাবিশ্বে মহামারী আকার ধারণ করা এই করোনা ভাইরাসের ভ্যাক্সিন কিংবা মেডিসিন এখনো পুরোপুরি আবিষ্কার হয়নি। আর আবিষ্কার হলেও তা আমাদের কাছে পৌঁছাতে পৌঁছাতে অনেক দেরি হয়ে যেতে পারে। এর মধ্যে আপনাদের সকলকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কোন রাষ্ট্রের একার পক্ষে সম্ভব নয়, এতোদিন পর্যন্ত একটা জাতি কে ত্রান দিয়ে তাদের দায়িত্ব গ্রহণ করা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, “দেশের স্বার্থে আপনারা উদ্যোক্তা হয়ে কাজ করুন। কাজেই জাতির মঙ্গলের সাথে সাথেই এই সফলতা আপনার নিজের।” তাই ধীরে ধীরে সব কিছু আবার আগের মতো সচল করে দিতে সরকার বাধ্য থাকবে। তাই বলে আমরা অতি-উত্তেজিত হয়ে পরলে চলবেনা। সুতরাং, আমাদের এই সর্তকতা ভ্যাক্সিন হাতে না আসা পর্যন্ত অব্যাহত রাখতে হবে। লকডাউন শেষ হওয়ার পরেও সকল প্রকার বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে এবং এই মহামারীর সাথে যুদ্ধ করে চ্যাম্পিয়নদের মত জয় লাভ করতে হবে।

জনসংখ্যার তুলনায় আমাদের এই বাংলাদেশ বেশ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। তবুও আমরা সচেতন হতে পারছি না। এখনো সময় আছে, আমাদের উচিত সকলকে সচেতন করা এবং নিজেদের নিরাপদ রাখা।

মাটি,পানি,গাছপালা, পৃথিবীর প্রত্যেকটা উপাদান একে অপরের উপর নির্ভরশীল। কোন একটি উপাদান হ্রাস পেতে শুরু করলে মানবজাতি নিশ্চিত বিলুপ্ত হবে।

প্রত্যেকটা উপাদান সংরক্ষণ, দূষণমুক্ত করতে আমরা দিন দিন ব্যর্থ হচ্ছি বলে আমি মনে করি। এভাবে চলতে থাকলে করোনার মতো হাজার হাজার ভাইরাস আমাদের প্রতিনিয়ত আক্রমণ করেই যাবে। জলবায়ুর এই পরিবর্তনে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে বাড়ছে পৃথিবীর তাপমাত্রা আর গলছে বরফ এবং দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা । হাজার হাজার বছর ধরে এই বরফে আটকা পড়া বিভিন্ন প্রাণীর শরীর থেকে পানির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে নানান রকমের ভাইরাস।

একবার চিন্তা করে দেখুন তো, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে উন্নত চিকিৎসার নামে দেশের বাইরে যেতে পারবেন কিনা? করোনা আক্রান্ত কোন রোগী ইউরোপীয় সহ এশিয়ার অন্য কোন দেশগুলোতে ঢুকতে পারবে নাহ। আমরা এখন পরিস্থিতির শিকার হয়ে গেছি। বাঁচার মত করে বাঁচতে হলে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হবে।

জটিল এই পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাই হলে সবচেয়ে বড় ভরসা। তাই ফোন ও ইন্টারনেটে বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে সঠিক তথ্যগুলো সংগ্রহ করুন। প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব এবং নিকটস্থ আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন এবং সকলের সাথে সঠিক তথ্য আদান প্রদান করে অন্যকে সচেতন করুন এবং নিজেকে নিরাপদ রাখুন।

সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্যই পুরো দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। সুতরাং, শহর বা গ্রামে, আপনি যেখানে অবস্থান করুন বাড়িতেই থাকুন। বয়স্কদের জন্য ভাইরাসটি বেশি বিপজ্জনক, পাশাপাশি তরুণরাও ঝুঁকিতে আছে। তাই সকলের কাছে আমার একটাই অনুরোধ, প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের হবেন নাহ।

এই পৃথিবী ছাড়া আমাদের নতুন করে বাঁচার জন্য বিকল্প কোনো পৃথিবী নেই। তাই বেঁচে থাকার জন্য আমাদের সকলের উচিত এই পৃথিবী কে বসবাসযোগ্য একটি নিরাপদ পৃথিবী হিসেবে গড়ে তোলা। সারা বিশ্বে যেভাবে জলবায়ু পরিবর্তন হতে চলেছে, হতে পারে সামনে আমাদের পরিবেশে ও প্রকৃতি উভয়ের বিপর্যয় ঘটতে পারে খুব দ্রুত। তাহলে তরুণদের প্রতি আমার একটাই অনুরোধ থাকবে আর সেটা হল, আপনারা যতসম্ভব জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত জ্ঞান আহরণ করুন। তা না হলে এই পৃথিবী কে বাঁচানো অসম্ভব হয়ে পড়বে। কারণ জলবায়ু পরিবর্তন হলে পরিবেশ ও প্রকৃতির সাথে মহামারী আকার ধারণ করা শক্তিশালী করোনার চেয়ে আরো ভয়ঙ্কর রোগ ব্যাধি সৃষ্টি হতে পারে। তাহলে আপনারা সকলেই ধরে নিন, আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে জলবায়ু পরিবর্তনকে ঘিরে।

আমি বিশ্বাস করি, আমার বাংলাদেশের তরুণরা চাইলে সবই সম্ভব। কারণ, আজকের তরুণরাই হলো আগামীর ভবিষ্যৎ। সুতরাং, আপনি নিজে বাঁচুন এবং বাঁচান এই সুন্দর পৃথিবী কে। আশা করি, আমাদের তরুণরা তাদের দায়িত্বগুলো বেশ ভালভাবে অনুভব করতে সক্ষম হবে।

সকলেই ধৈর্যের সাথে ঘরে থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং পরিবারকে সময় দিন। আশা করি, এভাবে যেতে থাকলে সামনে ভাল দিন আসবে ইনশাল্লাহ।


লেখকঃ জলবায়ু যোদ্ধা, তরুণ সমাজকর্মী