শাহেদ মিজান, সিবিএন:

কক্সবাজারে দিন দিন করোনা রোগী বাড়ায় সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক বেড়ে চলছে। তার উপর লকডাউন থাকায় সংক্রমণ আরো বেশি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্য বিভাগ দায়সারাভাবে কাজ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কেননা জেলায় করোনা ডেডিকেটেড দুইটি হাসপাতাল তৈরি করা হলেও অধিকাংশ রোগীকে বাড়িতে রেখে দেয়া হয়েছে। বাড়িতে তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বাড়িতে চিকিৎসা নেয়া এসব রোগীদের নিয়ে আতঙ্কে ঘুম ‘হারাম’ হয়ে পড়েছে প্রতিবেশীসহ আশেপাশের লোকজনের। বিষয়টি নিয়ে অভিযোগের সারিও দীর্ঘ হচ্ছে।

তবে সিভিল সার্জন মোঃ মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, সরকারি সিদ্ধান্ত মতে- রিপোর্ট পজেটিভ হলেও যাদের উপসর্গ নেই তাদের বাড়িতে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলায় আজ ১২ মে পর্যন্ত ১১১জন করোনা সনাক্ত হয়েছেন। কুতুবদিয়া উপজেলা ছাড়া সব উপজেলাতেই করোনা রোগী সনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী এবং কক্সবাজার সদরে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। ১১ মে পর্যন্ত আক্রান্তদের মধ্যে মাত্র ২২ সুস্থ হয়ে উঠেছেন। অবশিষ্টরা এখনো অসুস্থ রয়েছে। তাদের মধ্যে শুধুমাত্র ১৮জনের রামু আইসোলেশন সেন্টারে ও ২৪ জনের চকরিয়া আইসোলেশন সেন্টারে চিকিৎসা চলছে। সে হিসাব মতে অবশিষ্ট ৪৭জন রোগী বাড়িতে রয়ে গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজার শহরের উত্তর রুমালিয়ারছড়ার গোদার পাড়া এলাকাতেই ৪ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। গত কয়েকদিন অতিবাহিত হলেও তাদের বাড়িতেই রাখা হয়েছে। কোন মতে দায়সারা ভাবে ‘লকডাউন’ করে চলে আসছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। গোদার পাড়া এলাকার সচেতন অনেকেই জানিয়েছেন, হোম আইসোলেশন থাকার পরিবেশ বাড়িতে কিংবা গোদার পাড়ায় নেই। সে কারণে এসব রোগী নিয়ে মহা আতঙ্ক ও দুশ্চিন্তায় রয়েছে প্রতিবেশী ও আশেপাশের লোকজন। তারা বলছেন, এসব রোগীদের বাড়িতে রাখায় আতঙ্কে সাধারণ লোকজনের রাতের ঘুমও হারাম হয়ে গেছে। তারা সারাক্ষণ আতঙ্কের মধ্যে সময় পার করছে।

তথ্য মতে, তাদের ঘরে আছেন ৪ মেয়ে। স্বামী-স্ত্রী মিলে ৬ জনের সংসার তাদের। তারা যে বাড়িতে রয়েছেন ওই বাড়িতে ‘হোম আইসোলেশন’ থাকার পরিবেশ নেই। যেহেতু পরিবারে আরও সদস্য আছেন তারাও যে কোন মুহুর্তে সংক্রমিত হতে পারেন। এছড়াও উত্তর রুমালিয়ারছড়ার ছিদ্দিক হাজীর বাড়ির লাগোয়া ২ তলা ভবনের একটি বাড়িতেও দুইজন করোনা রোগী আছেন। তাদের একজন আগে পজিটিভ হয়েছেন। অন্যজন তার সংস্পর্শে এসেই সংক্রমিত হয়েছেন। তারাও ওই ভাড়া বাসাতে ‘হোম আইসোলেশন’ হিসেবে রয়েছেন। এই এলাকাতে চারজন করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবরে পুরো এলাকাজুড়ে আতংক বিরাজ করছে। এই গলিতেই প্রায় আড়াই হাজার মানুষ বসবাস করেন।

একইভাবে জেলাজুড়ে যেসব রোগীদের বাড়িতে রেখে দেয়া হয়েছে সেসব স্থানেও এই ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মূলত ঘনবসতির কারণে আক্রান্ত ব্যক্তির মাধ্যমে আরো অধিক লোক সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান জানান, বর্তমানে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ‘কোভিড ১৯’ পজিটিভ হওয়ার পরও যদি কোন রোগীর উপসর্গ দেখা না মিলে সেক্ষেত্রে তারা বাড়িতেই চিকিৎসা নিবেন। এটা সরকারি সিদ্ধান্ত। তবে বাড়ি থাকা রোগীদের অবস্থা খারাপ পরিলক্ষিত হলেই তাদেরকে ডেডিকেটেড আইসোলেশন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হবে। বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করার জন্য প্রতি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কমিটি আছে।

তিনি বলেন, রোগটা প্রথমে যারা বাইর থেকে এসেছিলো তাদের মধ্যে ছিলো। কিন্তু বর্তমানে স্থানীয়দের মধ্যে সংক্রমিত হয়েছে। এতে বুঝা যাচ্ছে এটা কমিউনিটিতে ছড়িয়ে পড়েছে। এভাবে পুরো দেশজুড়ে যেহেতু কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়ে পড়েছে সেক্ষেত্রে বাড়িতেই চিকিৎসা নিবেন উসর্গহীন করোনা রোগী।