বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম:
দেশে করোনা সংক্রমণের উর্ধ্বগতির মধ্যেই দোকানপাট-শপিং মল খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছে সরকার। বলা হয়েছে, আগামী ১০ মে থেকে শর্ত সাপেক্ষে দোকানপাট ও শপিংমল বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে।

কিন্তু এ মুহূর্তে সরকারের এমন সিদ্ধান্ত করোনা বিপর্যয় বাড়িয়ে দেবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তেমনি সাধারণ মানুষও এ সিদ্ধান্তের সমালোচনায় মুখর।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শপিং মল দোকানপাট খোলার বিরোধিতা করে নানা যুক্তি তুলে ধরা হচ্ছে। সচেতন মানুষরা বলছেন, শপিং মলগুলো খুললেই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক মঙ্গলবার (৫ মে) ঢাকায় ‘করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত’ টেকনিক্যাল কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ও শপিং মলগুলো খুলে দিলে দেশে করোনার সংক্রমণ আরও বাড়বে।

সরকারের এ সিদ্ধান্তের পর স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অনেকেই নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। কারণ দেশে করোনা সংক্রমণের কাছাকাছি সময়ে যেসব দেশে সংক্রমণ ঘটছে সেসব দেশে এখনো মার্কেট, শপিং মল ঢালাওভাবে খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়নি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, যেখানে করোনা সংক্রমণ রোধে গণপরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে, সেখানে কোন যুক্তিতে শপিং মলগুলো খুলে দেওয়া হচ্ছে? গণপরিবহন যদি বন্ধ থাকে তাহলে দোকানি, দোকানকর্মী বা ক্রেতারাই বাজারে বা শপিংমলে যাবেন কিভাবে? শপিং মলগুলো খোলার মধ্য দিয়ে লোকজনকে কার্যত ঘর থেকে বেরিয়ে কেনাকাটা করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। আর এতে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বাড়বে।

ফেসবুকে বেশ কয়জন লিখেছেন, মার্কেট, শপিং মল খুললেই কি ক্রেতারা যাবে? এতদিন ঘরে অবস্থান করে সচেতনতা অবলম্বনের পর হঠাৎ ক্রেতারা কেন নিজেদের ঝুঁকিতে ফেলবে?

মার্কেট ও শপিং মলের কেউ করোনা সংক্রমিত হলে কী হবে তা নিয়েও সচেতন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। যেহেতু এখনো প্রত্যাশিত সংখ্যায় করোনা পরীক্ষা শুরু হয়নি এবং উপসর্গ ছাড়াই অনেকের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ছে, সেক্ষেত্রে ক্রেতারাও করোনা ভাইরাস বহন করছে না তা নিশ্চিত করা কঠিন হবে। এক্ষেত্রে সত্যিই কেউ করোনা সংক্রমিত থাকলে এবং তা ধরা পড়লে পুরো মার্কেট বা শপিংমল লকডাউনসহ ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন করতে হতে পারে। তবে মার্কেট ও শপিংমলগুলোতে যেহেতু কারা আসছে তা লিপিবদ্ধ থাকে না ফলে কারা করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছিলো তা শনাক্ত করাও দুঃসাধ্য হতে পারে। ফলে সংক্রমণ বিস্তারের ঝুঁকি আরও বাড়বে।

মার্কেট ও শপিংমলে কেনাকাটার যে প্রক্রিয়া তাতেও করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়বে। কারণ কাপড়, কসমেটিকস, জুতা এগুলো ক্রেতারা অনেকে স্পর্শ করবে এবং সেগুলো প্রতিনিয়ত জীবণুমুক্ত করা সম্ভব নয়।

ঈদের আগে মার্কেট ও শপিং মলগুলোতে যে ভিড় হয় তাকেই করোনা সংক্রমণের উপযুক্ত স্থান বলে মনে করছেন অনেকে। এছাড়া মার্কেট, শপিং মলগুলোতে হাঁটার জায়গা পর্যন্ত থাকে না। এসব কারণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা এ সময়ে মার্কেট ও শপিংমলগুলো খোলার তীব্র বিরোধিতা করেছেন।

অনেকে প্রশ্ন করেছেন, সন্তানের জন্য ঈদের খুশিতে জামা-কাপড় কিনতে যাবেন নাকি করোনায় সংক্রমিত বা মৃত্যু আনতে যাবেন?

গত এক মাসের বেশি সময় ধরে দেশে অনেকে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। অনেকের জীবিকাও হুমকিতে পড়েছে। জমানো টাকা খরচ করে অনেকে জীবনযাপন করছেন। এই পরিস্থিতিতে মার্কেট ও শপিংমলে ঈদের কেনাকাটায় নিম্ন-মধ্যবিত্তের কষ্ট আরও বাড়াবে এবং উচ্চবিত্তের সঙ্গে তাদের পার্থক্য আরও দৃশ্যমান করবে।