শাহেদ মিজান, সিবিএন:

সারা দেশেও করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। কক্সবাজারেও কমছে না। ইতিমধ্যে কক্সবাজারে আক্রান্তের সংখ্যা অর্ধশত পেরিয়ে গেছে। খোদ গত ৫ মে একদিনে ১১জন আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয়। লকডাউন শিথিল হওয়ায় এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও কক্সবাজার জেলাজুড়ে জনসমাগম বেড়ে গেছে। গ্রামাঞ্চলে আগে বাড়লেও জেলার প্রাণকেন্দ্র কক্সবাজার শহরে কয়েকদিন ধরে অধিকহারে জনসমাগম বেড়েছে। রমজান হলেও সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুরো শহরে বেশ জনসমাগম হচ্ছে।

সচেতন লোকজন বলছেন, কক্সবাজারে এখনো করোনা সুরক্ষা হয়নি। এর মধ্যে লকডাউন শিথিল হয়ে যাওয়ায় মানুষজন ঘর থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। এতে শহর ও উপজেলার জংশনগুলোতে জনসমাগম বেশ বেড়েছে দেখা যাচ্ছে। এসব লোকজনের মধ্যে অনেকেই প্রয়োজন না থাকলেও বের হচ্ছে। আবার অনেকে একবারে সারতে পারা কাজের জন্য কয়েকবার করে বের হচ্ছে। বের হলেও কেউ সামাজিক দূরত্ব মানছে না। করোনা ভয়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অনেক ক্ষেত্রে ভিড় করছে। এতে অনাগত দিনগুলোতে করোনা নিয়ে আরো বেশ আশঙ্কার অশনি সংকেত দেখা যাচ্ছে।

চিত্র মতে, কক্সবাজার শহরে গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে লকডাউন শিথিল হয়ে রয়েছে। এতে লোকজন ‘হুড়মুড়’ করে বাইরে বের হয়ে গেছে। প্রতিদিন শহরের সর্বত্র লোক সমাগম হচ্ছে বেশি। বরং দিন দিন তা বাড়ছে। লোকজন বের হওয়ায় অভ্যন্তরীণ পরিবহণ- টমটম-সিএনজি অটোরিক্সা ও মোটরসাইকেলের চলাচল অনেকে বেড়েছে। এতে এমন দুর্যোগ মুহূর্তেও শহরের প্রধান সড়কে যানজট লাগছে। জনসাধারণকে নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী ও পুলিশ কাজ করলেও লকডাউন শিথিলের কারণে তারা আগের মতো কড়াকড়ি করছেন না। শহরের প্রবেশমুখ লিংকরোড়ে স্টেশনে ব্যারিকেডটিও শিথিল হয়ে পড়ায় বাইরের যাত্রীবাহী যানবাহন অনায়সে ঢুকে পড়ছে।

অন্যদিকে লকডাউন শিথিলকে পুঁজি করে সরকারি ঘোষনার আগেই কক্সবাজার শহরের প্রাণকেন্দ্র বাজারঘাটায় ইতোমধ্যে অনেক দোকানপাট খোলা হয়েছে। কাপড়ের কয়েকটি দোকানসহ অপ্রয়োজনীয় অনেক দোকানসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে বসেছে। বাজারঘাটার গলিগুলো সারাদিন মানুষের পদভাবে টইটম্বুর হয়ে থাকছে। সেখানে কেউ সামাজিক দূরত্ব মানছে না।
সূত্র মতে, গত ৬ মে সব দোকানপাট খোলার জন্য প্রধানমন্ত্রী যে ঘোষণা দিয়েছিলো তার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই করোনার হটস্পট সাতকানিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার অনেক ব্যবসায়ী ও তাদের কর্মচারী কক্সবাজার ঢুকে পড়েছে। এদের নিয়ে ইতোমধ্যে শহরের ওই ব্যবসায়িক জোনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লকডাউন শিথিলের দোহাই দিয়ে জেলার সব উপজেলাতেও ঘর থেকে হয়ে গেছে মানুষ। প্রয়োজন না থাকলেও উপজেলা পর্যায়ে মানুষ অহেতুক বাজার ও রাস্তাঘাটে ঘোরাঘুরি করছে। সেখানেও পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীর কড়াকড়ি আগের মতো নেই। এমনিতে লকডাউনের কঠোর কড়াকড়ির সময়েও গ্রামাঞ্চলের মানুষ বাজারে-ঘাটে ঘোরাঘুরি করেছিলো।

কক্সবাজারের সচেতন লোকজন বলছেন, লকডাউন শিথিল হলেও কক্সবাজার শহরের মতো সংকীর্ণ শহরকে অবাধে ছেড়ে দিলে এখানে করোনার বুমেরাং হতে পারে। তাই বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে নিয়ে যথাযথ ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্য জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানিয়েছেন সচেতন মহল।

এ ব্যাপারে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন বলেন, ‘লকডাউন শিথিল মানে অবাধ চলাফেরা নয়। এই অবস্থাতেও করোনা সব রকমের বিধি-নিষেধ কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া কোনোভাবে বাড়ি থেকে বের হওয়া যাবে না। নিজের সুরক্ষা নিজেকেই বজায় রাখতে হবে।’