মাহমুদ আহমদ

ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট

আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের বিশেষ কৃপায় পবিত্র মাহে রমজানের দিনগুলো অতিবাহিত করার সৌভাগ্য পাচ্ছি, আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ পাকের কাছে এই প্রার্থনাই থাকবে, মুসলিম উম্মাহ যেন সুস্থতার সাথে পবিত্র এই দিনগুলো অনেক বেশি ইবাদত আর পুণ্যকর্মের মাধ্যমে অতিবাহিত করতে পারে।

আমরা জানি, ইসলামের সকল কর্মের ভিত্তি নিয়তের ওপর রাখা হয়েছে। নিয়ত অনুযায়ী প্রত্যেককে তার কর্মফল প্রদান করা হয়। যেহেতু আল্লাহ তাআলা প্রত্যেকের অন্তরের খবর জানেন তাই কে কোন নিয়তে পুণ্যকর্ম করেন তাকে তার নিয়ত অনুযায়ী পুরস্কার দেয়া হয়। মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-আল আমালু বিননিয়াত অর্থাৎ- মানুষের কর্মের ফল নিয়ত এবং ইচ্ছার ওপর হয়ে থাকে।

এজন্য কোনো ইবাদত-বন্দেগি শুরু করার আগেও ইসলামে সঠিক-নিয়ত ও নেক ইচ্ছার শর্ত রয়েছে। যখন কোনো মুসলমান কোনো বিশেষ-ইবাদতের নিয়ত করে আর তা আদায় করে, তখন তার সেই ইবাদত প্রকৃত অর্থে আদায় হবে। রোজা সর্ম্পকেও বলা হয়েছে যে, এরজন্য নিয়ত করা জরুরি। সবচেয়ে উত্তম হলো, রোজার জন্য মানুষ রাতে ঘুমানোর সময় ইচ্ছা ও নিয়ত করে ঘুমানো। এ বিষয়ে হাদিসে এসেছে-
হজরত হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, হজরত নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে-ব্যক্তি ফজরের পূর্বে রোজা রাখার নিয়ত না করে, তার রোজা রাখা পূর্ণ হয় না।’ (তিরমিজি)

রোজার নিয়তের জন্য কোনো অর্থ বোধক বাক্য পাঠ করা জরুরি নয়। নিয়ত সেই ইচ্ছারই নাম, যার জন্য সে কোনো খাদ্য ও পানীয় ছেড়ে দিচ্ছে। রোজার নিয়তের জন্য আলাদা কোনো দোয়া হাদিস থেকে পাওয়া যায় না।

তবে একটি বাক্য প্রচলিত আছে, যা পাঠ করাতে কোনো অসুবিধা নেই, তা আমরা নিয়ত হিসেবে পাঠ করতে পারি যেমন-
‘ওয়া বি সাওমে গাদিন নাওয়াইতু মিন শাহরি রামজানা’
অর্থাৎ ‘কাল সকালে রমজান মাসের রোজা রাখার নিয়ত করছি।’

যদি নিজ ভাষায় বা শব্দেও নিয়ত করে, তবে কোনো অসুবিধা নেই। ইমাম মালেক, ইমাম শাফেঈ ও ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহিম-এর মতে রমজানের রোজার নিয়ত রাতে করা জরুরি। কিন্তু ইমাম আবু হানিফা, সুফিয়ান সাওরি, ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মোহাম্মদ রাহমাতুল্লাহি আলাইহিম-এর মতে রমজান মাসে রাতে রোজার নিয়ত জরুরি নয়।

কেননা, রোজার নিয়ত করার উদ্দেশ্য এই যে, যেন নির্ধারণ করা যায়, কোন রোজা, নফল না ফরজ। আর রমজানের রোজা রাখার হুকুম দিয়ে আল্লাহ তাআলা তা নির্ধারণ করে দিয়েছেন, এই জন্য রাতে তার নিয়ত করা জরুরি নয়।

ইমাম শাফেঈ ও ইমাম আবু হানিফা মতে যদি অর্ধ-দিবসের আগ পর্যন্ত রমজানের রোজার নিয়ত করা হয়, তাহলেও হবে। আর ইমাম মালেক, ইমাম আহমদ বিন হাম্বল ও ইসহাক বলেন, যদি রমজানের প্রথম রাতে পুরো রমজান মাসের জন্য নিয়ত করা হয়, তবে যথেষ্ট। কেননা, সব রোজার নিয়ত আর একটি রোজার নিয়ত একই কথা।

আমাদের উচিৎ হবে রমজানের রোজা রাখার আগে নিয়ত করে নেয়া। আল্লাহ তাআলার কাছে এই প্রার্থনা করা যে, হে আল্লাহ! আগামীকাল তোমার সন্তুষ্টির জন্য আমি রোজা রাখবো, তুমি আমাকে সুস্থতার সঙ্গে রোজা রাখার তাওফিক দান কর।

আমরা যদি পরিশুদ্ধ অন্তরে রোজার নিয়ত করে রোজা রাখি তাহলে আল্লাহ তাআলা আমাদের রোজা গ্রহণ করবেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সুস্থতার সঙ্গে রমজানের দিনগুলো বিশেষ ইবাদত-বন্দেগিতে কাটানোর এবং রোজার যে মর্ম তা উপলব্ধি করার সৌভাগ্য দান করুন। আমিন।