বাংলা ট্রিবিউন

বিদ্যুৎ বিলে মার্চ থেকে মে এই তিন মাসের বিলম্ব মাসুল মওকুফ করেছে সরকার। কিন্তু রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এপ্রিলের বিলের সঙ্গে মার্চের ভ্যাটসহ বিলতো যোগ করেছেই, সঙ্গে আলাদা করে মার্চের ভ্যাটও যোগ করে দিয়েছে। কাগজে কলমে এমন প্রমাণ থাকার পরও সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) বলছেন, এমন কোনও ঘটনা নাকি ঘটেইনি। সরকার করোনাভাইরাসে কারণে বিল দেরিতে দেওয়ার যে বিধান করেছিল সে নির্দেশনার তোয়াক্কাই করছে না পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি এমন অভিযোগ উঠেছে।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, ব্যাংকে বিল নিয়ে গেলে অতিরিক্ত এই ভ্যাটের টাকার বিষয়টি তারা (ব্যাংক) বুঝতে পারছে। কিন্তু তাদের এখানে কিছু করার নেই। ফলে ভ্যাটের অতিরিক্ত টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে। আর যারা পরিশোধ করতে না চাইছেন তারা সমিতিতে গেলে ঠিক করে দেওয়া হচ্ছে। তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে মানুষে মানুষে যোগাযোগ সীমিত রাখতে সরকার মার্চ থেকে মে এই তিন মাসের বিলে বিলম্ব মাসুল মওকুফ করেছিল। এখন সেই যদি বিল নিয়ে ব্যাংক আর সমিতিতে দৌড়াতে হয়, তাহলে সুরক্ষা নিশ্চিতে সরকারের উদ্যোগ কতটুকু  ঠিক থাকলো এবং সরকারের নির্দেশনা একটি প্রতিষ্ঠান কী করে ভাঙছে সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন গ্রাহকরা। পাশাপাশি যেহেতু এক দুইটি বিল নয়, অনেক বিলের ক্ষেত্রে  এমন ঘটনা ঘটেছে ফলে এটিকে পল্লী বিদ্যুতের ইচ্ছাকৃত কাজ বলেই দাবি করছেন গ্রাহকরা। আর এ কারণে তাদের প্রশ্ন, সরকারি নির্দেশনা না মানায় এই সংস্থার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা।

সাধারণ গ্রাহকরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে যোগাযোগ করলে তাদের বলা হচ্ছে কম্পিউটারের সফটওয়্যারে ঝামেলা হওয়ার জন্য এমনটা হয়েছে। তবে এ ঘটনা জেনে আগের বিলগুলো প্রত্যাহার করে নতুন করে বিল দেওয়ার কোনও উদ্যোগও রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর নেই। এতে করে গ্রাহকরা ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছেন। তাদের দাবি, মফস্বল এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় সরকারের নির্দেশনা না মেনে যা ইচ্ছা তাই করছে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানটি। অতীতে তারা বিভিন্ন বিষয়ে গ্রাহকদের হয়রানি করেছে। এখনও এই বিল প্রত্যাহার না করে, নিজেদের ভুল স্বীকার না করে এর কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা গ্রাহকদের  নানা কথা শুনিয়ে দিচ্ছে।

জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রাহক বলেন, আমরা এই বিষয়ে কথা বলতে গেলে নানা কথা শুনিয়ে দিচ্ছে সমিতির লোকজন। আর বেশি প্রতিবাদ করতে গেলে নানা ভাবে হয়রানি হওয়ার ভয়তো রয়েছেই। তবে করোনার মধ্যে গ্রাহকদের সঙ্গে এ ধরনের অবিচারের প্রতিকার চেয়েছেন তারা।

বিষয়টি অনুসন্ধান করতে গিয়ে এক গ্রাহকের বিলে দেখা যায়, গত মার্চ মাসে ভ্যাটসহ মোট বিল এসেছে ৪০৭ টাকা আবার এপ্রিলে গিয়ে তার বিলে বকেয়া বিলের জায়গাতে ৪০৭ টাকা যোগ করা হয়েছে। আবার মার্চ এবং এপ্রিল মাসের ভ্যাটের জায়গাতে আলাদা করে মার্চের ভ্যাট ১৯ টাকা যোগ করা হয়েছে। বিলটির প্রস্তুতকারী হিসেবে নাহিদা নামের কোনও একজন কর্মী নাম লেখা রয়েছে।

গত মার্চ থেকে যেহেতু বিদ্যুৎ বিল একবারে জুনে গিয়ে পরিশোধের সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে তাই এখন প্রতি মাসের সঙ্গে পূর্ববর্তী মাসের বিল যোগ করে দেওয়া হচ্ছে। তবে অনেক গ্রাহকই বিলের এই প্যাঁচ বুঝতে না পেরে বিল জমা দিয়ে আসছেন।

রংপুর সমিতিতে মোট ৪ লাখ ৯২ হাজার ২৩৮ জন গ্রাহক রয়েছেন। এখানে প্রতি গ্রাহকের কাছ থেকে এভাবে কৌশলে গড়ে ২০ টাকা করে অতিরিক্ত রেখে দিলে আদায় করা হবে সরকারের নির্দেশনার বাইরে অতিরিক্ত ৯৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা। অথচ এই বাড়তি অর্থ সমিতির হিসেবে যোগ হওয়া কথা নয়।

জানতে চাইলে সমিতির সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার মো. নুরুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এ ধরনের ঘটনা ঘটার কথা নয়। সব কিছু কম্পিউটারে করা হচ্ছে। প্রতি মাসের বিলের সঙ্গে ভ্যাট যুক্ত হয়। এক মাসেরটা আরেক মাসে যাওয়ার কথা নয়। কিন্তু তারপরও কারও যদি এমন সমস্যা হয় সেটি ব্যাংকের পক্ষে সমাধান করা সম্ভব নয়। আমাদের অফিসে আসতে হবে গ্রাহককে। তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে গ্রাহক আমাদের কাছে আসতেই পারেন। আমরা চেষ্টা করবো তার দ্রুত সমাধান করতে। তবে নিজেদের উদ্যোগে এমন ত্রুটিযুক্ত বিল পরীক্ষা করে পাল্টে দেওয়ার ব্যাপারে কিছু জানাননি তিনি।