বার্তা পরিবেশক :

করোনা সঙ্কটকালে এবং পবিত্র রমজান মাসে চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় রয়েছেন বলে জানা গেছে টেকনাফে আত্মসমর্পণকারী কারাবন্দী ১০২ জন মাদকব্যবসায়ী পরিবারের পাঁচ শতাধিক নারী পুরুষ। দুইটি মামলায় তারা গত ১৪ মাস ধরে কক্সবাজার কারাগারে বন্দী জীবন যাপন করছেন।

চলমান করোনাকালে এবং পবিত্র রমজান মাসে তাদের পরিবারের চরম দুর্দিনে তাদের মামলা নিষ্পত্তির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চেয়েছেন ওই ১০২ পরিবারের সদস্যরা।

২০১৯ সালের ১৬ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে টেকনাফে একটি অনুষ্ঠানে সেদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে টেকনাফের ১০২ জন মাদক ব্যবসায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। ওই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে সেদিন আরো উপস্থিত ছিলেন পুলিশের তৎকালীন আইজিপি,
কক্সবাজার জেলার ৪ সংসদ সদস্য, জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ।

আত্মসমর্পণকালে তাদের অবস্থান স্থল থেকে ৩ লাখ ৫০ হাজার পিস ইয়াবা এবং ৩০ টি দেশী অস্ত্র ও ৭০টি তাজা কার্তুজ উদ্ধার দেখিয়ে মাদক দ্রব্য ও অস্ত্র আইনে দুইটি পৃথক মামলায় আত্মসমর্পণকারীদের জেল হাজতে পাঠানো হয়। এ সংক্রান্ত টেকনাফ থানায় দায়েরকৃত পৃথক দুইটি মামলা নং ২৬ ও ২৭, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৯ ইং।

ঘৃণিত মাদক পেশা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবন-যাপনে ফিরে আসার জন্য সুনির্দিষ্ট আইনী সহায়তা দেয়ার সরকারী প্রতিশ্রুতির আলোকে সেদিন তারা জীবন বাঁচাতে আত্মসমর্পণ করেছিলেন বলে জানা গেছে।

২৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৯ ইং টেকনাফে মাদক ব্যবসা ছেড়ে আত্মসমর্পণকারীদের আর্থিক সহায়তা করা হবে মর্মে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা তাদের পরিবার পরিজনকে আশ্বস্থ করেছে।

পরবর্তীতে আত্মসমর্পণকারীদের আইনী সহায়তা দেয়ার বিষয়ে বিবেচনা করার সুপারিশ করে কক্সবাজার জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ৩ মার্চ ২০১৯ ইং ১৮২৪ স্মারক মুলে আইজিপি বরাবর এক প্রতিবেদন পাঠানো হয়।

ওই প্রতিবেদনে আত্মসমর্পণকালে সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া ৮ শর্তের ৭ নং শর্তে উল্লেখ করা হয়েছে ‘আত্মসমর্পণ কালে তাদের অবস্থান স্থল থেকে যে সব মাদক/ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে, সে সংক্রান্ত রুজুকৃত মামলা সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে প্রত্যাহার/ আইনগত সহায়তা প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।’

এই সূত্র ধরে চলমান করোনা সংকট কালে পবিত্র রমজান মাসের সময় তাদের মামলা প্রত্যাহারে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির সহযোগিতা কামনা করে ইতিমধ্যেই আত্মসমর্পণকারীদের পরিবারের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পৃথক পৃথক লিখিত আবেদন পাঠিয়েছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে করোনা মহামারীকালে কক্সবাজার কেন্দ্রীয় কারাগারে গাদাগাদি করে ৫ শত বন্দীর জায়গায় প্রায় পাঁচ হাজার বন্দী রয়েছেন। একদিকে যেকোনো সময় করোনা আক্রান্তের আশঙ্কা, অন্যদিকে গত ১৪ মাসে ও সরকারের পক্ষ থেকে তাদের মামলা প্রত্যাহার সংক্রান্ত চুক্তির বিষয়ে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় আত্মসমর্পণকারীদের পরিবারের পাঁচ শতাধিক নারী-পুরুষ চরম উদ্বেগ উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন।

ইতোমধ্যে আত্মসমর্পণকারী ১০২ জন থেকে রাসেল নামের একজন কারাগারেই ইন্তেকাল করেছেন।

স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণকারীদের পরিবারের সদস্যরা পবিত্র রমজান মাসে তাদের মামলা প্রত্যাহারে প্রধানমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের মানবিক সহযোগিতা কামনা করেছেন।