মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

‘ওয়ার্ক স্টেশন চকরিয়া আমার কাছে সেকেন্ড হোম৷ আমার নিজ জেলায় নিজ বাড়িতে কালেভদ্রে হয়তোবা বছরে ১৫-১৬ দিন থাকা হয়৷’

ভয়ংকর করোনা ভাইরাস জীবাণুতে আক্রান্ত হওয়া চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর হোসেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের বেড থেকে শনিবার ৯ মে সকালে তার অফিসিয়াল ফেসবুকে দেওয়া এক স্যাটাসে একথা উল্লেখ করেন।

বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের মেধাবী কর্মকর্তা তানভীর হোসেনের শরীরে ২৯ এপ্রিল স্যাম্পল টেস্টে রিপোর্ট ‘পজেটিভ’ আসে। প্রথমে তিনি চকরিয়াতে নিজ কোয়ার্টারে সেল্ফ আইসোলেশনে থাকলেও পরে তাঁর শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় তাঁকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেসন ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ২দিন আইসিইউ-তে থাকার পর একটু সুস্থ হয়ে এখন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেসন ওয়ার্ডের সাধারণ আছেন। তাঁর শরীরের প্রথম ফলোআপ স্যাম্পল টেস্টের রিপোর্ট ‘পজেটিভ’ আসায় তাঁকে আরো কিছুদিন হাসপাতালে থাকতে হবে বলে সিবিএন-কে জানিয়েছেন। তাঁর কাছে সিবিএন থেকে শরীরের অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁর এখনো গলাব্যথা রয়েছে। যে কারণে একটু শ্বাসকষ্ট হচ্ছে।

চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর হোসেন তাঁর নাম পদবী উল্লেখ করে দেওয়া স্ট্যাটাসটি চকরিয়া উপজেলা প্রশাসনের পেইজেও শেয়ার করা হয়েছে। স্ট্যাটাসে তিনি তাঁর চিকিৎসার খোঁজ খবর রাখায়, স্থানীয় সরকার বিভাগের সহয়তা করায় সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ স্যার, চট্টগ্রাম বিভাগের কমিশনার, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক, চকরিয়ার ইউএনও সহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।

তিনি তাঁর সুস্থতার জন্য সকলের কাছে দোয়া ও আশীর্বাদ চেয়েছেন।

চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর হোসেন এর ফেইসবুক পেইজে দেওয়া স্ট্যাটাসটি নিন্মে হুবহু তুলে ধরা হলো :

“STAY HOME, STAY SAFE”

প্রিয় চকরিয়াবাসী,
গত ২৮ এপ্রিল রাতে প্রচন্ড শ্বাস কষ্টে ভুগায় ২৯ এপ্রিল কভিড১৯ টেস্ট করায় এবং পরদিন রিপোর্টে আমার পজেটিভ আসে৷ সেসময় খুবই শ্বাসকষ্টে ভুগছিলাম৷ আমি নিজেকে নিয়ে মোটেই উদ্ধিগ্ন ছিলাম না, প্রশাসন ক্যাডারের কোন সদস্যই সরকারি দায়িত্ব পালনে নিজেকে নিয়ে চিন্তা করেনা এবং কখনো পিছপা হয়না৷ ওয়ার্ক স্টেশন চকরিয়া আমার কাছে সেকেন্ড হোম৷ আমার নিজ জেলায় নিজ বাড়িতে কালেভদ্রে হয়তোবা বছরে ১৫-১৬ দিন থাকা হয়৷

এসিল্যান্ডের কাজই হল মাঠে ঘাটে এবং স্বভাবতই সেসকল স্থানে প্রচুর ধুলোবালির মধ্যে কাজ করতে হয়েছিল ফলে বেশকিছু দিন ধরেই অল্প বিস্তর সর্দিজনিত সমস্যায় ভুগছিলাম তাই টেস্টে পজিটিভ আসবে তা কখনো আশঙ্কা করিনি৷ প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ের আর সকল কর্মকর্তার মতই মান্যবর জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নেতৃত্বে ইউএনও স্যারের নির্দেশনায় করোনা সংক্রমন প্রতিরোধে সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে, সোশ্যাল ডিসটেন্সিং বজায় রাখতে, কোয়ারেন্টিন ও লকডাউন নিশ্চিত করতে, দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে নিয়মিত বাজার মনিটরিং ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছিলাম এবং সেনাবাহিনীর সাথে টহল দিচ্ছিলাম৷ করোনা কালীন এ সময় ২৫ মার্চ ২০২০ হতে ২৯ এপ্রিল ২০২০ পর্যন্ত মোট ৩০টি মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করা হয় যাতে ১৯৩ টি মামলায় আইন অমান্যকারীদের বিভিন্ন অংকের অর্থদন্ড দেওয়া হয়৷

শ্বাসকষ্ট বেশি হওয়ায় শ্রদ্ধেয় সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ স্যার, শ্রদ্ধেয় চট্টগ্রাম বিভাগের কমিশনার স্যার, আমার কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক স্যার, জেলা প্রশাসক চট্টগ্রাম স্যার, ইউএনও স্যার আমাকে চট্টগ্রাম জেনারেল হসপিটালে এডমিট করে৷ এখানে দুই দিন আমাকে আইসিও তে রাখা হয়৷ বর্তমানে হাসপাতালেই আছি৷ আশা করি খুব অল্প সময়েই নতুন উদ্যমে আপনাদের মাঝে ফিরতে পারব৷

করোনার এ সময়ে চকরিয়াবাসী যেভাবে আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন, মনোবল যুগিয়েছেন, আমার শারীরিক অবস্থার খোঁজ খবর নিয়েছেন তাতে আমি সকলের প্রতি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ৷

মাননীয় সংসদ সদস্য মহোদয়, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র থেকে শুরু করে প্রায় সকল জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক সংগঠনের ব্যক্তিবর্গ, অফিসারবৃন্দ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ, শিক্ষকবৃন্দ, সুশীল সমাজ ও জনসাধারণ যে ভালবাসা দেখিয়েছেন তার জন্য আমি ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি৷

আসুন আমরা সকলেই সচেতন হই৷ এই মহামারি রোধে সচেতনতার কোন বিকল্প নেই৷ সচেতন হতে হবে আমাদের নিজেদের স্বার্থে, পরিবারের স্বার্থে৷ ঘরে থাকি, বাইরে যতদূর সম্ভব কম বের হই৷ বেঁচে থাকলে বাজার, শপিং করার সুযোগ জীবনে হয়তোবা অনেক পাওয়া যাবে৷

“STAY HOME, STAY SAFE”

তানভীর হোসেন
সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট
চকরিয়া,কক্সবাজার।”