সৌরভ শর্মা

 

ইমন ঢাকায় একটি বেসরকারি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করে।সকালে নিয়ম করে অফিস যাওয়া আর সন্ধ্যায় বাধ্য ছেলের মতো বাসায় ফেরা তার নিত্যদিনের অভ্যেস।ছবি আঁকার প্রতি তার প্রচণ্ড ঝোঁক। তাই প্রতিদিন রাত করে ছবি আঁকে। অবশ্য তার ফ্যামিলি থাকে চট্টগ্রামে।করোনার কারণে আট জনের ব্যাচেলার বাসায় আজ সে একা।আজ যাবো কাল যাবো করে তার আর বাড়ি যাওয়া হয়ে উঠেনি।

প্রথমে ফ্যামিলি থেকে বাড়িতে যাওয়ার জন্য চাপ দিলেও এখন বাবার স্পষ্ট বারণ, যেখানেই আছিস সেখানেই থাক। বাসা থেকে বেরোনোর কোনো প্রয়োজন নেই।কিছু প্রয়োজন হলে ৩৩৩ নাম্বারে কল দিবি।

সারাদিন বইপড়া,মুভি দেখা, ছবি আঁকা এসব করেই তার সময় কাটে। তবে মাঝেমধ্যে বিরক্ত হয়ে সে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আশেপাশের দালান গুনে। ইচ্ছে করে গুলিয়ে ফেলে আবার গুনে। তবে রাতে তারা গুনতে বসে তখনি তার সবচেয়ে ভালো লাগে।কারণ তারা গুনতে তার বারবার অনিচ্ছাকৃত ভুল হয়।

আজ ইমনের কোয়ারেন্টাইনের চতুর্থ দিন। মাত্রই শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের “গৃহদাহ” উপন্যাসটি শেষ করে সে জানালার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে। দালান গুনা শুরু করেছে এমন সময় হঠাৎ পাশের বিল্ডিং এর পঞ্চম তলায় তার চোখ আটকে গেলো। জানালার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে এক অপরুপ সুন্দরী।সে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে আর চুল বাতাসে উড়ছে। যেনো কোনো শিল্পীর রংতুলিতে আঁকা একটি জীবন্ত ছবি।

ইমন হাত নেড়ে মেয়েটির দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করল।কিন্তু মেয়েটির এদিকে খেয়ালেই নেই।একসময় সে চলে গেলো।পরের দিন যথাসময়ে ইমন জানালার পাশে যেতেই দেখতে পেলো মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে। আজো অনেকক্ষণ চেষ্টা করলো। কোনো লাভ হলোনা। এভাবে কয়েকদিন চেষ্টা করলো। ফলাফল শূন্য।

ইমনের হোম কোয়ারান্টাইনের আজ দশম দিন। বিকেলে জানালার পাশে বসে বসে সে ভাবছে,আজ থেকে আর মেয়েটিকে নক করবোনা। কিছুক্ষণ পর মেয়েটি আসলো। আসতেই তার দিকে হাত নেড়ে হ্যালো বললো।সেও প্রতিউত্তর দিলো।তারা ঐদিন অনেকক্ষণ কথা বললো। মেয়েটির নাম অগ্নিলা।সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্রী।এভাবে তারা পরস্পর পরস্পরকে জানলো।

এভাবে কয়েকদিন চললো।একদিন তারা সিদ্ধান্ত নিলো ছাদে দেখা করবে।সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে বিকেল শেষ হতে চললো।কিন্তু তাদের আলাপ শেষ হয়না। রাতে ইমনের চোখে ঘুম আসছেনা। সে মনে মনে অগ্নিলাকে ভাবতে লাগলো। তার চোখ,তার চুল, তার কথাবলা সবকিছুই তার কল্পনার খোরাক হয়ে দাঁড়ায়। সে ভাবছে,আমি কি তাহলে তাকে ভালোবেসে ফেললাম? সে সিদ্ধান্ত নিলো পরদিন তাকে ভালোবাসার কথা জানাবে।

পরদিন সকালে দেখা হতেই ইমন কৌশলে তার থেকে জানতে চাইলো সে কাউকে ভালোবাসে কিনা।অগ্নিলা বললো, ভালোবাসি। তবে মানুষটিকে এখনো বলা হয়নি। এমনকি আমি তাকে চিনিওনা।শুধু তার একটা আঁকা ছবি দেখে প্রেমে পড়ে গেছি। তারপর থেকে তাকে পাগলের মতো খুঁজছি। কিন্তু কোনভাবেই পাচ্ছিনা। ইমনের মনটা ভেঙে গেলো। সে ভাষাহীন হয়ে গেলো। বেষ্ট অব লাক বলে সে চলে গেলো।আর এলোনা। অগ্নিলার বিষয়টি কেমন জানি উদ্ভট লাগলো।

পরদিন দেখা হতেই ইমনকে অগ্নিলা বললো,কাল ওভাবে চলে গেলেন কেনো?সে বললো,আমার মাথাব্যাথা করছিলো তাই।কথাবলার একফাঁকে অগ্নিলা তাকে ঐ ছবিটি দেখালো। ছবিটি দেখে সে তো নিজেই অবাক। এ তো আমার আঁকা ছবি!

অনেকক্ষণ মৌন থাকার পর ইমন জানালা থেকে সরে গেলো।রুমে গিয়ে তার আম্মাকে কল দিয়ে বলল,আম্মা,চিন্তা করছি, করোনা চলে গেলে শুভ কাজটা সেরে ফেলবো।