মুহাম্মাদ শিমুল হাসান

 

হঠাৎ করেই একদিন সকলে ঘুম থেকে উঠে পত্রিকার প্রথম পাতায় দেখলেন খুব বড় বড় অক্ষরের একটা কাঙ্ক্ষিত শিরোনাম , ” অমুক দেশের ভ্যাক্সিনটার কার্যকারিতা তুঙ্গে, প্রথম সপ্তাহেই সুস্থ লক্ষ লক্ষ মানুষ ” বা ” ঝিমিয়ে গিয়েছে আক্রান্ত আর মৃত্যুর হার, সময় এখন স্বাভাবিকরার।” ঠিক সেই সকাল থেকেই আপনার মনে আবারো নতুন একটা প্রাণের বীজ জন্ম নিলো আর অনেকগুলো নতুন স্বপ্ন আপনি সাজাতে থাকলেন আপনার প্রাণোচ্ছল এই নতুন পৃথিবীর বুকে।

হ্যাঁ, বাস্তবিকই আমরা পেতে চলেছি এক নতুন পৃথিবী যেখানে মানুষ প্রকৃতির সাথে রূঢ় আচরণ করতে ভীত বোধ করবে। পুঁজিবাদ মানুষ গুলাও আমেরিকা, চায়না, রাশিয়া, ভারতসহ ইউরোপের অন্যান্য যে দেশের প্রকৃতির উপর আগ্রাসন চালিয়ে করছে তাদের থলি ভারি, তারাও তখন চিন্তা করবে প্রকৃতির এই প্রতিশোধ, তারাও তখন আতঙ্কিত হবে নতুন কোন অনাকাঙ্ক্ষিতের। মিথেন, নাইট্রোজেন, কার্বন, কার্বোহাইড্রেট দিয়ে তারা গ্রীন হাউজকে উত্তপ্ত করতে একটি বার হলেও ভাবতে বাধ্য থাকবে। কলকারখানা, যানবাহন, শিল্প বাণিজ্যের অপরিশোধিত রাসায়নিক পদার্থের বিরুদ্ধে তখন বিশ্বের তথাকথিত সংগঠন গুলো মাথাচারা দিয়ে বসবে। নদ-নদী, হাওর-বাওর, সাগরের পানি গুলাতে অত্যাচার করে অপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির আনাগোনা কমে যেতে পারে। পরিশোধিত করে নতুনভাবে ব্যবহার করার জন্য উদ্যোগ আসবে হাজারো। বড় বড় নামকরা প্রতিষ্ঠানগুলার সেফটি অব এনভাইরনমেন্টাল এর খরচ বেড়ে যেতে পারে অনায়াসেই। নতুন কোন অনাকাঙ্ক্ষিত অনুজীবীর আক্রমণ ঠেকাতেও তখন ব্যবস্থা নেওয়া হবে শত শত। নতুন হাসপাতাল, নতুন মেডিসিন প্রযুক্তি, নতুন গবেষণা ক্ষেত্রে আসতে পারে বিরাট পরিবর্তন।
সরকার ব্যবস্থা? সেখানে তখন পরিবর্তন আবশ্যক হয়ে দাঁড়াবে, অযোগ্য- অদক্ষতা নিয়ে তখন স্বাস্থ্য খাত, অর্থ খাতে কেউ আসার সুযোগ নাও পেতে পারে। পাগলের মত করে মিডিয়ার সামনে নিজের দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া মানুষগুলোকে হয়তো তাদের জায়গায় নাও রাখা হতে পারে। আয়ারল্যান্ডের প্রেসিডেন্টের ডাক্তারি পেশায় ফেরা বা কানাডার জাস্টিন ট্রুডোর বা নিউজিল্যান্ডের জাসিন্ডা আরডার্ন এর দক্ষতা , কেরালার মুখ্যমন্ত্ররীর এর মহমারীর বিপক্ষের অবস্থান অথবা ভিয়েতনাম বা ভূটানের প্রধানের সফলতা যেমন সারাবিশ্বে সারা ফেলেছে তেমনই সারা বিশ্বে নতুন আগত সরকার প্রধানরাও হয়তো হবে এমন কর্মঠ ও দেশপ্রেমিক এবং তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন । সকলে না হলেও অনেক গুলো দেশেই তখন মন্ত্রীসভা, রাষ্ট্রনায়ক নিজেদের দায়িত্বের জায়গায় হবে দক্ষ বলেই আশা করা যায়। যেকোন পরিস্থিতিতে দ্রূত যেকোন সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন এমন যোগ্যতাসমান মানুষ হয়তো পৃথিবীর দেশগুলোতে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য বেশি গ্রহণযোগ্যতা পাবে । আর একইসাথে একদেশের অন্যদেশের উপর নির্ভরশীলতা হার কমে যাবে বলে আশা করাই যেতে পারে।
আর জনগণ? জনগণের তো আমুল পরিবর্তন আশা করা যায়। সকল জনগণের কথা বলছি না তবে বেশিরভাগ জনগণ নতুন পৃথিবীতে হবে অনেক অনেক বেশি সচেতন। সকালে ব্রাশ করার পূর্বে তারা নিজেদের হাতের জীবাণু আগে মুক্ত করবে। খাওয়া-দাওয়া করার পূর্বে বা টয়লেট ব্যবহার করার পর হ্যান্ড ওয়াশ বা সাবান ব্যবহার করার কথা হয়তো তাদের মনে করিয়ে দিতে হবে না। জামা কাপড় পরিধানের পূর্বে সেগুলা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কিনা সে বিষয়ে তারা হবে আরো বেশি আগ্রহী। বাসা থেকে বের হয়ে দরজাতে বা লিফটে হাত দেওয়ার সময়ো তারা হবে সচেতন। কারো সাথে মোলাকাত করা বা কর্ম মর্দন করতে গেলেও তারা সজাগ থাকিবেন। বাসে, রিক্সায়, ট্রামে বা প্রাইভেট কারে যার মাধ্যমেই তারা যাতায়াত করুক না কেনো, তারা নিজেদের সীট বা হাতলের দিকে হবেন সতর্ক আর সেক্ষেত্রে টিস্যু ব্যবহার করানোর কথা তাদের বলার দরকার হবে না। বাতাসের ধোয়া বা ময়লা বা জীবাণু যাতে নাকে মুখে না যায় তার জন্য তাদের মাস্কের কথা বলার কোন প্রয়োজন আগামী কতগুলো বছরেও হয়তো হবে না বরং রুম থেকেই তারা সেটা পরিধান করে নিবেন। তারপর অফিসের কলিগ, ক্লাসের বন্ধু বান্ধব বা বাইরের সহযোগী দের সাথে মেলামেশাতে উভয় পক্ষই থাকবে প্রচন্ড সজাগ। নির্দিষ্ট সময় পর হাত মুখ পরিষ্কার করার জন্য হয়তো মোবাইলে এলার্ম সেট করেও রাখতে পারে সেটাতে আমি অবাক হবো না কোনভাবেই। রুম পরিষ্কার করা, কাপড় চোপড় ধৌত করা সহ নানান কাজে তখন ভালো মানের জীবাণুনাশকের ব্যবহার মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যেতে পারে। রান্না করা পূর্বে থালা বাসন, খাদ্যদ্রব্যগুলো অপরিচ্ছন্ন থাকাটা তখন হয়ে যেতে পারে দুষ্কর। আর সব থেকে বড় পরিবর্তন দেখা যাবে জনগণের ভবিষ্যত চিন্তাভাবনাতে। এবারের এই দূর্বল অর্থনীতি এবং ব্যক্তিগত অভাবের কথা স্মরণ করে তারা তাদের খরচের মাত্রা কমিয়ে জমানোর দিকে বেশি ধাবিত হতে পারে। পরবর্তীতে এমন পরিস্থিতি যাতে না দেখতে হয় তার জন্য তারা আগ্রহ করে অর্থ জমিয়ে রাখবে নিজেদের পরিবারের স্বাচ্ছন্দ্য জীবনযাপনের জন্য। একইসাথে সরকার নির্বাচন করার দিক থেকেও তারা হবে অত্যন্ত বিচক্ষণ। ভবিষ্যতে কোন সরকারপ্রধান এলে তাদের সকল খাতে সমানভাবে উন্নতি হতে পারে, এমন সরকার প্রধানকেই তারা বেছে নেবে অনায়াসে। তারা তাদের বাকস্বাধীনতাকে ব্যবহার করে কথা বলতে শিখবে দূর্নীতির বিপক্ষে। যখনই দেখবে যে কোন খাত হুমকির মুখে পরেছে জনগন তার জন্য কথা বলতে বা ব্যবস্থা নিতে হয়তো কালক্ষেপণ করবে না।

পরিশেষে উন্নত বিশ্ব হয়তো এই পরিবর্তনগুলার সাথে সহজে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে এবং পরবর্তী হুমকির জন্য প্রস্তুত থাকতে পারবে। কিন্তু ৩য় বিশ্বের উন্নয়নশীল বা অনুন্নত দেশগুলো হয়তো সম্পূর্ণভাবে পরিবর্তনে সামিল হতে পারবে না। তবুও আশা করা যায় যে এসকল দেশ, দেশের মানুষ বা সরকার ব্যবস্থাতে একটা উপযুক্ত পরিবর্তন আনতে এমন একটা অভিশাপই যথেষ্ট হবে। যারা সচেতন, তারা উন্নত হোক বা অনুন্নত, বিশ্বাস রাখা যায় যে তারা দেশকে ভালোবেসে বা বিশ্বকে ভালোবেসে অবশ্যই নতুন বিশ্বকে নতুন ভাবেই সাজাবে।

শিক্ষার্থী, অ্যাকাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।